কলকাতা হাইকোর্টে কড়া ধমক খেলেন মদন মিত্রের কৌঁসুলি। নিম্ন আদালতের রায় নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিলেন বিচারপতি নিশীথা মাত্রে ও বিচারপতি তাপস মুখোপাধ্যায়। দুই বিচারপতির বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, মদন মিত্রকে জামিন দেওয়ার জন্য অস্বাভাবিক তাড়াহুড়ো দেখিয়েছেন আলিপুর আদালতের বিচারক। সিবিআই বার বার আবেদন জানানো সত্ত্বেও আলিপুর আদালত শুনানি মাত্র এক দিনের জন্য পিছিয়ে দিতে কেন রাজি হল না, তা নিয়েও বুধবার প্রশ্ন তুলেছে কলকাতা হাইকোর্ট।
বুধবার মদন মিত্রের জামিন খারিজ নিয়ে শুনানির সময়ে বিচারপতি নিশীথা মাত্রে এবং বিচারপতি তাপস মুখোপাধ্যায়ের প্রবল উষ্মার মুখে পড়েন মন্ত্রী মদন মিত্রের আইনজীবী সুরেন্দ্রকুমার কপূর। তাঁকে বিচারপতি মাত্রে বলেন, ‘‘আপনি এটা নিশ্চয়ই বলতে চাইছেন না যে আপনার মক্কেল ঈশ্বরের চেয়েও পবিত্র (হোলিয়ার দ্যান দাও)!’’ মঙ্গলবার মদনবাবুর পক্ষ থেকে হলফনামা জমা না পড়ায় শুনানি হয়নি।এ জন্যই মূলত বিচারপতির ধমক খেতে হয় আইনজীবীকে। বুধবার সারা দিন ধরে চলে শুনানি। বৃহস্পতিবার আবার দু’তরফের বক্তব্য শুনবেন বলে বিচারপতিরা জানান। তবে, বৃহস্পতিবার কেউই সওয়াল-জবাবের জন্য বেশি সময় পাবেন না। অল্প ক্ষণ শুনানির পরই বিচারপতিরা রায় দেবেন।
বুধবার শুনানিতে সুরেন্দ্র কপূর বলেন, ‘‘১৫ মাস আগে আমার মক্কেল মদন মিত্র মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়েছেন। পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন। তিনি এখন আর মন্ত্রী নেই। অথচ সিবিআই বার বার করে বলতে চাইছে তিনি মন্ত্রী বলে প্রভাব খাটাবেন।’’ এ কথা শুনেই বিচারপতি মাত্রে তাঁকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘সে কী! আপনার মক্কেল মন্ত্রী নন! কিন্তু, এর আগে আপনারা হাইকোর্টে যে জামিনের আবেদন করেছেন সেখানে লেখা রয়েছে আপনার মক্কেল বর্তমানে মন্ত্রী! এমনকী যতদূর মনে পড়ছে কপিল সিব্বল এসে যে দিন আপনার মক্কেলের হয়ে সওয়াল করলেন, (৬ অগস্ট) সে দিন বলেছিলেন জামিন পেলে তিনি পদত্যাগও করতে চান। তার মানে তখনও তিনি মন্ত্রী ছিলেন! যদি আগেই পদত্যাগ করে থাকেন তা হলে কী করে নতুন করে পদত্যাগ করতে চাইবেন? এ দিকে আপনি আজ বলছেন, ১৫ মাস আগে পদত্যাগ করেছেন?’’ বিচারর এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর ছিল না কপূরের কাছে। তিনি বলেন, ‘‘আসলে উনি পদত্যাগ করেছেন ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে। কিন্তু, তা এখনও গৃহীত হয়নি।’’ এই জবাব আরও বিড়ম্বনা বাড়ায় সুরেন্দ্র কপূরের। বিচারপতিরা প্রশ্ন তোলেন, এক জন কতটা প্রভাবশালী হলে পদত্যাগের এত দিন পরেও তিনি মন্ত্রিত্বে বহাল থাকতে পারেন?
শুনানির শুরুতে ১০টা ৪০ থেকে প্রথমে টানা দেড় ঘন্টা সওয়াল করেন সিবিআই কৌঁসুলি কে রাঘবচারিলু। ৩১ অগস্ট কোন পরিস্থিতিতে নিম্ন আদালত মদন মিত্রকে জামিন দিয়েছেন তা বর্ণনা করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, সে দিন বিকৃতভাবে, বেঠিকভাবে ও খামখেয়ালিভাবে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নিম্ন আদালতের বিচারক। তিনি বলেন, ‘‘আমার আশঙ্কা ছিল, সে দিনই জামিনের শুনানি শোনার জন্য বিচারক মনস্থির করে নিয়েছিলেন।’’ ১২টা ১০ এর পরে সওয়াল শুরু করেন সুরেন্দ্র কপূর। বিকেল সাড়ে তিনটে পর্যন্ত সেই সওয়াল চলে। মাঝে সওয়া একটা থেকে দুপুর দু’টো পর্যন্ত বিরতি ছিল। সুরেন্দ্র কপূরের সওয়ালের সময়েই একের পর এক পাল্টা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন বিচারপতি মাত্রে। সুরেন্দ্র পুরনো একটি মামলার কথা উল্লেখ করে বলেন, কোনও ব্যক্তি একবার জামিন পেয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর, তাঁকে ফের জামিন বাতিল করে জেলে পাটাতে হলে অবূতপূর্ব কারণ দেখানো জরুরি। বিচারপতি মাত্রে তাঁকে পাল্টা বলেন, ‘‘নিম্ন আদালতের রায় বিকৃত, বেঠিক ও খামখেয়ালি হলে হাইকোর্ট সেই রায় খারিজ করতেই পারে।’’
নিজের সওয়ালে রাঘবচারিলু নিম্ন আদালতের খামখেয়ালিপনার কথাই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি তো সে দিন (৩১ অক্টোবর) নিম্ন আদালতের বিচারকের কাছে কার্যত ভিক্ষা চাওয়ার মতো করে বলেছিলাম মাত্র এক দিনের জন্য সময় দেওয়া হোক। সে দিন তদন্তকারী অফিসার ছিলেন না। মামলরা কেস ডায়েরিও ছিল না।’’ সুরেন্দ্র কপূর যখন সওয়াল করতে শুরু করেন তখনই বিচারপতি মাত্রে তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘‘সে দিন কী এমন ঘটল যে মাত্র এক দিনের জন্য শুনানি পিছিয়ে দেওয়া হল না। আকাশ ভেঙে পড়েছিল? না মদনবাবুকে হাসপাতাল থেকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হচ্ছিল?’’ স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রশ্নের সদুত্তর ছিল না সুরেন্দ্র কপূরের কাছে। বৃহস্পতিবার শুনানিতেই স্পষ্ট হবে, কী রয়েছে মদন মিত্রের ভাগ্যে।