মানসিক চাপের কথা বন্ধুদেরও বলতেন অন্তরা

সন্তান না হওয়া নিয়ে ‘গঞ্জনা’ বাগুইআটির অন্তরা আচার্যকে (৪০) ঠেলে দিয়েছিল মানসিক বিপর্যয়ের মুখে। পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছেন তাঁর বন্ধুরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

অন্তরা আচার্য

সন্তান না হওয়া নিয়ে ‘গঞ্জনা’ বাগুইআটির অন্তরা আচার্যকে (৪০) ঠেলে দিয়েছিল মানসিক বিপর্যয়ের মুখে। পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছেন তাঁর বন্ধুরা। ওই বন্ধুদের মধ্যে এক জনের সঙ্গে ঘটনার রাতে কথা হয়েছিল অন্তরার। পুলিশ সূত্রের খবর, মৃতার মানসিক পরিস্থিতির হদিস পেতেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে বাগুইআটির রঘুনাথপুরের আবাসনে যায় তদন্তকারীদের একটি দল। পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনাস্থল থেকে সুইসাইড নোট মিলেছে। পুলিশের দাবি, তাতে লেখা রয়েছে, ‘স্বামীর মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছি।’ খোঁজ চলছে অন্তরার শাশুড়ি ও ননদের।

Advertisement

গত বুধবার রাতে রঘুনাথপুরের আবাসনের একতলা থেকে উদ্ধার হয় অন্তরার ঝুলন্ত দেহ।

আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে তাঁর স্বামী সুরজিৎ সরকারকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার সাড়ে সাতটা থেকে রাত আটটা ২০ পর্যন্ত এক বন্ধুর সঙ্গে ফোনে অন্তরার কথা হয়েছিল।

Advertisement

আবাসনের নিরাপত্তারক্ষী ধর্ম থানদারের বয়ান অনুযায়ী, রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ঢোকেন সুরজিৎ। তাই যদি হয়, তা হলে মৃত্যুর এক ঘণ্টা আগে অন্তরার সঙ্গে ফোনে কী কথা হয়েছিল, তা জানতেই ওই বন্ধুকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন তদন্তকারীরা।

ওই যুবক মঙ্গলবার বলেন, ‘‘অন্তরা আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে ব্লক করে দিয়েছিল। কেন ব্লক করল, তা জানতে ফোন করেছিলাম। এর পরে খুব স্বাভাবিক কথা হয়। প্রতি মুহূর্তে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন ওঁকে যে ভাবে অবজ্ঞা করতেন, তা অন্তরার উপরে চাপ তৈরি করেছিল। সে সব নিয়েও কথা হয়। তবে অন্তরা আত্মহত্যা করতে পারে, তেমন কিছু মনে হয়নি।’’ পুলিশ জানিয়েছে, সুরজিৎ তাঁর দুই বন্ধুর সঙ্গে বিরাটিতে একটি অ্যানিমেশন সংস্থা খুলেছিলেন। ঘটনার রাতে অন্তরার সঙ্গে যে বন্ধুর কথা হয়েছিল, তিনি তাঁদের এক জন। ওই বন্ধু জানান, দীর্ঘদিন তাঁর সঙ্গে অন্তরার যোগাযোগ ছিল না। মাস তিনেক আগে দেবনাথ পাল নামে এক বন্ধুর কাছ থেকে নম্বর নিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন অন্তরা।

আরও পড়ুন: নিউ টাউন-কাণ্ডে পুনর্নির্মাণ কবে

ফোনে কী ধরনের কথা হত?

ওই বন্ধুর কথায়, ‘‘অন্তরা অত্যধিক ঘুমের ওষুধ খেত। কেন তা করছে জানতে চাইলে বলত, আর কী করব? স্বামী কথা বলে না। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে ব্লক করে দিয়েছে। মরার কথাও অন্তরাকে বলত সুরজিৎ। অন্তরা জানিয়েছিল, সুরজিৎ ওকে এমনও বলেছিল, মরলে যেন বাইরে কোথাও গিয়ে মরে। গোবরডাঙায় একটা চাকরি করত অন্তরা। কিন্তু স্বামী ফোনে এত বিরক্ত করত যে চাকরিটা পর্যন্ত করতে পারেনি।’’

সুরজিতের এক সময়ের ব্যবসায়িক অংশীদার তথা বন্ধু অন্তরার সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমরা বন্ধু ছিলাম। কিন্তু এখন সুরজিৎ আমাকেই জড়ানোর চেষ্টা করছে। থানায় ঢোকামাত্র বলল, ফোন করে করে তুই আমার বৌয়ের এই অবস্থা করলি!’’

অন্তরা যে মানসিক অশান্তির মধ্যে ছিলেন, তা জানিয়েছেন দেবনাথও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা একসঙ্গে অ্যানিমেশন কোর্স করে এক জায়গায় চাকরি করতাম। বিয়ের পরে যোগাযোগ ছিল না। বছর দুই আগে দমদমে আমার অফিসে অন্তরা আসে। তার পরে অন্তরা ও সুরজিতের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হত। ফোনে বারবার নিজের অসহায় অবস্থার কথা জানাত অন্তরা।’’

এ দিন অন্তরার বাবা বলেন, ‘‘মেয়ের ওই বন্ধু পুজোর সময় বাড়িতেও এসেছিল। ওরা খুবই ভাল বন্ধু ছিল।’’ তদন্তকারীরা জেনেছেন, বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় নিরাপত্তারক্ষী ধর্মকে ফোন করেন সুরজিৎ। কিন্তু স্ত্রীর খবর পাননি। চার ঘণ্টা পরে রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ তিনি বাড়ি ফেরেন। পুলিশ জানিয়েছে, মাঝের সময়ে রাজারহাটে একটি জমি দেখতে গিয়েছিলেন সুরজিৎ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement