ফাইল চিত্র।
কোনও কোনও বাসের ‘ফিটনেস’ সার্টিফিকেটের (সিএফ) মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছে বছরখানেক বা তারও বেশি দিন আগে। কোনও বাসের মালিক আবার লকডাউনের পর থেকে এ সব নিয়ে মাথাই ঘামাননি। তাই শহরের রাস্তায় কার্যত এ ভাবেই ঝুঁকি নিয়ে ছুটছে গণপরিবহণের একটি বড় অংশ।
রবিবার ডোরিনা ক্রসিংয়ে মিনিবাস দুর্ঘটনার পরেই কড়া বার্তা দিয়েছিলেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। রাস্তায় বেরোনো ‘আনফিট’ বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। পুলিশকেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন মন্ত্রী। তার পরেই
সোমবার থেকে এ বিষয়ে কড়াকড়ি শুরু করেছে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে বাস দাঁড় করিয়ে মঙ্গলবারেও ‘ফিটনেস সার্টিফিকেট’-সহ যাবতীয় কাগজপত্র খতিয়ে দেখা হয়। যে সব ক্ষেত্রে গরমিল ধরা পড়েছে, সে সব ক্ষেত্রে পুলিশ সতর্ক করেছে বাসকর্মীদের। এ দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ৪৫টি বাস-মিনিবাসের বিরুদ্ধে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বাসমালিকদের সংগঠনগুলির একাংশের অবশ্য অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে ভাড়া না বাড়ায় লোকসানে চলছে অধিকাংশ বাস-মিনিবাস। রক্ষণাবেক্ষণ তো দূর, রাস্তায় বাস নামিয়ে জ্বালানির দাম বা কর্মীদের বেতনের টাকাটাও উঠছে না। মালিকদের মুনাফার তো প্রশ্নই নেই। উল্টে জমানো টাকা যা ছিল, বেরিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে রক্ষণাবেক্ষণের পিছনে খরচ করা তাঁদের পক্ষে কার্যত অসম্ভব। তাই সিএফ ছাড়াই বাস নামাতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। বর্তমানে ‘সিএফ’ নবীকরণে উৎসাহ দিতে জরিমানায় ছাড়ের দাবিও তুলেছে কয়েকটি বাসমালিক সংগঠন। তবে তাদের অভিযোগ, এ বিষয়ে সরকারকে বার বার বলেও কাজ হয়নি।
সূত্রের খবর, নতুন বাস-মিনিবাস বা গাড়ির ক্ষেত্রে প্রথম আট বছর পর্যন্ত দু’বছরে এক বার করে সিএফ নেওয়া বাধ্যতামূলক। তবে বয়স আট পেরিয়ে গেলে প্রতি বছরই তা নিতে হয়। সংশ্লিষ্ট আরটিও থেকে মেলে এই সার্টিফিকেট। বাস-মিনিবাসের ক্ষেত্রে ৮৪০ টাকা লাগে। ছোট গাড়ির জন্য খরচ ৬৪০ টাকা।
আরটিও সূত্রের খবর, ওই শংসাপত্র দেওয়ার আগে প্রতিটি গাড়ির ইঞ্জিন থেকে কাঠামো, সব কিছুই খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হয়। দেখা হয় গাড়ির ক্লাচ, ব্রেক, টায়ার থেকে খুঁটিনাটি সব কিছুই। এমনকি, গাড়ির কাগজপত্রও খুঁটিয়ে পরীক্ষা করা হয়। সেখানে ‘পাশ’ করলে তবেই মেলে সুস্থতার শংসাপত্র।
যদিও বাসমালিকদের একাংশের বক্তব্য, বাস থেকে আয়ই যদি না হয়, তা হলে সেটির রক্ষণাবেক্ষণ হবে কী করে? এক বাসমালিকের কথায়, ‘‘এটা তো আমাদের ব্যবসা। যদি বাস চালিয়ে লাভই না হয়, তা হলে রক্ষণাবেক্ষণে তো খামতি থাকবেই। ঘরের টাকায় তো দিনের পর দিন চলতে পারে না।’’ ‘সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিস’-এর সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বললেন, ‘‘ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে না। মালিকদের হাতে যদি পয়সাই না থাকে, তা হলে রক্ষণাবেক্ষণ হবে কী করে! সরকারের উচিত বাসমালিকদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়ানো।’’ ‘অল বেঙ্গল বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘রাস্তায় বাস নামিয়ে দিনের পর দিন বোঝা বাড়ছে। এই বোঝা নিয়ে কত দিন মালিকেরা পরিষেবা দেবেন? সরকার যাত্রীদের পাশাপাশি মালিকদের কথা না ভাবলে পরিবহণ শিল্পটাই ধ্বংস হয়ে যাবে।’’
বাসভাড়া বৃদ্ধির এই দাবি প্রসঙ্গে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বললেন, ‘‘সমস্যা সমাধানে আমরা ইতিমধ্যেই একাধিক বার বাসমালিকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। শহরের প্রতিটি বাস সিএনজি-চালিত করা যায় কি না, সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। বিদ্যুতিক বাসের উপরেও আমরা জোর দিচ্ছি।’’