মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
শিশু-মনে দেশপ্রেম জাগাতে শিশু দিবসের দিনটিকে বেছে নিল রাজ্য সরকার। ১৪ নভেম্বর দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর জন্মদিনটি দেশ জুড়ে শিশু দিবস হিসাবে পালিত হয়। এ বারেই প্রথম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দিনটিকে অন্য মাত্রা দিতে চাইছে।
রাজ্যের প্রতিটি মহকুমায় শিশু ও কিশোর পড়ুয়াদের নিয়ে উৎসব করবে সরকার। পোশাকি নাম হবে ‘স্বদেশ ও স্বজন’। নবান্নের এক কর্তা জানান, এত দিন একটি শিশুমেলা ও শিশু চলচ্চিত্র উৎসব করে দিনটি উদ্যাপন করা হতো। এ বার উৎসবকে মহকুমা স্তরে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
কী হবে উৎসবে? রাজ্যে শিশু দিবস পালনের দায়িত্বে থাকা শিশু কিশোর অ্যাকাডেমি সমস্ত মহকুমাকে ‘স্বদেশ ও স্বজন’-এর সবিস্তার কর্মসূচি পাঠিয়েছে। তাতে দু’টি প্রতিযোগিতার কথা বলা হয়েছে। একটি ৫ থেকে ১০ বছরের পড়ুয়াদের জন্য। দেশের বিভিন্ন বরেণ্য মানুষের ‘চরিত্র’ হয়ে তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে কোনও বিশেষ ঘটনা চার মিনিট অভিনয় করে দেখাতে হবে। যেমন— নবাব সিরাজউদদৌল্লা, ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈ, মোহনদাস কর্মচন্দ্র গাঁধী, সুভাষচন্দ্র বসু, বিরসা মুন্ডা, চৈতন্যদেব, মাদার টেরিজা, বিধানচন্দ্র রায়, চারণকবি মুকুন্দ দাসের মতো ৩০টি নামের তালিকা। আর একটি প্রতিযোগিতা হবে ১১ থেকে ১৬ বছরের কিশোরদের জন্য। তারা তাৎক্ষণিক বক্তৃতায় অংশ নেবে। এখানেও স্বাধীনতা আন্দোলনের কোনও ঘটনায় উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের অবদান সম্পর্কে চার মিনিট বলতে হবে। প্রতি মহকুমায় অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদের শংসাপত্র এবং প্রথম তিন স্থানাধিকারীকে পুরস্কৃত করবে শিশু কিশোর অ্যাকাডেমি। বামেদের অবশ্য বক্তব্য, রাজনৈতিক উদ্দেশেই এই কাজ করা হচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য সমালোচনা মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, ‘‘এটা ভাল উদ্যোগ। ইতিহাস বিকৃত না করে মনীষীদের জীবন সম্পর্কে জানা আমাদের কর্তব্য।’’ শিশু-কিশোর অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান, সাংসদ অর্পিতা ঘোষ বলেন, ‘‘সম্প্রীতির ভাবনা থেকেই এই উৎসব। আমরা যাঁদের মনীষী বলে মনে করি, তাঁদের সম্পর্কে এখনকার প্রজন্ম ঠিক কতটা জানে, সেটা একটু জেনে নিতে চাইছি। কারণ, দেশে এখন এক ধরনের উন্মাদনা ছড়িয়ে বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে— এটাই ভারত। কিন্তু কবীর, চৈতন্য, বিরসা মুন্ডাদেরও দেশ ভারত। সেটাই নতুন প্রজন্মকে জানাতে চাই।’’
এ ধরনের উৎসব ও প্রতিযোগিতা ইতিবাচক বলেই মনে করছেন রাজ্যের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সংগঠনগুলি। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘বরেণ্য ব্যক্তি ও মনীষীদের জীবনধারা ও কাজ সম্পর্কে শিশু-কিশোরদের উৎসাহিত করাটা ভাল কাজ। তবে সেটা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রচারই যাতে মুখ্য হয়ে না ওঠে— সেটাও দেখা দরকার।’’