রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় করোনার প্রতিষেধক দেওয়ার পর্ব শুরু হয়েছে শনিবার। তারই সঙ্গে সঙ্গে যে প্রশ্নটি উঠে এসেছে তা হল, কতটা সুষ্ঠু ভাবে প্রতিষেধক-বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা সম্ভব? কারণ, বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের ব্যবস্থাপনায় যে খামতি রয়েছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে কোভিড-বর্জ্য। তাই প্রতিষেধক-বর্জ্যের ক্ষেত্রে তার পুনরাবৃত্তি আটকানোর জন্য সতর্ক পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর।
স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, গত মাসেই তাদের তরফে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বীকৃত ছ’টি ‘কমন বায়োমেডিক্যাল ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট ফেসিলিটি’-র (সিবিডব্লিউটিএফ) সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করা হয়েছে। প্রতিষেধক-বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণ কী ভাবে হবে, তার রূপরেখা তৈরি করা হয় ওই বৈঠকে। প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ‘কোভিড- ১৯ ভ্যাকসিনস অপারেশনাল গাইডলাইন্স’ মেনেই প্রতিষেধক-বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে।’’
যদিও পরিবেশবিদদের বক্তব্য, সাধারণ ভাগাড়েই বিভিন্ন সময়ে কোভিড-বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। সেখানে প্রতিষেধক দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত লক্ষ লক্ষ ইঞ্জেকশনের প্রক্রিয়াকরণ কতটা সুষ্ঠু ভাবে হবে, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। ইন্দিরা গাঁধী জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অব হেলথ সায়েন্সেস’-এর প্রাক্তন ডিরেক্টর তথা ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব হসপিটাল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট’-এর প্রেসিডেন্ট অশোক আগরওয়ালের কথায়, ‘‘প্রতিষেধক প্রয়োগের গোটা কর্মসূচিতে যত সংখ্যক সুচ ব্যবহার করা হবে, তা ঠিক মতো সামলানো প্রয়োজন। না হলে প্রতিষেধক দেওয়ার ফল হিতে বিপরীত হতে পারে।’’ কী ভাবে কয়েক লক্ষ সিরিঞ্জ সামলানো যাবে, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন অশোকবাবু। তিনি জানাচ্ছেন, ইঞ্জেকশনের যে প্লাস্টিকের অংশটি থাকে, সেটির পুনর্ব্যবহার (রিসাইকল) সম্ভব। আর সুচটি মাটির মধ্যে গভীর গর্ত করে পুঁতে দিতে হবে। আর এক পরিবেশবিদের কথায়, ‘‘প্রতিষেধক দেওয়ার সময়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে একটিই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে যে, ‘ওয়ান নিডল, ওয়ান সিরিঞ্জ, ওনলি ওয়ান টাইম’। অর্থাৎ, একটি সিরিঞ্জ এক বারই ব্যবহার করা যাবে।’’
মানতে হবে
• প্রতিষেধক দেওয়ার আগে ও পরে সাবান-জল বা স্যানিটাইজ়ার দিয়ে হাত পরিষ্কার।
• যিনি প্রতিষেধক দিচ্ছেন, তাঁর ত্বকে কোথাও কাটা থাকলে তা ঢাকতে হবে।
• ত্বকের কাটা জায়গায় প্রতিষেধক দেওয়া যাবে না।
• অটো-ডিজ়েবল সিরিঞ্জ (এডি সিরিঞ্জ) ব্যবহার করতে হবে।
• প্রত্যেকের জন্য নতুন সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে।
• প্যাকেজিং ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বা মেয়াদ-উত্তীর্ণ এডি সিরিঞ্জ ব্যবহার করা যাবে না।
• প্রতিষেধক দেওয়ার পরে হাব-কাটার দিয়ে সিরিঞ্জের হাব কাটতে হবে।
• পাঙ্কচার-প্রুফ কন্টেনারে সুচ ফেলতে হবে।
• সিরিঞ্জের প্লাস্টিক অংশ লাল রঙের ব্যাগে, ব্যবহৃত ‘কটন সোয়াব’ হলুদ ব্যাগে ফেলতে হবে।
• ব্যবহৃত, অব্যবহৃত, আংশিক ব্যবহৃত সমস্ত প্রতিষেধকের ভায়াল কোল্ড স্টোরেজ পয়েন্টে পাঠাতে হবে।
(সূত্র: কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক)
স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, প্রতিষেধক দেওয়ার সময়ে ও পরে কী কী সতর্কতা পালন করতে হবে, সেই মর্মে সব রাজ্যকে জানিয়ে
দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল ‘সেফ ইঞ্জেকশন প্র্যাক্টিস’ বা নিরাপদে ইঞ্জেকশনের ব্যবহার। যাতে প্রতিষেধক দেওয়ার সময়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কোনও ভাবে কোনও ধরনের সংক্রমণের শিকার না হন। মন্ত্রকের তরফে প্রত্যেককে প্রতিষেধক দেওয়ার আগে ও পরে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্মীকে সাবান-জল দিয়ে ভাল করে হাত ধোওয়া বা ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল- যুক্ত স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি প্রতিষেধক দেওয়ার সময়ে ‘অটো-ডিজ়েবল সিরিঞ্জ’ (এডি সিরিঞ্জ) ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। এই ধরনের সিরিঞ্জ ব্যবহারের পরপরই সেটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ‘ব্লক’ হয়ে যায়। ফলে তা দ্বিতীয় বার ব্যবহার করা যায় না।
মন্ত্রকের এক কর্তা জানাচ্ছেন, প্রতিষেধক দেওয়ার পরে এডি সিরিঞ্জের হাব (যে অংশটির মাধ্যমে সুচ ও ইঞ্জেকশনের প্লাস্টিকের অংশটি যুক্ত থাকে) কেটে ফেলতে হবে হাব-কাটার দিয়ে। তার পরে ওই সুচ ‘পাঙ্কচার-প্রুফ কন্টেনার’ এর মধ্যে ফেলতে হবে। প্লাস্টিকের অংশটি রাখতে হবে লাল ব্যাগের মধ্যে। ওই কর্তার কথায়, ‘‘ব্যবহৃত, অব্যবহৃত, আংশিক ব্যবহৃত সব প্রতিষেধকের ভায়ালই ঠিক প্রক্রিয়াকরণের জন্য কোল্ড চেন পয়েন্টে পাঠাতে হবে।’’ আর রাজ্যের স্বীকৃত সিবিডব্লিউটিএফ ‘মেডিকেয়ার এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড’-এর এক কর্তা বলছেন, ‘‘এত বড় কর্মকাণ্ড এটা। ফলে প্রতিটি ধাপে যাতে সতর্কতা বজায় থাকে, সে দিকেই নজর দেওয়া হচ্ছে।’’