এসএসকেএম হাসপাতালে দালাল-রাজ কতটা মাথাচাড়া দিয়েছে এবং তা দমনে কতটা কড়া হাতে রাশ ধরা হয়েছে, গত সাত দিনে ছ’জনকে গ্রেফতারের ঘটনায় সেই ছবিটাই আবার সামনে এল। রোগীর আত্মীয় সেজে হাসপাতাল চত্বর থেকে শনিবার জয় দাস নামে এক দালালকে গ্রেফতার করেছিল সাদা পোশাকের পুলিশ। একই ভাবে সোমবার রাতে ধরা পড়ে আরও দু’জন। তারা হল ডোমজুড়ের বাসিন্দা শেখ সুমন এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরের সুমন পাত্র। গত বৃহস্পতিবার সুকুমার বিশ্বাস ও বিশ্বনাথ চট্টোপাধ্যায় নামে দুই দালালকে ধরা হয়। তাদের জেরা করে পুলিশ জোকার বাসিন্দা অশোক বারিক নামে আরও এক দালালকে গ্রেফতার করে।
সূত্রের খবর, রাজ্যের ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ মন্ত্রী এবং এসএসকেএমের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অরূপ বিশ্বাস পুলিশকে হাসপাতাল চত্বরে দালাল-রাজ বন্ধে সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেওয়ার পরেই বেড়ে যায় পুলিশি তৎপরতা। যদিও অরূপবাবু বলেন, ‘‘আমি পুলিশকে পরামর্শ দিতে পারি না। পুলিশ তার কাজ করছে।’’
গত বছরের মাঝামাঝি থেকে পিজিতে দালাল চক্রের রমরমার অভিযোগ আসতে শুরু করেছিল। তার পরেই শুরু হয় হাসপাতাল চত্বরে সাদা পোশাকের পুলিশের নিয়মিত টহল। টাকা নিতে গিয়ে গ্রেফতারও হয় কয়েক জন দালাল। কিন্তু দিন কয়েক পর থেকেই পুলিশি সক্রিয়তা কমে যায় বলে অভিযোগ। সেই সুযোগে আবার আসরে নামতে শুরু করে দালালরা। সাত দিনে ছ’জন দালালকে ধরার পরে এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বরে কেউই আর রোগী ভর্তি নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না।
পিজির এই দালাল চক্রের পিছনে কোনও চিকিৎসক, নার্স বা চতুর্থ শ্রেণির কর্মী আছেন কি না, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘রোগীর পরিজন সেজে আমরা কয়েক জন দালালকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছি। তবে কাজ এখনও শেষ হয়নি।’’
২৯ অগস্ট অশোক রাম নামে এক রোগীর মৃত্যুর পরে সঞ্জয় দাস ওরফে সঞ্জু নামে এক দালালের নেতৃত্বে তাঁদের উপরে হামলা হয় বলে অভিযোগ করেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশ। পাল্টা মারধরের অভিযোগ উঠেছিল জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধেও। ওই ঘটনায় সঞ্জয় এবং তার দুই শাগরেদকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ঘটনার পরদিনই এসএসকেএম চত্বরের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এর পরেই পিজি-র রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদ থেকে ফিরহাদ হাকিমকে সরিয়ে অরূপ বিশ্বাসের নাম ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। হাসপাতাল সূ্ত্রে খবর, দায়িত্ব পাওয়ার পরেই অরূপবাবু দালাল চক্র বন্ধে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। পুলিশকেও তৎপর হতে বলেন। সম্প্রতি মন্ত্রী মাঝেমধ্যে তাঁর চিরাচরিত পোশাক ছেড়ে অন্য পোশাকে (কার্যত ছদ্মবেশে) হাসপাতাল চত্বর ঘুরে দেখেছেন। মঙ্গলবার অরূপবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্ন দালাল মুক্ত এসএসকেএম। আমি সেই স্বপ্নই বাস্তবায়িত করার চেষ্টা করছি।’’