প্রতীকী ছবি।
জরিমানা মিটিয়ে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শংসাপত্র নিতে চেয়েও তা পাচ্ছেন না ২৪ এ/১ রুটের বাসমালিকেরা। সরকারি নিয়মের জটিলতায় প্রয়োজনীয় অনুমতিপত্র না মেলায় জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের আওতায় থাকা ওই রুটের ৩৭টি বাস চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেসম্পূর্ণ বন্ধ। চাহিদা সত্ত্বেও হাওড়া-মুকুন্দপুর রুটের সব বাস বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা।
মুকুন্দপুর স্ট্যান্ড থেকে ই এম বাইপাস, সায়েন্স সিটি, পার্ক সার্কাস, সি আই টি রোড, মৌলালি, এস এন ব্যানার্জি রোড, ধর্মতলা হয়ে হাওড়া পর্যন্ত যেত বাসগুলি। মুকুন্দপুর সংলগ্ন বিভিন্ন আবাসনের বাসিন্দা, বেসরকারি হাসপাতালের কর্মী এবং রোগীর আত্মীয়েরা ওই রুটেই যাতায়াত করতেন। এ দিকে সব বাস বসে যাওয়ায় আর্থিক সমস্যায় পড়েছেন বাসচালক, কন্ডাক্টর এবং মালিকেরা।
ওই বাস রুট সূত্রের খবর, ২০১০ সাল নাগাদ কেন্দ্রীয় সরকারের জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের আওতায় ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের মধ্যস্থতায় শর্তসাপেক্ষে বেসরকারি বাসমালিকদের পারমিট দেওয়া হয়। বাসের মোট দামের পঞ্চাশ শতাংশ টাকা কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার ভাগাভাগি করে ভর্তুকি দিয়েছিল। কিন্তু বকেয়া টাকা নানা কারণে মালিকেরা না মেটানোয় বহু রুট থেকে ওই বাস উঠে যায়। হাজারো বিতর্কের মধ্যে রাস্তায় নামার কয়েক বছরের মধ্যে ওই বাস একে একে বন্ধ হলেও হাওড়া-মুকুন্দপুর রুট সচল ছিল।
বাসমালিকদের দাবি, গত ১০ বছর ধরে মাসিক কিস্তির টাকা তাঁরা মিটিয়ে এসেছেন। শুরুর দিকে মাসে ২০/২১ হাজার টাকা করে কিস্তি দিতেন। পরে সমস্যার কথা জানিয়ে কিস্তির টাকা পুনর্বিবেচনার আর্জি জানালে তা মাসিক ১২ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। তাঁদের অভিযোগ, বাসের মূল্য ১৯ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকার প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ সকলেই সরকারকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এখন কিস্তি মেটানোর প্রশ্নে ১২ হাজার টাকার ১২টি অগ্রিম চেক সরকারের কাছে জমা রাখতে তাঁরা তৈরি। বাসের ফিটনেস সার্টিফিকেটের জন্য ধার্য জরিমানাও দিতে তৈরি তাঁরা। তা সত্ত্বেও বাসমালিকদের বিরুদ্ধে ঋণের টাকা বাকি রাখার অভিযোগ তুলে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শংসাপত্রের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। এ দিকে বাস বন্ধ এবং সরকারি জটিলতায় ঋণের বকেয়াও বাড়ছে।
বিপরীতে পশ্চিমবঙ্গ পরিবহণ পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের কর্তাদের দাবি, বাসমালিকদের আর্থিক সমস্যার জন্য কিস্তির যে অঙ্ক কমানো হয়েছিল, তার সুদ এবং পুরনো বকেয়া যথেষ্ট বেশি। তা মেটালেই ছাড়পত্র দেওয়া সম্ভব। অর্থাৎ, সরকারি দাবি অনুযায়ী বাসমালিকদের প্রতি মাসে ৫০-৬০ হাজার টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে। বাসমালিকদের তরফে মহম্মদ রিয়াজ়উদ্দিন এবং সুপ্রিয় বসু বলছেন, ‘‘বাস সচল থাকলে সরকারকে কিস্তির টাকা মেটাতে পারতাম। কিন্তু বাস বন্ধ করে যাত্রী, সরকার, বাসমালিক— কারও কোনও লাভ হচ্ছে না।’’
সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিসের সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলেন, ‘‘বাসমালিকেরা যে টাকা মিটিয়েছেন, সেটা বিবেচনায় এনে সমাধান খোঁজা জরুরি।’’ পশ্চিবঙ্গ পরিবহণ পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগম সূত্রের খবর, বাসের পারমিট-সহ যাবতীয় নথি তাঁদের কাছেই রয়েছে। এ প্রসঙ্গে সংস্থার চেয়ারম্যান মইনুল হাসান বলেন, ‘‘কিছু জটিলতা দু’দিকেই রয়েছে। সমাধানের চেষ্টা চলছে।’’