শহরাঞ্চল ছেড়ে ডেঙ্গি ঢুকে পড়েছে রাজ্যের গ্রামীণ এলাকাতেও।
কিন্তু ডেঙ্গিকে প্রধানত শহুরে রোগ বলেই ধরা হতো। শহরে মানুষ ঘরে ফুলের টব রাখেন, ফ্রিজ রাখেন, ফুলদানিতে ফুল সাজান, জল সরবরাহ কোথাও কোথাও সীমিত বলে বাড়িতে জল জমিয়ে রাখেন। আর সেখানেই ডিম পাড়ে এডিস ইজিপ্টাই মশা। গ্রামের জীবনযাত্রা অন্য রকম। তাই সেখানে ডেঙ্গির সংক্রমণ এত দিন নিয়ন্ত্রিত ছিল। তা হলে এখন গ্রামাঞ্চলেও কেন হানা দিচ্ছে ডেঙ্গি? পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এডিস ইজিপ্টাই মশা এখন বাড়ির বাইরে রাখা পাত্রে জমানো পরিষ্কার জলেও ডিম পাড়ে। তাই ডেঙ্গির সঙ্গে গ্রাম-শহরের ব্যবধান কমে যাচ্ছে।
পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, দুই দিনাজপুর এবং বর্ধমানের গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গি রোগী মিলেছিল আগেই। এ বার ডেঙ্গি রোগী মিলল নদিয়ার গ্রামাঞ্চলেও। গত তিন দিনে নদিয়ায় ৫ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে বলে জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর। আক্রান্তেরা শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। বাঁকুড়ায় নতুন করে আরও ছ’জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। আক্রান্তেরা গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দা।
স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, বর্ধমানের খণ্ডঘোষ থানার বেরু গ্রামের এক বাসিন্দাও ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি রয়েছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৬। মেদিনীপুর শহরেও ৬ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। গড়বেতা-৩ ব্লকে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি, ২২ জন। খড়্গপুর পুর এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা তিন।
হাওড়া হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া ৬৭ জন রোগীর মধ্যে ৩১ জনের রক্তে মিলেছে ডেঙ্গির জীবাণু। এ দিন পর্যন্ত এই জেলায় মোট ১৪৪ জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গেল। তবে হাওড়ার শহুরে এলাকাতেই আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী জানান, এ দিন ১৮৯ জনের রক্তের নমুনায় ডেঙ্গি মিলেছে। এই নিয়ে গোটা রাজ্যে এ দিন পর্যন্ত ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ২ হাজার ৩৬০।
যেখানে ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে, সেখানে কিটের অভাব প্রকট হচ্ছে। স্বাস্থ্য ভবন দায় চাপাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজ (নাইসেড)-এর ঘাড়ে। কারণ, তাদের মাধ্যমেই রাজ্য স্বাস্থ্য ডেঙ্গির জীবাণু ধরার কিট পায়। নাইসেড অবশ্য এই অভিযোগ মানতে নারাজ। সংস্থার অধিকর্তা শান্তা দত্ত বৃহস্পতিবার বলেন, স্বাস্থ্য দফতরকে কেন্দ্র সরাসরি ডেঙ্গি পরীক্ষার কিট দেয় পুণের ন্যাশন্যাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি (এনআইভি) থেকে। স্বাস্থ্য দফতর এ বার এনআইভি থেকে ১০০ কিট চেয়েছিল। তখন এনআইভি তাদের জানিয়ে দেয়, তারা কিট উৎপাদক সংস্থা নয়, গবেষণা সংস্থা। তাদের পক্ষে এত কিট দেওয়া সম্ভব নয়।
শান্তাদেবীর কথায়, ‘‘আমরা নিজেরা কিট কিনে স্বাস্থ্য দফতরের সব পরীক্ষা করে দিয়ে ওদের সাহায্য করছি। কিন্তু সরাসরি কিট কিনে আমরা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে দিতে পারি না। ওদের কিট কিনে দিতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার।’’