জুলুম: গাড়ি আটকে চলছে কালীপুজোর চাঁদা আদায়। —নিজস্ব চিত্র।
দ্রুত গতিতে ছুটে যাওয়া গাড়ির সামনে কোথাও রাস্তার মাঝে শুয়ে পড়ছেন যুবক। কোথাও আবার বনেটে পড়ছে লাঠির ঘা। গাড়ি থামলেই জোর-জবরদস্তি শুরু। কুড়ি-তিরিশ টাকা না দিলে ছাড়া পাওয়ার উপায় নেই।
বর্ধমান-সিউড়ি ২বি জাতীয় সড়কে গাড়ির চালক ও যাত্রীদের এমন বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে অন্তত বার কুড়ি। কালীপুজোর চাঁদার নামে এ ভাবেই টাকা আদায় করা হচ্ছে গুসকরা থেকে ভেদিয়া পর্যন্ত রাস্তায়। কোনও জায়গায় দল বেঁধে মহিলারা, কোথাও যুবকেরা গাড়ি আটকাচ্ছেন। বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, ‘‘ওই এলাকা থেকে জোর করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জুলুম রুখতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
যাত্রীদের অভিযোগ, শুধু ভেদিয়ার কাছেই দেড় কিলোমিটার পথে বাগবাটি মোড়, পেট্রোল পাম্প, বাসস্টপ-সহ দশ জায়গায় চাঁদা তোলা হচ্ছে। রাস্তার পাশে রাখা পুলিশের ব্যারিকেডকে কাজে লাগিয়ে গাড়ি আটকানো হচ্ছে। মহিলারা গাড়ি আসতে দেখলেই রাস্তার মাঝে জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছেন। কিছু দূরে লাঠি হাতে ঘুরছে জনা কয়েক যুবক। কিছু চাঁদা আদায়কারী কালীপুজোর নামে রসিদ দিচ্ছে। অনেকের তেমন কোনও রসিদ নেই।
বাগবাটি মোড়ে একটি ক্লাবের হয়ে চাঁদা আদায়ে ব্যস্ত এক যুবকের বক্তব্য, ‘‘ভেদিয়ায় জমজমাট কালীপুজো হয়। প্রচুর টাকা খরচ হয়। সে জন্যই রাস্তায় চাঁদা তুলতে হচ্ছে।’’ আর এক জায়গায় এক মহিলা বলেন, ‘‘আমরা খেতমজুরের কাজ করি। কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে চাঁদা আদায় করছি। আমাদের পুজোর কথা এলাকায় সবাই জানে। তাই রসিদ ছাড়াই চাঁদা তুলছি।’’
পরপর চাঁদার জুলুমের মুখে পড়ে নাজেহাল যাত্রীরা। কলকাতা থেকে নিয়মিত শান্তিনিকেতন যাতায়াত করা এক যাত্রীর কথায়, ‘‘এই রাস্তায় চাঁদার জুলুম নতুন নয়। কিন্তু কালীপুজোর দু’সপ্তাহ আগে থেকেই এমন অত্যাচার! পুজোর ঠিক আগে কী পরিস্থিতি হবে, ভেবেই আতঙ্ক হচ্ছে!’’ এক ডাম্পার চালক বলেন, ‘‘এক গ্রামেই দশ জায়গায় চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। টাকা না দিলে গাড়িতে লাঠির বাড়ি মারছে, চাকার সামনে শুয়ে পড়ছে। দুর্ঘটনারও আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।’’ পুলিশ জানায়, শনিবার চাঁদা আদায়ের সময়ে সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই জুলুম বন্ধে আউশগ্রাম থানা অভিযান চালাচ্ছে।