Acid Attack

‘দীপিকা-বিতর্কই না হয় তুলে ধরুক আমাদের জীবনের লড়াই’

২০১৫-’১৬ সালে সারা দেশে অ্যাসিড হামলার সংখ্যা ছিল ৩০৭। সেখানে শুধু এ রাজ্যেই ৮৩টি এমন ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল! এনসিআরবি-র ২০১৭ সালের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে এই হামলার সংখ্যা ২৫২টি।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৩০
Share:

দিল্লির এক জমায়েতে অ্যাসিড আক্রান্তেরা। ফাইল চিত্র

‘‘যদি ধরেও নিই যে নিজের ছবির প্রচারের স্বার্থেই তিনি সেখানে গিয়েছিলেন, তাতে আপত্তির কী আছে? তবু তো গিয়েছিলেন। সেই যাওয়ার সূত্রেই যদি কিছু মানুষ গিয়ে ছবিটা দেখেন, তা হলে বুঝতে পারবেন, কী অসম্ভব যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে আমাদের যেতে হয়, যেতে হয়েছে।’’ বেঙ্গালুরু থেকে ফোনে উত্তেজিত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন বছর চব্বিশের শবনম সুলতানা। ছ’বছর আগে অ্যাসিড হামলার স্বীকার হয়েছিলেন তিনি। তাঁর ‘অপরাধ’, যে ছেলেটি ক্রমাগত তাঁকে উত্ত্যক্ত করছিল, তাকে ‘না’ বলা! তাতেই এক দুপুরে বাড়ি ঢুকে সেই ছেলেটি শবনমের মুখে অ্যাসিড মেরেছিল।

Advertisement

সে অতীত পিছনে ফেলে লড়াই করে এগিয়ে গিয়েছেন শবনম। বর্তমানে এক বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। তবে সেই লড়াই ছিল যন্ত্রণার, কষ্টের আর একদম একার। অন্য অ্যাসিড আক্রান্তদের মতোই। সেই লড়াইয়ের গল্পের সূত্রে উঠে এসেছিল গত মঙ্গলবার জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের পাশে দীপিকা পাড়ুকোনের দাঁড়ানোর কথা। যা নিয়ে সারা দেশে বিতর্ক শুরু হয়েছে। একটি বিশেষ রাজনৈতিক দল ও তার সমর্থকেরা বলা শুরু করেছেন, শীঘ্রই দীপিকার একটি ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা, যেখানে তিনি এক জন অ্যাসিড আক্রান্তের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। তারই প্রচার ‘কৌশল’ হিসেবে সে দিন জেএনইউয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

যে যুক্তি নস্যাৎ করছেন শবনমের মতো অ্যাসিড আক্রান্তেরা। যেমন, আরও এক অ্যাসিড আক্রান্ত জানাচ্ছেন, যে বা যারা অ্যাসিড মারে, তাদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কিছু হয় না। অথচ যাঁরা হামলার শিকার হয়েছেন, তাঁরা বাসে-ট্রেনে উঠলে লোকে এমন ভাবে তাকান, যেন ভিন্‌ গ্রহের জীব দেখছেন! ওই তরুণীর কথায়, ‘‘সেই তাকানোটা কী, কেউ বুঝবেন না। আজ দীপিকার জন্য যদি কয়েক জনও ছবিটা দেখেন, তাঁরা বুঝবেন আমাদের জীবন কী রকম। অন্তত একটা আভাস পাবেন।’’

Advertisement

ভাঙার চেষ্টাই জুড়ে দিল, বলছে পার্ক সার্কাস

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরোর (এনসিআরবি) তথ্য বলছে, সারা দেশে অ্যাসিড আক্রমণের যত ঘটনা ঘটে, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ প্রথম সারিতে। যেমন, ২০১৫-’১৬ সালে সারা দেশে অ্যাসিড হামলার সংখ্যা ছিল ৩০৭। সেখানে শুধু এ রাজ্যেই ৮৩টি এমন ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল! এনসিআরবি-র ২০১৭ সালের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে এই হামলার সংখ্যা ২৫২টি। পশ্চিমবঙ্গে ৫৪টি অ্যাসিড হামলা নথিভুক্ত হয়েছে। শেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশে অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটেছে ২২৮টি। সেখানে এ রাজ্যেই সংখ্যাটা ৫৩।

এক অ্যাসিড আক্রান্ত তরুণী জানালেন, কী ভাবে হামলার পরপরই জীবন পুরোপুরি পাল্টে যায়। পরিচিত লোকেদের ব্যবহার কী ভাবে যেন বদলে যায়। তাঁর কথায়, ‘‘এটা ঠিক বোঝানো যাবে না, এ অভিজ্ঞতা যাঁর সঙ্গে হয়েছে, তিনিই বুঝবেন। সব কিছু ঠিক ছিল, হঠাৎ এক দিন কেউ আপনার শরীরে অ্যাসিড ছুড়ে দিল, আপনার চিকিৎসা হল। সবই হল। কিন্তু জীবনটা আগের মতো থাকল না। যেন মূলস্রোত থেকে ব্রাত্য হয়ে গেলেন আপনি! দীপিকা-বিতর্কই না হয় তুলে ধরুক আমাদের জীবনের লড়াই। সেটাও তো একটা পাওয়া।’’

এরকম অ্যাসিড-আক্রান্তদের মূলস্রোতে ফেরানোর নিরন্তর চেষ্টা করছে, এমন এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে দিব্যলোক রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘ছবির বাণিজ্যিক দিক বাদ দিয়ে যদি মূল বিষয়টা দেখা যায়, তা হলে বলব, দীপিকা-বিতর্কের জন্য যদি কর্পোরেট সংস্থাগুলি এগিয়ে আসে অ্যাসিড আক্রান্তদের সাহায্য করতে, তা হলে সেটাই প্রাপ্তি। কারণ, অ্যাসিডে ক্ষতের চিকিৎসা ভীষণই খরচ সাপেক্ষ।’’

মঙ্গলবারের রাতের পর থেকে যেন দু’দলে ভাগ হয়ে গিয়েছে দেশটা।—দীপিকা-সমর্থনকারী ও দীপিকা-বিরোধী। সেই ভাগ হওয়া ভূখণ্ডে যাঁরা বাস্তবে এই জীবনটা বাঁচছেন, তাঁরা কিন্তু বলছেন, ‘‘বেশ করেছেন গিয়েছেন।’’ এত বিতর্ক হট্টগোলের মধ্যেও তাঁদের স্বর কিন্তু ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। তাকে আর উপেক্ষা করা যাবে কি!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement