তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় এখন চিটফান্ড তদন্ত। সে জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকলস্কর আনা হয়েছে। কিন্তু তাঁরা বসবেন কোথায়? তথ্য ঘেঁটে তদন্তের কাজ এগোবেন কী করে? তাই সল্টলেকের পূর্ত ভবনে আরও চারটি ঘর চেয়ে রাজ্যকে চিঠি দিল সিবিআই।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার চিটফান্ড সংক্রান্ত মামলার দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-অধিকর্তার এই আর্জি চিন্তা বাড়িয়েছে নবান্নের। কারণ, প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাংশের মতে, এই চিঠির মাধ্যমে রাজ্যকে বিশেষ বার্তা দিল সিবিআই। রোজ ভ্যালি তদন্তে তৃণমূলের দুই সাংসদ তাপস পাল ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর প্রায় দেড় মাস তারা চুপচাপ রয়েছে। যার জেরে বিরোধীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর বোঝাপড়ার অভিযোগ তুলেছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে চিটফান্ড তদন্তে আরও লোক আনতে চাওয়াকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই করছেন তাঁরা। সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে বিধানসভার ভোট মিটলেই ফের নড়েচড়ে বসবে সিবিআই। ফলে ১১ মার্চের পর আরও কয়েক জন নেতা-নেত্রীকে তলব করা হবে বলে মনে করছে প্রশাসনেরই একাংশ।
নবান্নের এক আধিকারিক এ দিন বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী কালিম্পং থেকে ফিরলে বিষয়টি তাঁকে জানানো হবে। তার পর তিনি যেমন নির্দেশ দেবেন, তেমনই ব্যবস্থা হবে।
রাজ্য কি সিবিআই-এর আর্জি নাও মানতে পারে?
তদন্তকারীর সংস্থার বক্তব্য, সেটা সম্ভব নয়। কারণ, চিটফান্ড তদন্ত হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। তদন্তের কাজে যা যা প্রয়োজন, তার ব্যবস্থা করে রাজ্য সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতার নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। সারদা সংক্রান্ত প্রায় সাড়ে তিনশো মামলার ভার যখন সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছিল বিধাননগর পুলিশ, তখন রাজ্যের কাছে এক হাজার সাব-ইন্সপেক্টর চেয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। চাওয়া হয়েছিল বেশ কিছু গাড়িও। সেই দাবি পুরো না মানলেও কিছু কর্মীকে সিবিআইয়ের কাছে ডেপুটেশনে পাঠাতে বাধ্য হয়েছিল নবান্ন। কিছু গাড়ি ওদিতে হয়েছে।
নন্দীগ্রাম মামলার তদন্তের সময়ও সিবিআই-কে সব সাহায্য করতে হয়েছিল রাজ্যকে। কলকাতা বন্দর এবং হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের অতিথিশালায় সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্প অফিস হয়। জেলা প্রশাসনকেই গোয়েন্দাদের থাকা-খাওয়া ও গাড়ির ব্যবস্থা করতে হয়েছিল।
আরও পড়ুন:
বিল এত টাকার! তদন্ত চান মুখ্যমন্ত্রী
প্রশাসনের এক কর্তা জানান, সুদীপ ও তাপসকে গ্রেফতার করার পর নবান্ন ঠিক করেছিল, সিবিআইয়ের সঙ্গে কোনও রকম সহযোগিতা করা হবে না। রাজ্যের লোকজন, গাড়িঘোড়া সব তুলে নেওয়া হবে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কথা মাথায় রেখে শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসা হয়। এ বার কেন্দ্রীয় সংস্থায় নয়া আর্জি পেয়ে নবান্নের শীর্ষস্তর কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটাই দেখার।
সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে নিজেদের অফিসের বাইরে গত দু’বছর ধরে পূর্ত ভবনের চার তলায় তিন হাজার বর্গফুটের একটি হলঘর নিয়ে অফিস চালাচ্ছে সিবিআই। সেখানেই আরও প্রায় ১০ হাজার বর্গফুট (চারটি হলঘর মিলিয়ে) জায়গা চেয়েছে তারা। সিবিআই সূত্রের খবর, চিটফান্ড মামলার তদন্ত করতে ভিন্ রাজ্য থেকে অতিরিক্ত প্রায় শ’দেড়েক অফিসার-কর্মী আনা হয়েছে। তাঁদের কাজের জায়গা করে দিতেই বাড়তি ঘরের অনুরোধ।