খাঁচাবন্দি করা হয়েছে বেজিকে। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
বেজির উপদ্রবে রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়েছে চুঁচুড়ার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের দেশবন্ধু পল্লিতে। দিন পাঁচেকের মধ্যে এখানকার একটি পুকুরের কাছে বেজির কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ জন। অভিযোগ, বন দফতরকে জানিয়েও কাজ হয়নি। স্থানীয় পুর-প্রতিনিধি (কাউন্সিলর) ইন্দ্রজিৎ দত্তের থেকে খবর পেয়ে পশুপ্রেমী চন্দন ক্লেমেন্ট সিংহ শনিবার সকালে ৫টি খাঁচা নিয়ে হাজির হন ওই এলাকায়। ঘণ্টা কয়েকের প্রচেষ্টায় সব ক’টি খাঁচাতেই একটি করে বেজি ধরা পড়ে। দুপুরে বন দফতরের দুই কর্মী এসে চন্দনের খাঁচা থেকে তাঁদের খাঁচায় নেওয়ার সময়ই ফাঁক গলে দু’টি বেজি পালায়। দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয়েরা। পরে অবশ্য নতুন করে ফাঁদ পাতা হলে দু’টি বেজি ধরা পড়ে।
বন সহায়ক বুলবুল মাঝি বলেন, ‘‘বেজি ধরার প্রশিক্ষণ আমাদের দেওয়া হয়নি। মানুষকে কামড়ায় সেটাও শুনিনি। আমাদের কাছে যে ধরনের সামগ্রী রয়েছে, তার ফাঁক গলে বেরিয়ে গেলে কী করার আছে!’’ এই ধরণের প্রাণী ধরার প্রশিক্ষণ বন সহায়কদের দেওয়া হয় না বলে মানছেন জেলা বন দফতরের এক কর্তা। পাশাপাশি যন্ত্রপাতির অভাবের কথাও তিনি স্বীকার করেছেন।
সত্তরোর্ধ্ব ঊষা দাসের পায়ে দাঁত বসিয়েছে বেজি। তিনি বলেন, ‘‘সামনের পুকুরে আগাছা জন্মেছে। সেখানেই বেজিগুলির বসবাস। কিন্তু কয়েকদিন ধরে বেজিগুলি অতর্কিতে আক্রমণ করছে।’’ তরুণী জয়ন্তী হালদারের বক্তব্য, ‘‘রীতিমত তেড়ে এসে হাতে-পায়ে দাঁত বসিয়ে দিচ্ছে। ঘণ্টা কয়েক অসম্ভব জ্বালা করছে। হাসপাতালে গিয়ে ইঞ্জেকশন নিতে হচ্ছে।’’ আর এক বাসিন্দা শান্তি দেবনাথের অভিযোগ, ‘‘পুরসভাকে পুকুর পরিষ্কারের কথা বলেও লাভ হয়নি। ফলে, বেজি তো বটেই, সাপের উপদ্রবও বাড়ছে।’’ ইন্দ্রজিৎ দ্রুত পুকুর পরিষ্কারের আশ্বাস দিয়েছেন।
চন্দন জানান, বেজি বা কুকুর যখন মানুষকে অতর্কিতে কামড়ানো শুরু করে, তখন বুঝতে হবে প্রাণীগুলি জলাতঙ্কে (হাইড্রোফোবিয়া) আক্রান্ত। হয় ক্ষিপ্ত বেজিটি কোনও জলাতঙ্ক আক্রান্ত প্রাণীকে কামড়েছে অথবা উল্টোটা হয়েছে। আক্রান্তদের ইঞ্জেকশন নেওয়া জরুরি। এখানে যে ক’টি বেজি ধরা হয়েছে তার মধ্যে আদৌ ক্ষিপ্ত বেজিটি আছে কি না, সেটাও প্রশ্ন। চলে আসার আগে তিনি পুকুর পাড়ে ফের খাঁচা পেতে আসেন।
এই ওয়ার্ডের বেগুনতলা এলাকায় বছর খানেক আগে বেজির উপদ্রব হয়েছিল। সে সময়ও কামড়ে জখম হয়েছিলেন ১০ জনেরও বেশি। দেশবন্ধু পল্লি সেখান থেকে কিছুটা দূরে।