ফাইল চিত্র।
রাজ্যের বাকি পুর-নিগম ও পুরসভার ভোট আধা-সামরিক বাহিনীর নজরদারিতে করানোর পক্ষেই সওয়াল করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। কলকাতার সাম্প্রতিক পুরভোট হয়েছিল রাজ্য পুলিশ দিয়েই। সেই ভোটে জালিয়াতি ও গা-জোয়ারির বিস্তর অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। এই প্রেক্ষিতে রাজ্যপালের বক্তব্য, ‘‘লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে আধা-সামরিক বাহিনী কাজ করে। এতে মানুষের মনোবল বাড়ে। পুরসভাতেও সেটাই দরকার। কারণ, কলকাতা পুলিশ এবং রাজ্য পুলিশ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মতো কাজ করে! আমি বহু বার বলেছি কিন্তু আমার কথা পুলিশের কানে ঢোকেনি।’’ কলকাতার পুরভোটে সিসিটিভি সংক্রান্ত তথ্যও তিনি চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
রাজ্যপালের এমন ভূমিকা নিয়েই ফের প্রশ্ন তুলেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, ‘‘রাজ্যপাল কেন্দ্রের মনোনীত প্রতিনিধি। রাজ্যের নির্বাচিত সরকার আছে, রাজ্য নির্বাচন কমিশন আছে। তারাই সিদ্ধান্ত নেবে।’’ রাজ্যপালের সামগ্রিক ভূমিকা প্রসঙ্গেই রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের মন্তব্য, ‘‘ধনখড় এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করছেন। রাজ্যপাল পদের গরিমা ধরে রাখুন, এটুকুই কাম্য।’’
বালি পুরসভাকে হাওড়া থেকে আবার আলাদা করতে চেয়ে হাওড়া পুর-নিগম (সশোধনী) বিলে তিনি সই করেননি বলে ফের জানিয়েছেন ধনখড়। দার্জিলিং যাওয়ার পথে এ দিন বাগডোগরায় তিনি বলেন, ‘‘হাওড়া পুরসভা ভেঙে বালি পুরসভা তৈরির বিল আমার কাছে আসেনি। অথচ আদালতে বলা হচ্ছে, আমি না কি বিলে সই করে দিয়েছি! এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা। আমাকে কিছুই জানানো হয়নি।’’ রাজ্যপাল জানিয়েছেন, হাওড়া পুরসভা বিল সংক্রান্ত তথ্য সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন। তথ্য পেলে ‘প্রয়োজনীয় কাজ’ করবেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমি চাই, মুখ্যমন্ত্রী বা বিধানসভার স্পিকার আমার কাছে আসুন, আলোচনা হোক। সবাই মিলে জনকল্যাণের কাজ করব। এতে আমাদের মধ্যে মতবিরোধ দূর হতে পারে।’’
রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত সরকার এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘আমরা যত দূর জানি, এই ধরনের বিলের ক্ষেত্রে রাজ্যপালের সই দরকার। ভোটের আগে এবং পরে বেশ কয়েক মাস ধরেই তৃণমূল সরকার দেশের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কাজ করছে এবং কথা বলছে। সংবিধানে রাজ্যপালকে অধিকার দেওয়া আছে, তিনি তথ্য চাইলে সরকার দিতে বাধ্য। আমরা দেখতে পাচ্ছি, সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। এর পিছনে কোনও গভীর রহস্য আছে কি না, সেটা কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলি দেখুক।’’ ধূপগুড়িতে দলের জেলা সম্মেলনের ফাঁকে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘আদালতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল বলছেন, রাজ্যপাল বিলে সই করেছেন। রাজ্যপাল বলেছেন, করেননি। এটা তো পাড়ার ন্যালা আর ক্যাবলার ঝগড়া নয়! সাংবিধানিক সঙ্কট দেখা দিচ্ছে। চোখের চামড়া নেই রাজ্য সরকারের অথবা রাজ্যপালের! খুশি মতো চলছেন। কখনও হতে পারে না এটা!’’