একটি অভিযোগ পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার। অন্য অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করেননি। এই দুই অভিযোগ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করলেন মানসিক রোগাক্রান্ত এক যুবকের দাদা। শুক্রবার হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর আদালতে মামলা করেছেন সমীর নস্কর নামে ওই ব্যক্তি।
সমীরবাবুর আইনজীবী ইন্দ্রজিৎ রায়চৌধুরী জানান, তাঁর মক্কেল সোনারপুরের নাটাগাছির বাসিন্দা। মামলার আবেদনে তিনি বলেছেন, তাঁর ভাইয়ের বয়স ৩৪। ছোট থেকেই তাঁর মানসিক সমস্যা রয়েছে। গত কয়েক বছরে তিনি এতই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন যে রীতিমতো হিংস্র আচরণ করছেন। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা, দাদাকে বেধড়ক মারধর করছেন। তাঁর হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না প্রতিবেশীরাও। এমনকি, দিন কয়েক আগে তিনি আচমকা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে রাস্তার লোকজনকেও মারধর করতে শুরু করেন। সে সময়ে স্থানীয় বাসিন্দারাই সমীরবাবুকে পরামর্শ দেন, কোনও সরকারি মানসিক হাসপাতালে ভাইকে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করাতে।
মামলার আবেদনে সমীরবাবু জানিয়েছেন, তিনি সরকারি একটি হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, রোগীকে নিয়ে আসতে হবে। তবেই হবে চিকিৎসা। কিন্তু এখন তাঁর ভাইয়ের যা শারীরিক অবস্থা, তাঁকে নাটাগাছি থেকে কলকাতার ওই হাসপাতালে একা নিয়ে আসার সাহস পাচ্ছেন না সমীরবাবু।
ওই ব্যক্তির আইনজীবী জানিয়েছেন, সমীরবাবুর বাবা প্রতুলবাবু আগে তাঁর ছোট ছেলেকে বেসরকারি কয়েকটি সংস্থায় একাধিক বার রেখে চিকিৎসা করিয়েছিলেন। কিন্তু ওই সব সংস্থায় বা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার যা খরচ, আর্থিক অনটনের কারণে তা বহন করার সামর্থ্য এই মুহূর্তে তাঁদের নেই।
সমীরবাবু জানান, তিনি সোনারপুর থানায় গিয়ে ঘটনা জানিয়ে পুলিশকে আবেদন করেছিলেন, তাঁর ভাইকে যেন সংশ্লিষ্ট সরকারি হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ, পুলিশ কোনও সহায়তা তো করেইনি, উল্টে একটি জেনারেল ডায়েরি করে ছেড়ে দেয়। এ-ও জানিয়ে দেয়, মানসিক রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া তাদের কাজ নয়। যদিও আইনজীবীর দাবি, মানসিক রোগীদের জন্য গত বছর একটি আইন পাশ হয়েছে। তাতে বলা আছে, এমন রোগীদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে পুলিশই।
এই মামলায় যুক্ত করা হয়েছে সরকারি ওই হাসপাতালের সুপার, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, সোনারপুর থানার ওসি ও বারুইপুরের পুলিশ সুপারকে। আগামী বৃহস্পতিবার বিচারপতি চক্রবর্তীর আদালতে মামলাটির শুনানি হওয়ার কথা।