নভেম্বর শেষ হতে চললেও এখনও বোর্ড গঠনের কোনও কাজ হল হল না জেলা পরিষদের।
দু’জনে মাঝেমধ্যে জেলা পরিষদ ভবনে যান। ঘণ্টাকয়েক থাকেন। তারপর ফিরে যান। কাজ নেই।
প্রায় আড়াই মাস ধরে এটাই ‘রুটিন’ হয়ে গিয়েছে হুগলি জেলা পরিষদ সভাধিপতি মেহবুব রহমান এবং সহ-সভাধিপতি সুমনা সরকারের। কাজ করবেন কী করে! সহকর্মীরাই যে নেই।
নভেম্বর শেষ হতে চলল। অথচ, সভাধিপতি এবং সহ-সভাধিপতি নির্বাচন ছাড়া এখনও বোর্ড গঠনের কোনও কাজ হল হল না জেলা পরিষদের। ফলে, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা সংস্কার-সহ বহু উন্নয়নের কাজ থমকে গিয়েছে। কবে বোর্ড গঠন হবে, কবে থেকে জেলা পরিষদ পুরোদমে কাজ শুরু করবে সেই উত্তরও মিলছে না। অথচ, টাকা এসে পড়ে রয়েছে।
পরিস্থিতির পিছনে শাসকদলের একাংশ দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে দায়ী করেছেন। তাঁরা মনে করেন, ওই কাজিয়া না-মিটলে কোনও ভাবেই বোর্ড গঠন সম্ভব নয়। কারণ, বিভিন্ন পদের জন্য দলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর নেতারা নিজেদের ‘পছন্দের লোক’-এর নাম প্রস্তাব করছেন।
গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানতে চাননি জেলা তৃণমূল সভাপতি তপন দাশগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের পরেই রাজ্যে উৎসবের মরসুম শুরু হয়েছিল। তাই সব মিলিয়ে বোর্ড গঠনে কিছুটা দেরি হয়েছে। শীঘ্রই বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। ২৭ নভেম্বর দলের জেলা পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস বৈঠক ডেকেছেন। সেখানেই বোর্ড গঠনের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।’’ প্রায় একই বক্তব্য সভাধিপতিরও। জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনাও বলেন, ‘‘শীঘ্রই বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে।’’
গত ১৪ মে পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়। ভোটের ফল প্রকাশ হয় ওই মাসেরই ১৭ তারিখ। ভোটের অন্তত দেড় মাস আগে নির্বাচনী বিধি বলবৎ হওয়ায় জেলা পরিষদের নতুন সরকারি কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সব মিলিয়ে প্রায় ন’মাস হতে চলল সেই কাজ স্তব্ধ। ঠিকাদারেরা অপেক্ষায় রয়েছেন।
অনেকে আগে কাজ করেও এখনও টাকা পাননি বলে অভিযোগ। ফুরফুরা শরিফ এবং তারকেশ্বর উন্নয়ন পর্ষদের কাজও দীর্ঘদিন থমকে রয়েছে। ডানকুনির গুমোডাঙা থেকে রিষড়া পর্যন্ত জেলা পরিষদের একটি রাস্তার জন্য ৪৪ লক্ষ টাকা অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু জেলা পরিষদ গঠন না-হওয়ায় নিয়মমাফিক টেন্ডার কমিটি তৈরি করা যায়নি। তাই রাস্তার কাজও থমকে রয়েছে। একই অবস্থা আরও অনেক প্রকল্পেরও।
তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, সভাধিপতি যে হেতু নতুন কেউ হননি, তাই তা নিয়ে এ বার ততটা জলঘোলা হয়নি। কিন্তু জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ-সহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ পদগুলির দাবিদার অনেক। তা নিয়ে দলের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে চাপান-উতোর এখনও অব্যাহত। শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, সেখান থেকে কোনও মন্ত্রী বা দলের উচ্চ পদে যেহেতু কেউ নেই, তাই এ বার পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শ্রীরামপুর মহকুমারই জিতে আসা কোনও জেলা পরিষদ সদস্যকে করা হোক। বিষয়টি দলকে জানানো হলেও অনেকেই সেই প্রস্তাবে রাজি নন। সমস্যা রয়েছে অন্য কয়েকটি পদ নিয়েও।