সিআইডির পর এ বার পুলিশের জালে শিশু পাচার চক্র।
লালবাজার সূত্রে খবর, মধ্য কলকাতার ফুটপাথ থেকে এক শিশুর নিখোঁজের তদন্তে নেমে বৌবাজার থানার পুলিশ বিহারের ওই শিশু পাচার চক্রের সন্ধান পেয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশ রবিবার রাতে জোড়াসাঁকো এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে সুনীল দাস নামে এক পাচারকারীকে। তাকে জেরা করে খোঁজ মিলেছে পাচার হওয়া শিশুটির। মঙ্গলবার ভোরে বিহারের জামুই থেকে ওই শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। শিশুটিকে মঙ্গলবার বিহারের জামুইতে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সামনে পেশ করা হয়।
সপ্তাহ দুয়েক আগে উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়া থেকে তিনটি সদ্যোজাত শিশুকে পাচারের আগেই উদ্ধার করেছিলেন সিআইডির গোয়েন্দারা। পরে তদন্তে আরও ১০টি শিশুকে উদ্ধার করে পুলিশ। ওই পাচার-কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বেশ কয়েক জন চিকিৎসক-সহ ১৮ জনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তদন্তকারীদের দাবি ছিল, বিদেশেও শিশু পাচার করেছে চক্রটি। সেই তদন্তের মধ্যেই এ বার কলকাতা পুলিশের হাতে ধরা পড়ল নতুন একটি পাচার চক্র। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ফুটপাথের বাসিন্দা শিশুদেরই টার্গেট করত চক্রের সদস্যেরা।
পুলিশ জানিয়েছে, গত শুক্রবার গভীর রাতে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের যোগাযোগ ভবনের সামনের ফুটপাথের বাসিন্দা এক মহিলা বৌবাজার থানায় এসে অভিযোগ করেন, তাঁর তিন বছরের পুত্র সন্তানকে ওই দিন দুপুর থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। অভিযোগ করলেও তিনি বিস্তারিত ভাবে কিছু বলতে পারছিলেন না পুলিশকে। পরের দিন তিনি জানান, এক যুবক শুক্রবার দুপুরে তাঁর তিন বছরের পুত্রকে লজেন্স কিনে দিয়েছিলেন। এর আগেও বেশ কয়েক বার ওই যুবক তাঁর কাছে এসেছিল বলে দাবি করেন তিনি। পুলিশ জেনেছে, ওই মহিলা কয়েক দিন আগে ওই যুবকের মোবাইল থেকে এক মহাজনকে ফোন করেছিলেন। সেই সূত্র ধরেই খোঁজ মেলে সুনীলের। বিহারের বাসিন্দা সুনীল জোড়াসাঁকোয় মিস্ত্রির কাজ করে। বালক দত্ত লেনে সুনীল ভাড়া থাকে অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে। রবিবার ভাড়া বাড়ি থেকে সুনীলকে ধরেন তদন্তকারীরা। এর পরে জেরার মুখে সে ওই তিন বছরের শিশুটিকে বিহারের জামুইতে এক দম্পতির কাছে বিক্রির কথা স্বীকার করে নেয়। জেরার মুখে সুনীলের দাবি ছিল, ওই দম্পতি তার পরিচিত। তাঁদের কন্যা সন্তান থাকলেও পুত্র সন্তান ছিল না। সে শুক্রবার চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের ফুটপাথের বাসিন্দা ওই শিশুপুত্রটিকে চুরি করে হাওড়া থেকে ট্রেন করে জামুইতে দম্পতির কাছে পৌছে দেন। এর পরেই রাতে সুনীলকে নিয়ে তদন্তকারীরা বিহারে হানা দেন।
এক তদন্তকারীরা অফিসার জানান, প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে সুনীল পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত। তবে ওই দম্পতি দাবি করেছে তাঁদের কাছে সুনীল শিশুটিকে রেখে গিয়েছিল। পুলিশ জানায়, সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে।