রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য-পদে অস্থায়ী নিয়োগের গেরো যেন কিছুতেই আর কাটছে না!
সুগত মারজিত অস্থায়ী উপাচার্যের পদে আর থাকতে না-চাওয়ায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার এক জন অস্থায়ী উপাচার্যকেই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। ওই দায়িত্ব নিতে চলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়েরই বিজ্ঞানের ডিন আশুতোষ ঘোষ। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এখন রয়েছে অস্থায়ী উপাচার্যদের হাতেই। তবে এ বার স্থায়ী উপাচার্য পাচ্ছে বিধানচন্দ্র এবং উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অস্থায়ী উপাচার্য সুগত মারজিতের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৪ জুলাই। তাঁর মেয়াদ যাতে আর বাড়ানো না-হয়, সেই আবেদন জানিয়ে কিছু দিন আগেই আচার্য তথা রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকে চিঠি দিয়েছেন সুগতবাবু। কারণ, তিনি আর অস্থায়ী উপাচার্যের পদে থাকতে চান না। বৃহস্পতিবার রাজভবন সূত্রে জানানো হয়েছে, সুগতবাবুর আবেদন মেনে নিয়েছেন আচার্য-রাজ্যপাল। ১৫ জুলাই থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন অস্থায়ী উপাচার্যের ভার সামলাবেন আশুতোষবাবু।
কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু এ দিনই নবান্নে জানান, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য হয়েছেন ধরণীধর পাত্র। ১৩ জুন তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। আর উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী উপাচার্য হতে চলেছেন চিরন্তন চট্টোপাধ্যায়। ২৭ জুন আনুষ্ঠানিক ভাবে তাঁর দায়িত্ব নেওয়ার কথা।
রাজ্যের ছ’-ছ’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এত দিন স্থায়ী উপাচার্য ছিলেন না। সেগুলো হল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে তাঁরা ভাবনাচিন্তা করছেন। কিন্তু এ বারেও দেখা গেল, দু’টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্থায়ী উপাচার্য পাওয়া গেলেও কলকাতা-সহ চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব রয়ে গিয়েছে সেই অস্থায়ী উপাচার্যদের হাতেই!
নিয়ম অনুযায়ী বিজ্ঞাপন দিয়ে স্থায়ী উপাচার্যের পদে প্রার্থীদের নাম চাওয়া হয়। যে-সব আবেদন জমা পড়ে, সার্চ বা সন্ধান কমিটি সেই তালিকা থেকে তিনটি নাম পাঠায় আচার্যের কাছে। তাঁদের মধ্যে কে উপাচার্য হবেন, তা ঠিক করেন আচার্য-রাজ্যপাল। দু’টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বেছে নেওয়া হয়েছে এই ভাবেই।
কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী উপাচার্যের জন্য এখনও পর্যন্ত কোনও বিজ্ঞাপনই দেওয়া হয়নি। গত বছর ১৪ জুলাই সুগত মারজিত ছ’মাসের জন্য অস্থায়ী ভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব নেন। তার পরে আরও ছ’মাসের জন্য তাঁর মেয়াদ বাড়ানো হয়। ১৪ জুলাই তাঁর দ্বিতীয় দফার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সুগতবাবু গত মাসেই আচার্যকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেন, অস্থায়ী উপাচার্যের পদে তিনি আর থাকতে চান না। তিনি যেখান থেকে লিয়েন নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন, সেই সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসে ‘রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া চেয়ার প্রফেসর’-এর পদেই ফের ফিরে যেতে হবে তাঁকে।
সুগতবাবু সরে যেতে চাওয়ার পরেও রাজ্য সরকারের তরফে সার্চ কমিটি গড়ে নতুন স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়নি। তাই সুগতবাবুর পরে আবার এক জন অস্থায়ী উপাচার্যকেই নিয়োগ করতে হল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। নতুন অস্থায়ী উপাচার্যের দায়িত্ব যে তাঁকে আর নিতে হচ্ছে না, সেই বিষয়ে এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি সুগতবাবু। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি ভাবে কোনও কাগজ পাইনি। তাই এই বিষয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করব না।’’ আর অস্থায়ী উপাচার্যের পদে নিয়োগের খবরে আশুতোষবাবু বলেন, ‘‘এখনও নিয়োগপত্র পাইনি। তবে বিষয়টি শুনেছি। নতুন পদে দায়িত্ব নিয়ে আমার প্রথম কাজই হবে, যে-সব কাজ অসমাপ্ত রয়ে গিয়েছে, সেগুলো শেষ করা।’’
কলকাতা এবং রাজ্যের অন্য তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের প্রক্রিয়া কবে শুরু হবে, সেই বিষয়ে বিকাশ ভবন এ দিন পর্যন্ত কোনও বার্তা দিতে পারেনি।