কপালে চন্দনের ফোঁটা আর থালাভরা মিষ্টির পাশাপাশি ভাইয়ের হাতে উপহার তুলে দেওয়াও ভাইফোঁটার রেওয়াজ। তারপর ছোট বোনের হাতে দাদা তুলে দেন ভালবাসার উপহার। অন্যান্য বারের মতো এ বারেও কালীপুজোর পর থেকেই ভাইফোঁটা উপলক্ষে উপহারের ডালি সাজিয়ে বসেছিল হাওড়া-হুগলির বিভিন্ন দোকান। কেউ কিনলেন সুগন্ধী। কেউ আবার পছন্দসই চকোলেট। কেউ ঢুঁ মারলেন পোশাকের দোকানে। কেউ আবার ভাইয়ের হাতে ধরিয়ে দিলেন ঝকঝকে স্মার্টফোন।
হুগলির আরামবাগ শহরে ভাইয়ের জন্য দিদিরা পোশাক কিনছেন, এত দিন এটাই ছিল চিরন্তন দৃশ্য। এ বারেও পোশাক বিপণিগুলিতে ভিড় মন্দ ছিল না। মূলত জিনস্ এবং টি-শার্ট বিক্রি হয়েছে। কেউ কেউ আবার ভাইদের জন্য গ্যাঁটের কড়ি অনেকটা বেশি খরচ করে স্মার্টফোন কিনে ফেলেছেন। আরামবাগ হাসপাতাল মোড়ের মোবাইলের দোকান তোতন তরফদারের। তিনি জানালেন, গত ক’দিনে ভাইফোঁটার উপহার হিসেবে অন্তত ৩০টি স্মার্টফোন কিনে নিয়ে গিয়েছেন দিদিরা। অধিকাংশ ফোনের দাম ছয় হাজার টাকা থেকে বারো হাজার টাকার মধ্যে।
চুঁচুড়ার আমড়াতলা গলির একটি দোকানে নানা উপহার সামগ্রী বিক্রি হয়। একটি দোকানেরর মালিক দেবাশিস দাস জানাচ্ছেন, কালীপুজোর পর থেকেই মেয়েরা কেনাকাটার জন্য ভিড় করেন। বেশি বিক্রি হয়েছে সুগন্ধী। দেবাশিসবাবুর দাবি, এই ক’দিনে হাজারের উপর সুগন্ধীর শিশি বিক্রি হয়েছে। এগুলির দামও নাগালের মধ্যেই। ১০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধী পরখ করে নিয়েছেন বোনেরা। অনেকে আবার ব্রেসলেট উপহার দিয়েছেন ভাইকে। চুঁচুড়ার আখনবাজার, পান্ডুয়া, শ্রীরামপুরের বস্ত্র বিপনিতে জিনস, টি-শার্ট কেনার জন্য লম্বা লাইন পড়েছিল।ভাই-বোনের রসনা তৃপ্ত করেছে উপহারের চকোলেট। বিভিন্ন দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ফুলের স্তবকের আদলে তৈরি একটি চকোলেটের চাহিদা ছিল। এ ছাড়াও নামজাদা কোম্পানির বিভিন্ন দামের চকোলেট চেটেপুটে খেয়েছেন ভাইবোনেরা।
গ্রামীণ হাওড়াতেও গত কয়েক দিন ধরে উপহার সামগ্রীর দোকানগুলিতে তিল ধারনের জায়গা ছিল না। অনেকে আগেভাগেই ভাইয়ের জন্য উপহার কিনে রেখেছিলেন। কেউ আবার ভাইফোঁটা দিয়ে উপহার কিনতে বেরিয়েছেন। জামাকাপড় থেকে শুরু করে খাবার জিনিস, বাড়িতে সাজিয়ে রাখার জিনিস উপহার হিসেবে বিক্রি হয়েছে। বাগনান, উলুবেড়িয়া, আমতা, শ্যামপুর-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকার দোকানগুলোতে কয়েক দিন ধরেই ভিড় হচ্ছে। বাগনানের একটি মনোহারি দোকানের কর্তা তুষারকান্তি দাস বলেন, ভাইফোঁটা উপলক্ষে তাঁদের দোকানে নানা ধরনের উপহার বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন স্মারক, খেলনা যেমন রয়েছে, তেমনি ইনডাকশন, নন স্টিক কুক ওয়্যারের মতো জিনিসও রয়েছে। আর এক দোকানি কালীপদ সামন্ত জানালেন, তাঁর দোকানে দামী কোম্পানির চকোলেট বেশি বিক্রি হয়েছে। অনেক জায়গায় বিক্রি হয়েছে সোয়েটার, জ্যাকেট, শাল।
চকোলেট এবং স্মার্টফোনের খোঁজে রাত অবধি ভিড় ছিল দুই জেলার নানা দোকানে।