প্রতীকী চিত্র
এক মহিলা ও তাঁর ন’মাসের শিশুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়াল সল্টলেকের ই-ই ব্লকের সৌরভ আবাসনে। বুধবার রাতের ওই ঘটনায় মৃত মহিলার নাম পৌলমী রাউত (৩৫)। তাঁর কোমরে মৃত অবস্থায় বাঁধা ছিল তাঁর ন’মাসের ছেলে।
পুলিশ জানায়, ওই আবাসনের একতলার ফ্ল্যাটে স্ত্রী পৌলমী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ভা়ড়া থাকেন এক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী অনুপকুমার রাউত। কিছু দিন ধরে ওই ফ্ল্যাটে অনুপের বাবা ও মা এসে রয়েছেন।
এ দিন ওই ফ্ল্যাটের একটি ঘরে ছিলেন অনুপের বাবা ও মা। সেই ঘরে ছিল অনুপের ন’বছরের ছেলে। পাশের ঘরেই ছিলেন পৌলমী ও তাঁদের ন’মাসের সন্তান। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে বন্ধই ছিল সেই ঘরের দরজা। ধাক্কা দিয়েও সাড়া মেলেনি পৌলমীর। শিশুটির গলাও শুনতে পাওয়া যায়নি। সন্দেহ হওয়ায় অনুপকে ফোন করেন তাঁর বাবা।
ঘরে এসে দরজায় বারবার ধাক্কা দিয়েও পৌলমীর সাড়া মিলছিল না। শেষে দরজা ভাঙা হয়। দেখা যায়, মেঝেতে পড়ে আছেন পৌলমী। গলায় সিন্থেটিক জাতীয় কাপড়ের ফাঁস। পৌলমীর কোমরে বাঁধা ছিল শিশুসন্তানের দেহ।
খবর যায় পুলিশে। চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে ই-ই ব্লকে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ভিড় বাড়তে থাকে। পুলিশও দফায় দফায় পরিবারের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। রাতে পৌলমীর বাবা-মা আসেন। মৌখিক ভাবে তাঁরা মেয়ের এই পরিণতির পিছনে ‘মানসিক অত্যাচার’কে দায়ী করেন।
মৃতের পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।ছবি: সৌভিক দে।
পুলিশের অনুমান, গলায় সিন্থেটিক জাতীয় কাপড় দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলে পড়ায় মৃত্যু হয়েছে ওই মহিলার। তবে পরিবারের লোক পুলিশকে জানিয়েছে, দরজা ভাঙার পরে ঝুলন্ত অবস্থায় নয়, মেঝেতে পৌলমীর দেহ পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে, কোমরে বাঁধা ছিল শিশুটির দেহ।
শিশুটির মৃত্যু কী ভাবে হয়েছে, তা নিয়ে পুলিশ কিছু বলতে নারাজ। সূত্রের খবর, শিশুটির গলায় বাইরে থেকে কোনও আঘাতের চিহ্ন প্রাথমিক ভাবে মেলেনি। যদিও বেশ কিছু ক্ষেত্রে ধন্ধ দেখা দিয়েছে। ধোঁয়াশা কাটাতে অনুপের ন’বছরের ছেলের সঙ্গেও কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। পুলিশকে ওই শিশুটি জানিয়েছে, জানলা দিয়ে সে-ই প্রথম মায়ের ঝুলন্ত দেহটি দেখতে পায়। পাশাপাশি অনুপ ও তাঁর বাবা-মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ জানিয়েছে, ময়না-তদন্তের পরে দু’টি মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, শিশুটিকে নিয়ে ‘আত্মঘাতী’ হয়েছেন পৌলমী।
আরও পড়ুন: গাফিলতিতে কিশোরীর মৃত্যুর অভিযোগ, তাণ্ডব সিএমআরআই হাসপাতালে
তবে রাউত পরিবারের সঙ্গে পাড়ায় লোকজনের তেমন মেলামেশা ছিল না। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানান, ব্লকে অনেকেই ভাড়ায় থাকেন। তাঁদের অনেকের সঙ্গেই সে ভাবে যোগাযোগ গড়ে ওঠে না। ফলে কোনও পারিবারিক গোলমাল হলেও বাইরে থেকে টের পাওয়া যায় না।