টোটো- বেআইনি অটোর বিরুদ্ধে বাসকর্মীদের বিক্ষোভ মিছিল। ছবি: তাপস ঘোষ।
টোটো নিয়ন্ত্রণের দাবিতে বুধবারেও হুগলির সদর মহকুমায় রাস্তায় নামল না বাস। অনেক জায়গাতেই তাদের সঙ্গে সামিল হল অটো। অপর মহকুমা শহর শ্রীরামপুরেও দিনভর অটো চলাচল বন্ধ রইল। চাপে পড়ে প্রশাসনের তরফে অবৈধ অটো এবং টোটো ধড়পাকড় শুরু হল। তাতেও অবশ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। দু’পক্ষের টানাপড়েনে ভুগলেন সাধারণ মানুষই।
এমনিতেই টোটো নিয়ন্ত্রণের দাবিতে বাস-অটোর আন্দোলন চলছিলই। রবিবারের একটি ঘটনা আগুনে ঘি ঢালে। ওই দিন ভদ্রেশ্বরের বাবুঘাট স্টপেজে জিটি রোডে ২ নম্বর রুটের এক বাসচালককে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে এক টোটোচালকের বিরুদ্ধে। ঘটনার প্রতিবাদে এবং টোটোকে বাগে আনার দাবিতে মঙ্গলবার থেকে চুঁচুড়া মহকুমা থেকে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন ক্ষিপ্ত বাস শ্রমিকরা। হুমকির ঘটনা নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। বুধবারেও চুঁচুড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে চুঁচুড়া স্টেশন, রিষড়া, পাণ্ডুয়া, হরিপাল, তারকেশ্বর-সহ বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল ছাড়েনি। কয়েকটি রুটের অটো, ট্রেকারও চলেনি। অন্য দিকে, শ্রীরামপুর থেকে বাগখাল, রিষড়া এবং কোন্নগর রুটের অটোও এ দিন বন্ধ ছিল।
ফলে পথে বেরনো মানুষ বিপাকে পড়েন। অনেককেই দেখা যায় বেশি ভাড়া গুনে রিকশায় সওয়ার হতে। তাড়াহুড়ো থাকায় অফিসযাত্রীদের অনেককে ইঞ্জিনচালিত মোটরভ্যানে চেপে যেতে দেখা যায়। অনেকে আবার হেঁটেই গন্তব্যের দিকে রওনা হন। প্রচণ্ড গরমে গাড়িঘো়ড়া না পেয়ে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরিস্থিতি আঁচ করে প্রশাসনের তরফে বাস মালিকদের আবেদন জানানো হয়, বাস চালানোর জন্য। তাতে অবশ্য চিঁড়ে ভেজেনি। উল্টে চুঁচুড়ায় বাস শ্রমিকরা মিছিল বের করেন। বাসস্ট্যান্ড থেকে বেরিয়ে ঘড়ির মোড় হয়ে জেলাশাসকের দফতরের সামনে দিয়ে গিয়ে শহরের নানা রাস্তা ঘোরে ওই মিছিল।
এর পরেই দুপুরে আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা (আরটিও) সৈকত দাস দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে টোটো এবং অবৈধ অটোর বিরুদ্ধে অভিযানে নামেন। ঘড়ির মোড়, খাদিনা মোড়, ব্যান্ডেল মোড়, হুগলি মোড় এবং বৈদ্যবাটিতে বেশ কিছু টোটো এবং অটো আটক করা হয়। ভদ্রেশ্বরেও পুলিশ কয়েকটি টোটো আটক করে। পরিবহণ দফতরের কর্তারা জানান, এই অভিযান সর্বত্রই চলবে। বাস মালিকরা অবশ্য এতে আশ্বস্ত নন। তাঁদের অভিযোগ, অভিযান বন্ধ হওয়ার পরেই ফের যত্রতত্র টোটো চলাচল শুরু হয়ে যায়। মগরা, পাণ্ডুয়া, শ্রীরামপুর, গুড়াপ প্রভৃতি জায়গায় পরিবহণ ব্যবস্থার উপর প্রশাসনের কোনও নিয়ন্ত্রণই নেই।
হুগলি জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সংগঠনের কর্তা দেবব্রত ভৌমিক বলেন, ‘‘আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে। বাস চালিয়ে লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছি না। গোটা জেলায় বেআইনি গাড়ি অবিলম্বে বন্ধ করুক প্রশাসন। টোটোর রুট কার্যকর করা হোক।’’ এ ব্যাপারে আরটিও বলেন, ‘‘বুধবার অভিযান শতাধিক টোটো আটক করা হয়েছে। টোটোর রুট ঠিক করার প্রক্রিয়াও চলছে। এর পরেও যদি বাস মালিকরা বাস না চালান, সে ক্ষেত্রে প্রশাসন আইন মোতাবেক উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।’’
গত কয়েক মাস ধরে হুগলির নানা প্রান্তে ব্যাটারিচালিত টোটো গাড়ি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। পরিবেশ বান্ধব হলেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত টোটো রাস্তায় নেমে পড়ায় পরিবহণ ব্যবস্থায় তার প্রভাব পড়েছে যথেষ্ট। বাস মালিক বা অটোচালকরা অভিযোগ তুলতে থাকেন, এমনিতেই নানা রুটে অবৈধ নানা গাড়ি চলছে। তার উপরে নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে টোটো চলতে থাকায় তাঁদের লোকসান হচ্ছে। প্রতিবাদে আন্দোলনে নামেন তাঁরা। দু’পক্ষের মধ্যে বচসা-মারামারি হয়। অটো বা বাসের লোকজন পুলিশ-প্রশাসনের কাছে বহুবার দরবার করেন। তাতে অবশ্য তেমন ফল হয়নি। প্রথমে টোটোর ব্যাপারে কোনও নির্দেশিকা না থাকায় পরিবহণ দফতরও কার্যত হাত গুটিয়েই বসেছিল।
সম্প্রতি রাজ্য সরকার টোটোর ব্যাপারে নির্দেশিকা জারি করে। তাতে জানানো হয়, জিটি রোড, দিল্লি রোড বা জাতীয় সড়কে টোটো চলাচল নিষিদ্ধ। জেলা প্রশাসনের তরফে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে টোটোর ব্যাপারে নানা বিধিনিষেধ আরোপের কথা জানানো হয়। সংশ্লিষ্ট পুরসভাগুলিকে টোটোর রুট ঠিক করতে এবং তা নিয়ে প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। চন্দননগর পুর-কর্তৃপক্ষ টোটো নিয়ন্ত্রণ করায় সেখানে সমস্যা অনেকটাই মিটেছে। হুগলি-চুঁচুড়া, ভদ্রেশ্বর, চাঁপদানির মতো কয়েকটি পুরসভাও সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কিন্তু সর্বত্রতা হয়নি
বাস বা অটো চালকদের বক্তব্য, জিটি রোডে এবং অন্য গাড়ির রুটে টোটো চলতে না দিলেই সমস্যার সমাধান হবে অনেকটা। তার বদলে অলিগলিতে ঢুকে যাত্রীকে বাড়ির সামনেও নামিয়ে দিয়ে আসতে পারেন টোটোচালকেরা। বাস বা অটো-চালকদের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, বহু ক্ষেত্রেই শাসক দলের নেতাদের মদতে রাস্তায় প্রচুর টোটো নেমেছে। সেই কারণেই টোটোকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।