বিজয়ী: মিরিকে জয়ের উল্লাস তৃণমূল সমর্থকের। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
বিধানসভা ভোটের পরে লোকসভা ও বিধানসভার দু’টি উপনির্বাচন। সেই রেশ ধরে রেখেই এ বার পাহাড় ও সমতলের ৭টি পুরসভার ভোট। জয়যাত্রা অব্যাহত জোড়া ফুলের! সমতলে বিরোধীরা প্রায় নিশ্চিহ্ন! তার মধ্যে সব চেয়ে বিপর্যস্ত বামেরা। তবে বিরোধী হিসাবে বিজেপি-র উঠে আসার প্রবণতা স্পষ্ট।
সমতলের তিনটি এবং পাহাড়ের একটি— ৭টির মধ্যে মোট চারটিতে পুরবোর্ড দখল করল তৃণমূল। তার মধ্যে পাহাড়ে তিন দশক পরে সমতলের কোনও মূল স্রোতের দল বিজয়ের পতাকা ওড়াল এ বারই! মিরিকের পাশাপাশি পাহা়ড়ের অন্য তিনটি পুরসভা দার্জিলিং, কার্শিয়াং ও কালিম্পঙেও খাতা খুলেছে তৃণমূল। প্রতিটি পুরসভাতেই তাদের ভোটপ্রাপ্তির হার বেড়েছে। তৃপ্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কত দশক পরে পাহাড়ে নতুন যুগের সূচনা হল! পাহাড় হাসছে। মিরিকের মানুষকে বিশেষ করে ধন্যবাদ আমাদের উপরে আস্থা রাখার জন্য।’’ তৃণমূল শীর্য নেতৃত্বের মতে, বাহুবল, অর্থবল ও দুর্নীতির মোকাবিলা করে পাহাড়ে গিয়ে জয়পতাকা পুঁতে আসাকে বিশেষ কৃতিত্ব হিসাবেই ধরতে হবে।
জয়োল্লাস: বুধবার ডোমকলে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
সমতলের তিনটি পুরসভায় তৃণমূল দাপট রেখেছে একচ্ছত্র। বুধবারের ভোট-গণনা বলছে, ৮৪% ভোট পেয়ে ডোমকল, প্রায় ৬৯% পেয়ে রায়গঞ্জ এবং ৫১.৫% ভোট পেয়ে পূজালি পুরসভা দখলে নিয়েছে শাসক দল। তার মধ্যে রায়গঞ্জ ও ডোমকল ছিল বিরোধীদের গড়। সেখানে কংগ্রেস ও বামেদের ধুয়ে-মুছে সাফ করে দিয়েছে তৃণমূল। পূজালি অবশ্য কংগ্রেসের হাত থেকে আগেই নিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল। এ বার ভোটে জিতে সেই আধিপত্যে আনুষ্ঠানিক সিলমোহর পড়ল। পঞ্চায়েত ভোটের আগে কিছু পুরসভার এই রায়ে আশ্বস্ত মমতা বলেছেন, ‘‘বারেবারে আমাদের উপরে আস্থা দেখানোর জন্য মা-মাটি-মানুষকে ধন্যবাদ। আমরা সম্মানিত। মানুষের দেওয়া এই মর্যাদা আমাদের বিনম্র করবে।’’
তৃণমূলের জয়রথের তলায় বিরোধীরা প্রায় পিষ্টই হয়েছে! তবু তার মধ্যেও বিরোধী পরিসরে কিছুটা মাথা তুলেছে বিজেপি। পূজালিতে দু’টি এবং রায়গঞ্জে একটি ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছে তারা। পাশাপাশিই রায়গঞ্জের ৫টি ও পূজালির তিনটি ওয়ার্ডে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে তারা। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, কোচবিহার লোকসভা ও দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভার উপনির্বাচনে বিজেপি যে ভাবে প্রধান বিরোধী হিসাবে উঠে এসেছিল, পুরভোটে খানিকটা সেই প্রবণতাই অব্যাহত। বিজেপি-র তরফে এ রাজ্যের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের কথায়, ‘‘এই ভোটে ব্যাপক হিংসা ও বুথ দখল হয়েছে। তা সত্ত্বেও বিজেপি-র বৃদ্ধি রোখা যায়নি। ফলের মানচিত্রে কংগ্রেস-বামেরা ধুয়ে-মুছে সাফ হয়ে গিয়েছে!’’ দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও বলেছেন, ‘‘গুন্ডা দিয়ে ভোট লুঠের চেষ্টা হয়েছিল। গণতন্ত্রকে হত্যার চেষ্টা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও আমরা দু-এক জায়গায় বাঁচাতে পেরেছি। বিজেপি শেষ পর্যন্ত ময়দানে ছিল।’’
আরও পড়ুন: গুরুঙ্গের খাসতালুকে ঘাসফুল ফোটালেন মমতা
দীর্ঘদিনের গড় রায়গঞ্জ এ বার ‘হাত-ছাড়া’। ডোমকলেও বাম-কংগ্রেসের জোট ধরাশায়ী। গোদের উপরে বিষফোড়ার মতো পূজালিতে এক জন ও ডোমকলে জয়ী দু’জন বিরোধী কাউন্সিলর ফলঘোষণার পরেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব অবশ্য এই ফলকে আলাদা করে গুরুত্ব দিতে নারাজ। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বা বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীদের প্রশ্ন, যে নির্বাচনে ভোট লুঠ হয়েছে, যে ভোটকে তাঁরা ‘অবৈধ’ ঘোষণার দাবি করেছেন, সেখানে আর বিপর্যয় কী!
তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য বিজেপি-কে নিয়ে হইচইয়ের কারণ দেখছেন না। দলের এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, ‘‘সমতলের তিন পুরসভায় ৬৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র তিনটি পেয়েছে বিজেপি। রামনবমী করুক আর হনুমান জয়ন্তী, বাংলার মাটি অত সহজ নয়!’’