ধৃত কাদের মোল্লা।
আড়াই বছরের ছেলেকে ঘরে রেখে রান্নাঘরে কাজ করছিলেন মা। খানিক পরে ছেলেকে না দেখে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। আধ ঘণ্টার মধ্যেই দু’লক্ষ টাকা চেয়ে ফোন আসে বাবা মাজেদ আলমের কাছে। শিশুটির সন্ধান চলার সময়ে মাজেদের বাড়ির কলে তাঁরই এক কর্মচারীকে গায়ের কাদা ধুতে দেখে সন্দেহ হয় গ্রামবাসীদের। তাকে জেরা করে পিছনের পুকুর থেকে উদ্ধার হয় বস্তাবন্দি শিশুর দেহ।
রবিবার সন্ধ্যায় উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের কোরাপাড়া গ্রামে দক্ষিণপাড়ার ঘটনা। রাতেই কাদের মোল্লা নামে ওই কর্মচারী গ্রেফতার হয়। সোমবার তার সাত দিনের পুলিশ হেফাজত হয়েছে। কাদেরকে জেরা করে শিশুর অপহরণ ও খুনের যে ছক জানা গিয়েছে, তাতে বিস্মিত পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শিকড়া-কুলিনগ্রাম পঞ্চায়েতের পোশাক ব্যবসায়ী মাজেদের সঙ্গে ব্যবসাসূত্রেই দীর্ঘদিন রেষারেষি ওই গ্রামেরই বাসিন্দা তোফাজ্জেল হোসেন মণ্ডলের। অভিযোগ, ব্যবসায় পিছিয়ে পড়ে মাজেদের ছেলে তৌফিককে অপহরণের ছক করে তোফাজ্জেল। মাস তিনেক আগে তার কর্মী কাদেরকে মাজেদের কাছে পাঠায়। তোফাজ্জেল তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে, এই বলে মাজেদের কারখানায় কাজ নেয় কাদের। দ্রুত মাজেদের পরিবারের ‘কাছের লোক’ হয়ে ওঠে বছর পঁচিশের ওই যুবক।
জেরায় কাদের জানায়, রবিবার সন্ধ্যায় শিশু তৌফিককে বাড়ি থেকে তুলে তোফাজ্জেলের কারখানায় নিয়ে যায় কাদের। বাচ্চাটির কান্না না থামায় বাথরুমে নিয়ে গিয়ে গলা টিপে তোফাজ্জেল খুন করে। দেহ বস্তায় ভরে, তাতে কিছু ইট ভরে পুকুরে ফেলে দেয়। তার পর মাজেদকে ফোন করে দুই লক্ষ টাকা দাবি করে তারা।
শিশুটির অপহরণের খবর চাউর হতেই তার খোঁজ শুরু হয়। সে সময় এক প্রতিবেশী দেখেন, মাজেদের বাড়ির কলে হাত-পা ধুচ্ছে কাদের। কাদা লাগল কী করে, সে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি সে। গ্রামবাসীরা মারধর শুরু করলে সে সব কথা বলে দেয়। উদ্ধার হয় বস্তাবন্দি দেহ।
ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ বসিরহাট জেলা হাসপাতালে দেহ পাঠিয়েছে। তোফেজ্জেল পলাতক। পুলিশ তার পরিবারের দুই মহিলা এবং তার কারখানার তিন কর্মীকে আটক করেছে। বাড়ি এবং কারখানা সিল করেছে। এলাকায় পুলিশ পিকেট বসেছে। খুন, প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মামলা করে তদন্ত করছে পুলিশ।
মাজেদ বলেন, ‘‘তোফাজ্জেল ব্যবসায় পিছিয়ে পড়ে এমন কাণ্ড ঘটাবে, স্বপ্নেও ভাবিনি। গত ক’মাসে আপন হয়ে-যাওয়া কাদের আমার ছেলেকে খুন করবে, তা-ও কল্পনা করতে পরিনি।’’ তবে তোফাজ্জেলের মায়ের দাবি, পারিবারিক বিবাদের কারণে ওই শিশু খুন হয়েছে।