দুর্গাপুরের ইঞ্জিনিয়ার ও তাঁর গাড়ির চালক খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যে ৬ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন বিচারক। আজ, শুক্রবার রায়দান হওয়ার কথা। তবুও আতঙ্ক কাটছে না রাজসাক্ষী প্রশান্ত অধিকারীর।
২০০৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি হুগলিতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে লাগোয়া দু’টি ভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ দু’টি দেহ উদ্ধার করে। একটি দেহ সিঙ্গুর ও অপরটি লাগোয়া দাদপুর থানা এলাকায় পড়েছিল। পরে জানা যায়, দুর্গাপুরের বাসিন্দা পেশায় ইঞ্জিনিয়ার জ্যোতিপ্রকাশ বিশ্বাস সেই সময় সিঙ্গুরে একটি প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন। সেই প্রকল্পের কাজেই তাঁর নিত্য যাতায়াত ছিল সিঙ্গুরে। সেই রাতে গাড়িতে করে বাড়ি ফেরার পথে একটি দুষ্কৃতী দলের কবলে পড়েন তাঁরা। গলায় গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করা হয় ওই ইঞ্জিনিয়ার ও তাঁর গাড়ির চালক কাঞ্চন দাসকে। পরে একটি নয়ানজুলির পাশে ফেলে দেওয়া হয় ওই ইঞ্জিনিয়ারের দেহ। ঘটনার গুরুত্ব বুঝে সরকার তদন্তভার জেলা পুলিশের থেকে নিয়ে রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের হাতে দেয়।
তদন্তকারীরা জানান, ওই দিন ইঞ্জিনিয়ার ও তাঁর চালক খুন হতেন না যদি দুষ্কৃতী দলটি অন্য একটি কাজে সফল হতো। কারণ তদন্তে তাঁরা জানতে পারেন, সেদিন ওই দুষ্কৃতী দলটি নবদ্বীপে এক বৃদ্ধের টাকার ব্যাগ লুঠের অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তারা জানতে পারে, ওই বৃদ্ধ ব্যাঙ্ক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা তোলেননি। এরপর দুষ্কৃতীরা দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে চলে আসে এবং গাড়ি আটক করে ওই ইঞ্জিনিয়ারকে খুন করে। ওই দুষ্কৃতী দলের মাথা প্রণব বর। প্রণব, প্রশান্ত-সহ সাত অভিযুক্ত ধরা পড়ে। ধৃতেরা উত্তর ২৪ পরগনার ঘোলা এলাকার বাসিন্দা। পরে প্রশান্ত রাজসাক্ষী হয়ে যাওয়ায় তিনি খালাস পান।
কিন্তু আতঙ্কের কারণ কী?
প্রশান্তের দাবি, মুক্তি পেলেও রাজসাক্ষী হওয়ায় তাঁর এবং পরিবারের উপর ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে প্রণবের লোকজন। ভয়ে তিনি বাড়ি ফিরতে পারেননি। বৃহস্পতিবার গোপন আস্তানা থেকে তিনি বলেন, ‘‘আমাকে রাজসাক্ষী হওয়া থেকে নিরস্ত করতে স্ত্রী নমিতার উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল। শেষে ২০১১ সালে ঠান্ডা পানীয়ে প্রচুর পরিমাণে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বেহুঁশ করে দেওয়া হয় নমিতাকে। এই কাজ করেছে প্রণবের লোকেরা। আরজিকরে নিয়ে গিয়েও স্ত্রীকে বাঁচানো যায়নি। তার পরে আমি প্রতিজ্ঞা করি, আমার উপর যাই হোক না কেন, আসামীরা যেন শাস্তি পায়।’’
বৃহস্পতিবার ওই খুনের ঘটনার রায়দানকে কেন্দ্র চন্দননগর আদালতে ছিল সাজ সাজ রব। আসামীদের ছিনতাই করা হতে পারে এমনটা পুলিশের কাছে খবর থাকায় আদালতের দু’টি গেটে বসানো হয় মেটাল ডিটেক্টর। ছিল প্রচুর সাদা পোশাকের পুলিশ। সরকারি আইনজীবী সুশান্ত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘আমি পুলিশ-প্রশাসনকে অনুরোধ করেছিলাম, আসামীদের যেন ভিন্ন ভিন্ন আদালতে রাখা হয়। এই মামলা করতে গিয়ে আমাকেও গত ১০ বছরে বারে বারে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে।’’ তিনি জানান, এ দিন ওই মমলার সব পক্ষের বক্তব্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক বিমলকান্তি ঘোষ শোনেন।