ক্যানসারের চিকিৎসায় বিকিয়ে গেল জমিটা

যার উদাহরণ টেনে চিকিৎসক তমোনাশ ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত মানুষ কী ভাবে ধনেপ্রাণে শেষ হন, এ তার আর একটি প্রমাণ।’’

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৮ ০৪:২৩
Share:

প্রস্টেট ক্যানসার ধরা পড়েছিল বছর ছ’য়েক আগে। অস্ত্রোপচারের পরে টানা ওষুধ চলছিল। উত্তর কলকাতার বাসিন্দা বছর সত্তরের সেই বৃদ্ধ সম্প্রতি আত্মহননের চেষ্টা করেন।

Advertisement

‘সুইসাইড নোট’-এ তিনি লিখেছিলেন, ‘ওষুধের খরচ মাসে ১০ হাজার টাকা! রোগের জন্য ব্যবসাও ভাল করে দেখতে পারছি না। যতটুকু সঞ্চয় অবশিষ্ট রয়েছে, আরও কিছু দিন বাঁচলে সব শেষ করে ফেলব। সব দিক বিবেচনা করে সকলের কাছ থেকে ছুটি নিলাম।’ বৃদ্ধকে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো গিয়েছে। তবে তাঁর অসহায়তা? আরও অনেক ক্যানসার আক্রান্তের মতোই! যার উদাহরণ টেনে চিকিৎসক তমোনাশ ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত মানুষ কী ভাবে ধনেপ্রাণে শেষ হন, এ তার আর একটি প্রমাণ।’’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষায় প্রকাশ, ক্যানসারের ৬ মাসের চিকিৎসায় আড়াই লক্ষ থেকে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। ক্যানসার বিশেষজ্ঞ গৌতম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমরা দেখেছি, বহু পরিবার শুধু ক্যানসারের চিকিৎসা চালাতে গিয়ে জমিজমা, গয়না, ফ্ল্যাট বিক্রি করে নিঃস্ব হয়েছে। চিকিৎসাও হয়তো সম্পূর্ণ করতে পারেনি।
তাই রোগীদের প্রথমেই পরামর্শ দিই সাধ্য অনুযায়ী পা বাড়াতে। তবে প্রিয়জনের জন্য মানুষ সাধারণত সব চেয়ে ভাল চিকিৎসাই খোঁজেন। তা করতে গিয়েই আর্থিক ভাবে পথে বসার জোগাড় হয়।’’

Advertisement

কলকাতার একটি মাঝারি মানের বেসরকারি ক্যানসার হাসপাতালে সম্প্রতি চিকিৎসা চলছে বছর সাতান্নর শিবানী চক্রবর্তীর। স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত তিনি। বায়োপ্সি ১০ হাজার, সার্জারিতে ৩৮ হাজার, ৭ দিন হাসপাতালে থাকার খরচ ১৪ হাজার, চিকিৎসকের ফি ৩ হাজার, ৬ হাজার টাকার ওষুধ, ৬ দিনের কেমোয় ৪২ হাজার টাকা, রেডিয়েশন ৭০ হাজার টাকা। এখনও পর্যন্ত মোট খরচ ১ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা। রায়গঞ্জের পানিশালা হাট গ্রামের বাসিন্দা শিবানীর দিনমজুর স্বামী মারা গিয়েছেন। দুই ছেলেমেয়ে। বিক্রি করেছেন একমাত্র সম্বল জমিটুকু।
চাঁদা তুলে বাকি খরচ জুগিয়ে
চলেছেন গ্রামবাসীরা।

সরকারি হাসপাতালে না-গিয়ে বেসরকারি জায়গায় কেন এলেন? জানালেন, কলকাতায় কিছুই চেনেন না তিনি। সরকারি হাসপাতালে যে-সব চিকিৎসা বিনা পয়সায় পাওয়া যায়, তা-ও জানতেন না। পরিচিত এক জন কলকাতায় রক্ষীর কাজ করেন। তিনিই এই বেসরকারি জায়গার কথা বলেন। তার পর? খরচের বহর বাড়ছে।

শুধু চিকিৎসার খরচই নয়, থাকে বহু আনুষঙ্গিক খরচও। অনেকেই ভিন্‌ জেলা, ভিন্‌ রাজ্য থেকে চিকিৎসার জন্য আসেন। কয়েক মাস তাঁদের হাসপাতালের কাছে বাড়ি ভাড়া করে থাকতে হয়। আবার রোগী যখন ‘টার্মিনাল স্টেজ’-এ চলে যান, তখন অনেক হাসপাতাল অপ্রয়োজনে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা করিয়ে খরচ বাড়াতে থাকে বলে অভিযোগ। আর বাড়িতে রোগীকে রাখলে অক্সিজেন, রক্ত, রাইলস টিউব, স্যালাইন, নার্স বা আয়া রাখা-সহ বিভিন্ন ব্যয় রয়েছে। ক্যানসার চিকিৎসক সোমনাথ সরকারের কথায়, ‘‘ক্যানসার এমন একটি রোগ যার চিকিৎসার বাজেট আগে থেকে আঁচও করা যায় না। এবং সেটা দীর্ঘমেয়াদি। খরচ শুরু হয় রোগ যথার্থ ভাবে নির্ণয় করার পর্ব থেকেই। সিটি স্ক্যান, পেট স্ক্যান, এমআরআই, এফএনএসি, বায়োপ্সি, রক্তপরীক্ষা ও অন্য আরও কিছু পরীক্ষায় ১ লক্ষ টাকার মতো খরচ হয়।’’

কিন্তু সরকারি হাসপাতালে তো সব চিকিৎসা ‘ফ্রি! সেখানে কেন যান না রোগীরা?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement