ফাইল চিত্র
মাত্র উনিশ বছর বয়সে শিক্ষকতার চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই চাকরিতে তাঁর বেশি দিন মন বসেনি। নাকাশিপাড়ার মুড়াগাছা হাইস্কুলে মাত্র ছ’মাস শিক্ষকতা করার পর তিনি কো-অপারেটিভ ইন্সপেক্টর হিসাবে যোগ দেন। কিন্তু সেই চাকরিতেও বেশি দিন রইলেন না। এ বার সরাসরি ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস’। পরীক্ষায় পাশ করে সরাসরি শ্রীরামপুরের এসডিপিও হলেন অবনীমোহন জোয়ারদার।
শুরু হল এক নতুন পথচলা। নিজের যোগ্যতায় তার পর একের পর এক পদোন্নতি। আইপিএস অফিসার হিসাবে পদোন্নতির পর একাধিক গুরুত্বপূর্ণ জেলার এসপি হিসাবে দায়িত্ব সামলাতে থাকলেন। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাশাপাশি বীরভূম ও মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপারের পদ সামলানোর সময় তিনি দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। কলকাতা পুলিশেও দাপটের সঙ্গে কাজ করেছেন। বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রাইটার্স অভিযান করেছেন তখন তিনি ডিসি সেন্ট্রাল। নেত্রীকে তিনিই সে দিন বের করে এনেছিলেন রাইটার্স থেকে।
তাঁর পরিবারের দাবি, সে দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সঠিক ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে তিনি নাকি প্রতিবাদও করেছিলেন। যা নিয়ে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার তাঁর উপরে অসন্তুষ্ট হয়েছিল। তাঁদের অভিযোগ, শুধুমাত্র সেই কারণেই ৭ বছর তাঁর পদোন্নতি আটকে রাখা হয়েছিল। তাই তাঁকে ডিআইজি হিসাবেই অবসর নিতে হয়েছিল। বড় ছেলে অমিতাভ জোয়ারদার বলেন, “বাবা যখন দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার সেই সময় যাদবপুর কেন্দ্রে প্রার্থী হয়ে জিতেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আমি তখন ছোট। তা-ও স্পষ্ট মনে আছে, আমাদের আলিপুরের বাংলোয় দেখা করতে আসতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কাঁধে ঝোলা ব্যাগ নিয়ে। সেই সময় থেকে নেত্রীর সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ।” চাকরিজীবনের পরে সেই যোগাযোগের সূত্রেই তাঁর বিধায়ক হওয়া। মন্ত্রী হওয়া।
এক দিন তেহট্টের বেতাইয়ের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসেছিলেন তিনি। সেই উঠে আসার গল্পে আছে হার না মানা এক জেদি মানুষের গল্প। শিক্ষক থেকে দাপুটে পুলিশকর্তা, বিধায়ক থেকে মন্ত্রী। ছেলে অমিতাভ বলেন, “আজকের দিনের রাজনীতিতে বাবা বড় বেমানান ছিলেন। কারণ, সততার সঙ্গে কখনও তাঁকে আপস করতে দেখিনি।” শেষ জীবনে সল্টলেকের বাড়িতে শয্যাশায়ী হয়ে থাকতে হয়েছে। মস্তিষ্কের কঠিন অসুখের পাশাপাশি ভুগছিলেন কিডনির সমস্যাতেও। শুক্রবার ভোর চারটে নাগাদ শেষ হয়ে গেল তাঁর লড়াকু জীবনের গল্প। পারিবারিক ইচ্ছা অনুযায়ী শুক্রবার নবদ্বীপ শ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।