জমিজমা সংক্রান্ত বিবাদের জেরে আত্মীয়কে খুনের দায়ে সাজা হল মা ও ছেলের। সাজাপ্রাপ্তরা হল ধনঞ্জয় মণ্ডল ও মায়ারানি মণ্ডল। বুধবার উলুবেড়িয়া আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক শুভাশিস ঘোষ ধনঞ্জয়কে ২০ বছর ও মা মায়ারানিকে যাবজ্জীবন কারদণ্ডের সাজা শুনিয়েছেন। সরকারি আইনজীবী নিধুরাম নন্দী বলেন, ‘‘মায়ারানির যাবজ্জীবন ও ধনঞ্জয়ের ২০ বছর কারাদণ্ডের পাশাপাশি বিচারক তাদের ২ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ঘটনাটি ঘটেছিল উলুবেড়িয়ার মহিশালী বটতলা এলাকায়। জমিজমা নিয়ে মায়ারানিরদের সঙ্গে দেওরের ছেলে সুনীল মণ্ডলদের দীর্ঘদিনের গণ্ডগোল ছিল। অশান্তির জেরে সুনীল পুরনো ভিটে ছেড়ে মিনিট পাঁচেক দূরে পরিবার নিয়ে থাকতেন। তবে তাঁর বাবা দেবেন্দ্রনাথবাবু পুরনো ভিটেতেই থাকতেন। সেখানেই থাকত মায়ারানিরাও। সুনীলবাবু বাবাকে প্রতিদিন সেখানে খাবার দিয়ে যেতেন। ঘটনার দিনও তিনি বাবার জন্য খাবার নিয়ে গিয়েছিলেন। তখন মায়ারানি তাঁদের কটূক্তি করেন। অভিযোগ, সুনীলবাবু প্রতিবাদ করতেই বচসা বাধে। তখন মায়ারানি বাড়ি থেকে একটা কাটারি এনে সুনীলবাবুকে কোপায়। তখন ধনঞ্জয়ও বাড়ির ভিতর থেকে একটা শাবল নিয়ে এসে তাঁকে মারতে থাকেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লেও মায়ারানিরা তাঁকে কোপানো বন্ধ করেনি। আওয়াজ পেয়ে দেবেন্দ্রনাথবাবু বেরিয়ে আসেন। তিনি ছেলেকে বাঁচাতে গেলে তাঁকেও মারধর করেন। শাবল দিয়ে আঘাত করায় তিনিও মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে প্রতিবেশীরা ছুটে এলে মা-ছেলে বাড়ির মধ্যে ঢুকে যায়। উদ্ধার করে উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলেও তাঁদের বাঁচানো যায়নি।
এর পরেই ক্ষুব্ধ পড়শিরা মায়ারানিদের ঘরের মধ্যে আটকে রাখেন। খবর যায় থানায়। এলাকায় এলে মা-ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দেন প্রতিবেশীরা। ঘটনার দিনই সুনীলবাবুর স্ত্রী চৈতালী মণ্ডল উলুবেড়িয়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। মোট ৬ জনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। তদন্তে নেমে পুলিশ রক্তমাখা কাটারি মায়ারানির বাড়ির বিছানার তলা থেকে ও ঘর থেকে শাবলটি উদ্ধার করে।
এ দিন রায় শুনতে আদালতে উপস্থিত ছিলেন চৈতালীদেবী। তিনি বললেন, ‘‘দোষীদের ফাঁসি চেয়েছিলাম। কিন্তু হল যাবজ্জীবন। যাই হোক ওদের যে শাস্তি হয়েছে তাতে আমি খুশি।’’