কেউ মাস্ক পরেননি। কেউ বা নামিয়ে রেখেছেন। করোনা-বিধি শিকেয় তুলে মাছবাজারে ভিড়। রবিবার মুচিবাজারে। ছবি: সুমন বল্লভ
হাজারের ঘরের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে সে। কত জনকে ঘায়েল করে অতিমারির বাঘ কোথায় গিয়ে থামবে, তা এখনও নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছেন না কেউই। চিকিৎসক সকলের সকলেরই আক্ষেপ, “মানুষ যদি একটু নিজেদের অনুশাসনে বেঁধে রাখতে পারতেন, তা হলে হয়তো ফের আঘাত হানতে পারত না অতিমারি।”
পুজোর কেনাকেটা ও দ্বিতীয়া থেকে রাস্তার প্যান্ডেল হপিংয়ের ভিড় দেখে চিকিৎসক ও সংক্রমণ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা ছিল, পুজো শেষ হলেই অতিমারির বাঘ নখ-দাঁত বার করবে। হয়েছেও তাই। বঙ্গের মহোৎসব মিটতেই আক্রমণাত্মক ভূমিকায় নেমে পরেছে কোভিড ভাইরাস। চিকিৎসকদের কথায়, ‘‘এ বার অপেক্ষা দৈনিক সংক্রমণ এক হাজারের ঘরে প্রবেশের। আর সেটা হয়তো কয়েক দিনের মধ্যেই হয়ে যাবে। তবে এ বার কোথায় গিয়ে সংখ্যাটা থামবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়।’’ রবিবার স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৯৮৯ জন।
গত শুক্র ও শনিবারের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ছিল যথাক্রমে ৮৪৬ এবং ৯৭৪ জন। রবিবারের বুলেটিনে সেই সংখ্যা আরও বেড়ে হাজারের একেবারে দোরগোড়ায়। সংক্রমণের পারদ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হতে দেখে আতঙ্কিত চিকিৎসকেরাও। অবশ্য এ হেন পরিস্থিতির জন্য এক শ্রেণির মানুষের অনিয়ন্ত্রিত উচ্ছ্বাসকেই দায়ী করছেন সকলে। স্বাস্থ্য শিবিরের একাংশের কথায়, “রবিবার যে সংখ্যা দেখা যাচ্ছে, সেটি আগের দিন অর্থাৎ শনিবারের আক্রান্তের হিসেব। কত তাড়াতাড়ি সংক্রমণ এক হাজারের ঘর পেরিয়ে দুই হাজারের ঘরে পৌঁছবে, তা এখন সময়ের অপেক্ষা।”
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, টিকা নেওয়া লোকজন এবং টিকা না নেওয়া লোকজনের কোভিডের মধ্যে উপসর্গের পার্থক্য রয়েছে। টিকা নেওয়া লোকজনের অধিকাংশ উপসর্গহীন, আবার অনেকের মৃদু উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। তাই করোনা পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি। রাজ্যের কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের উপদেষ্টা চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীর কথায়, “ছাইয়ের নীচে চাপা আগুন কিন্তু নিভে যায়নি। সেটা জ্বলছে এখনও। কখন তা বেরিয়ে সব ছারখার করে দেবে, তা কেউ জানেন না। তাই পুজোর সময় যা করেছেন, তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। এখন যাঁদেরই অত্যন্ত সামান্য উপসর্গ দেখা দেবে, তিনি সচেতনতার পরিচয় দিয়ে অন্তত পরীক্ষাটি করান।” কিন্তু একশ্রেণির মানুষ এখনও সেই পরীক্ষা থেকে দূরে থাকছেন বলে অভিযোগ চিকিৎসক মহলের একাংশের। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের চিকিৎসক অরুনাংশু তালুকদারের কথায়, “বহু রোগী আসছেন, যাঁদের মৃদু উপসর্গ দেখে নিশ্চিত তিনি কোভিড আক্রান্ত। কিন্তু পরীক্ষা করাতে বললেই আর আসছেন না। পরীক্ষা করিয়ে যদি পজ়িটিভ ধরা পরে, তা হলে রোগীকে আইসোলেশনে রেখে রোগ ছড়ানোকে আটকানো সম্ভব।” এক চিকিৎসক জানাচ্ছেন, রাতে বিধিনিষেধ চালু করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সারা দিনে যে হারে রাস্তায়, বাজারে কোভিড বিধিকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে লোকজনের ভিড় বাড়ছে, তাতে কিন্তু সংক্রমণ ছড়ানোর কিছু বাকি থাকছে না। ওই চিকিৎসকের কথায়, “গত দেড় বছরে করোনায় আর্থসামাজিক অবস্থা যে জায়গায় পৌঁছেছে, তাতে লকডাউন করা সম্ভব নয়। সেই সুযোগে প্রয়োজন ছাড়াও মানুষও বেরোচ্ছেন। কেউ শপিং মলে যাচ্ছেন, তো কেউ আবার ঘুরতে যাচ্ছেন। মৃদু উপসর্গ থাকলে, সেটাকে ভাইরাল বলে নিজেই ভেবে নিচ্ছেন। আর যাঁরা উপসর্গহীন তাঁরা তো নিজের অজান্তেই সংক্রমণ ছড়াচ্ছেন।”