প্রতীকী ছবি।
পার্ক সার্কাসের বেসরকারি শিশু হাসপাতাল থেকে মেডিক্যাল কলেজ। দূরত্ব বড় জোর ন’কিলোমিটার। সেটুকু যাওয়ার জন্য চাওয়া হল ন’হাজার টাকা! শুধু তাই নয়, ওই টাকা দিতে না-পারায় কোভিড আক্রান্ত এক ন’বছরের বালক এবং ১০ মাসের এক কোভিড আক্রান্ত শিশুকে অক্সিজেন মাস্ক খুলে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল এক বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স-চালকের বিরুদ্ধে।
হাসপাতালে পৌঁছনোর জন্য অ্যাম্বুল্যান্স পেতে প্রতি দিন রাজ্যের কোনও না কোনও প্রান্তে হয়রানির শিকার হচ্ছেন কোভিড রোগীর পরিজন। তারই সাম্প্রতিক নিদর্শন শুক্রবার রাতের এই ঘটনা। বালকের বাবার কথায়, ‘‘আমাদের কারও পক্ষে ন’হাজার টাকা দেওয়া সম্ভব ছিল না। অক্সিজেনের মাস্ক খুলে দেওয়ার পরে ছেলে বলছে, বাবা কষ্ট হচ্ছে। সে সব দেখেও ওদের মন গলেনি। আর একটা অ্যাম্বুল্যান্স না-পাওয়া পর্যন্ত ওদের অপেক্ষা করতে বলেছিলাম। ওরা তখন বলল, ওয়েটিং চার্জ লাগবে!’’
শুক্রবার বিকেলে ওই ন’বছরের বালক এবং ১০ মাসের শিশুর কোভিড ধরা পড়ে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তর করার জন্য রাতে ওই অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করেন বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হুগলির খানাকুলের বাসিন্দা ওই বালকের বাবা জানান, পার্ক সার্কাসের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে যাওয়ার জন্য ন’হাজার টাকা চেয়েছিল বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সটি! আইসিইউয়ের পরিষেবা যুক্ত অ্যাম্বুল্যান্সে ওঠার পরে বালকের মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো হয়। দশ মাসের শিশুকে নিয়ে তার মা-ও অ্যাম্বুল্যান্সে ওঠেন। কিন্তু ন’হাজার টাকা দিতে না পারায় দুই রোগী-সহ তাঁদের পরিজনকে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
আধ ঘণ্টা পরে অক্সিজেনের সুবিধাযুক্ত আর একটি অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করেন বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কোভিড রোগী নিয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ যাওয়ার জন্য প্রথমে ছ’হাজার টাকা চান দ্বিতীয় অ্যাম্বুল্যান্সের চালক। দর কষাকষির পরে সাড়ে চার হাজার টাকা চান চালক। দু’হাজার টাকা দিয়ে শিশুটির বাবাকে সাহায্য করেন বেসরকারি হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসক শাশ্বত বর্মা। এক রোগীর পরিজনও এক হাজার টাকা দেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
ওই বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি শনিবার জানান, সোমবার ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে পার্ক সার্কাসের শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ন’বছরের বালক। পর দিন নিউমোনিয়া এবং খিঁচুনির উপসর্গ নিয়ে ১০ মাসের শিশু ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়। পরবর্তী ক্ষেত্রে শিশুটির একই সঙ্গে ডেঙ্গি এবং কোভিড ধরা পড়ে। সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে আইসোলেশন ব্লকেও আইসিইউয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে দু’জনের চিকিৎসা চলছিল। কোভিড ধরা পড়ার পরে তাদের জেনারেল ওয়ার্ডে নিয়ে এসে দ্রুত মেডিক্যাল কলেজে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রভাসপ্রসূন বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হলে তারাই মেডিক্যাল কলেজে দু’জনের শয্যার ব্যবস্থা করে। অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থাও করবে বলেছিল। কিন্তু দু’জনকে যাতে দ্রুত কোভিড হাসপাতালে স্থানান্তর করা যায়, সে জন্য বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স ডাকা হয়।’’ সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স আসতে সময় লাগবে, এ কথা ভেবে ওই পদক্ষেপ করা হয় বলে বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে দাবি করা হয়।
দুই আক্রান্তের পরিজনের এই অভিজ্ঞতা নতুন নয়। কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, সোমবার বেলেঘাটার বাসিন্দা এক কোভিড আক্রান্তের পরিজন অ্যাম্বুল্যান্সে শহরের একাধিক হাসপাতালে ঘোরে শয্যার খোঁজে। শেষ পর্যন্ত রাতে সল্টলেকে বেসরকারি কোভিড হাসপাতালে ওই রোগী ভর্তি হন ঠিকই। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্স চালককে দিতে হয় ৩০ হাজার টাকা! সম্প্রতি আর একটি ঘটনায় অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার গলদে রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছিল। সে ক্ষেত্রে অ্যাম্বুল্যান্সেই পক্ষাঘাতগ্রস্ত কোভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ার পরও পরিস্থিতির কেন বদল ঘটছে না, এ দিন সেই প্রশ্ন তুলেছেন বালকের বাবা।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী এ বিষয়ে বলেন, ‘‘সবটা স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্ব নয়। বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এবং পরিবহণ দফতর কার্যকর পদক্ষেপ করতে পারে। সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা যাতে সকলে পান, তার জন্য করণীয় সবই করা হচ্ছে।’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)