প্রস্তুতি: এখানেই আজ, বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক সভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। তারকেশ্বরে ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর দে
দিনে-দুপুরে খুনজখম, ছিনতাই থেকে রাতের অন্ধকারে ‘গ্যাং ওয়ার’— কিছুই বাদ নেই।
গত কয়েক মাসে হুগলির জেলা সদর চুঁচুড়া-সহ নানা প্রান্তে দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য বেলাগাম হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠছিলই। ছ’মাসে খুন হয়েছেন ২৪ জন। পুলিশের ভূমিকাও পড়েছে প্রশ্নের মুখে। আজ, বৃহস্পতিবার হুগলিতে প্রশাসনিক বৈঠক করতে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই বহু মানুষের আশা, দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য বন্ধে মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই দাওয়াই দেবেন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, আজ, দুপুর ২টোয় হেলিকপ্টারে তারকেশ্বরের পৌঁছবেন মমতা। এ জন্য দু’টি হেলিপ্যাড হয়েছে। সেখান থেকে সড়কপথে তারকেশ্বর বয়েজ স্কুল হয়ে হেঁটে মন্দিরে পৌঁছবেন। পুজো দেওয়ার পর তিনি ফের গাড়িতে যাবেন তারকেশ্বর বাসস্ট্যান্ডে। সেখানে জনসভা হবে। তার পরে প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে যাবেন তারকেশ্বর ডিগ্রি কলেজে। এ জন্য বুধবার দিনভর পুলিশ-প্রশাসনের তৎপরতা ছিল তুঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ত্রুটিমুক্ত রাখতে বিভিন্ন জেলা থেকে মোট ১১ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার অফিসারেরা থাকছেন। রাখা হচ্ছে ২৫ জন ডিএসপি এবং ৫০ জন ইন্সপেক্টরকে। থাকছেন মোট ১৬০০ পুলিশকর্মী এবং ৩০০০ সিভিক ভলান্টিয়ার।
মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে জেলার চার মহকুমার ২৩টি থানা এলাকায় অভিযান তালিয়ে পুলিশ ৫১টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৪৯টি বোমা এবং ১১৩টি অন্য অস্ত্র উদ্ধার করেছে। গ্রেফতার করা বয়েছে ১১৭ জন দুষ্কৃতীকে। অনেকেই বলছেন, পুলিশ বছরভর এই তৎপরতা দেখালে দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যেত।
বেআইনি: দিন কয়েক আগেই চুঁচুড়ায় উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। ফাইল চিত্র
গত বছর চুঁচুড়ায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘চুঁচুড়ার আইসি কে আছেন? আপনার এলাকায় ‘ক্রাইম’ বাড়ছে কেন?’’ তার পরে বছর ঘুরলেও দুষ্কৃতী তাণ্ডব তো কমেইনি, উল্টে জেলার নানা প্রান্তে তা বেড়েছে। বিশেষ করে জেলা সদর চুঁচুড়া এবং সংলগ্ন এলাকায় দুষ্কৃতী তাণ্ডব লাগামছাড়া হয়েছে। কয়েক মাস আগে দিনের বেলা রবীন্দ্রনগর বাজারে একদল দুষ্কৃতী চড়াও হয়ে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। গুলিতে জখম হন এক যুবক। দুষ্কৃতীরা তারক দাস বিশ্বাস এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে খুন করে। তারকের বিরুদ্ধে এক সময় অপরাধমূলক কাজকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। সে রবীন্দ্রনগরের দাগি দুষ্কৃতী টোটনের দাদা।
সেই আতঙ্ক কাটার আগেই বলাগড় দেখল ‘গ্যাং ওয়ার’। সম্প্রতি রাতের অন্ধকারে বলাগড়ের রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে দুষ্কৃতীদের দু’টি দলের মধ্যে গুলির লড়াই চলে। গুলিতে এক দুষ্কৃতী ঘটনাস্থলেই মারা যায়। জখম হয় দু’জন। তারক খুনের বদলা নিতেই টোটনের দলবল তার বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর দুষ্কৃতী বিশালকে খুনের ছক কষে ওই হামলা চালায় বলে পুলিশ জানিয়েছিল।
সেই সময় সাধারণ মানুষের অভিযোগ ছিল, জেলার দুই তৃণমূল নেতার ছত্রছায়ায় থাকার জন্যই দুই দুষ্কৃতী এত বেপরোয়া। পুলিশ নিষ্ক্রিয়। তার পরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। নানা প্রান্তে নানা অপরাধের কথাও সামনে এসেছে। চুঁচুড়ারই এক বাসিন্দা বলছেন, ‘‘পুলিশ যদি প্রথম থেকে সক্রিয় থাকত, তা হলে দুষ্কৃতীরা এতটা বেলাগাম হতে পারত না। এখন মুখ্যমন্ত্রীই ভরসা।’’
পুলিশ অবশ্য প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে, দুষ্কৃতীদের ধরতে তারা সচেষ্ট। তা সত্ত্বেও কেন অপরাধে লাগাম পরানো যাচ্ছে না, সেই প্রশ্ন থাকছেই।