জঙ্গল থেকে যখন-তখন লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। ফসল-সম্পত্তি নষ্ট করার পাশাপাশি মানুষকেও রেহাই দিচ্ছে না হাতির পাল। রাজ্যের পশ্চিমা়ঞ্চলে হস্তীবাহিনীর এমন উপদ্রব এখন প্রায় রোজকার ঘটনা। প্রতিরোধে নেমে মানুষের পাল্টা আক্রমণে মারাও যাচ্ছি হাতিরা। পশু-মানুষের এই যুদ্ধ সামলাতে নাজেহাল বনকর্তারা। সুরাহার পথ খুঁজতে তাই এ বার একটি জার্মান সংস্থার সঙ্গে সাহায্য নিচ্ছে রাজ্যের বন দফতর।
বন দফতরের কর্তারা বলছেন, শুধু এ রাজ্যেই নয়, গোটা দেশেই লোকালয়ে বন্যজন্তুর হামলার ঘটনা বাড়ছে। তাই গোটা দেশের ক্ষেত্রে এই সমস্যা সামলাতে ওই জার্মান সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রক। জার্মানির ওই সংস্থার এই ধরনের কাজ করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে। কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তির অঙ্গ হিসেবেই শনিবার কলকাতায় বৈঠক করতে এসেছিলেন জার্মান সংস্থার প্রতিনিধিরা। জার্মান সংস্থার সাহায্য নিচ্ছে ওড়িশা, বিহার, ছত্তীসগঢ়ও। এ দিনের বৈঠকে তারাও হাজির ছিল।
বন দফতর সূত্রের খবর, এ দিন চার রাজ্যের বনকর্তাদের কাছ থেকে সমস্যা শুনেছেন জার্মান বিশেষজ্ঞরা। কী ভাবে এই সমস্যা মেটানো যায়, তা নিয়ে মাস কয়েকের মধ্যেই প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেবে তারা।
রাজ্যের বনকর্তারা বলছেন, দক্ষিণবঙ্গের হাতির মতো উত্তরবঙ্গে চিতাবাঘ, গাউর বা ইন্ডিয়ান বাইসনও প্রায়ই লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। সেখানেও পশু-মানুষে লড়াইয়ে উভয়ের মৃত্যু হচ্ছে। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) প্রদীপ ব্যাস বলেন, ‘‘এ দিনের বৈঠকে হাতি সমস্যার পাশাপাশি চিতাবাঘ, গাউর ও সুন্দরবনের বাঘ নিয়েও সমস্যার কথা জানিয়েছি।’’
বন দফতরের একাংশ বলছেন, রাজ্যে এখন হাতির সমস্যাই সব থেকে বেশি প্রকট। যা সামলাতে রীতিমতো নাকানিচোবানি খেতে হচ্ছে বন দফতরকে। দিনের পর দিন হাতির হামলা বাড়তে থাকায় সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর তিরস্কারও সইতে হয়েছে বন দফতরের শীর্ষকর্তাদের। পরিস্থিতি সামাল দিতে হাতিকে খুনে বা ‘রোগ’ ঘোষণা করে নিকেশের পথেও হাঁটতে হয়েছে বন দফতরকে। একটি গুন্ডা হাতিকে পাকড়াও করে উত্তরবঙ্গে পাঠানো হলেও সংক্রমণের জেরে অসুস্থ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। ‘‘এই পরিস্থিতিতে হাতি সমস্যাকেই সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা,’’ বলছেন রাজ্য বন্যপ্রাণ শাখার এক শীর্ষ কর্তা।