প্রতীকী ছবি।
রাজ্য-কেন্দ্রের এমন মতের মিল সচরাচর দেখা যায় না! যেমনটা দেখা যাচ্ছে ক্যানসার-তথ্যপঞ্জির ক্ষেত্রে। ২২ বছর আগে যাত্রা শুরু করেও ক্যানসার-তথ্যের ‘গ্রহণযোগ্যতা’ নিয়ে সন্দিহান এ রাজ্যে ক্যানসার চিকিৎসার জাতীয় প্রতিষ্ঠান। একই সুর রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কর্তা এবং চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্যেও।
পশ্চিমবঙ্গে ক্যানসারের তথ্যপঞ্জির অবস্থা কী, সম্প্রতি এই বিষয়ে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটে (সিএনসিআই) এক আলোচনাসভায় রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ছিলেন ‘আইসিএমআর— ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজ়িজ় ইনফর্মেটিকস অ্যান্ড রিসার্চ’-এর প্রতিনিধি মিশা চতুর্বেদী। পশ্চিমবঙ্গে ক্যানসারের তথ্যপঞ্জি তৈরির কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
সভায় কিছু প্রতিনিধি জানান, ক্যানসার-তথ্যের নথিভুক্তি হয় দু’ভাবে: হাসপাতাল-নির্ভর এবং জনসংখ্যা-ভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ। ১৯৯৬-৯৭ থেকে বাংলায় জনসংখ্যা-ভিত্তিক ক্যানসার-তথ্যের নথিভুক্তি চলছে। ২০০৫-এ তাতে সিলমোহর দেয় আইসিএমআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ)। কিন্তু তা লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছয়নি। বরং পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। পরিসংখ্যানবিদদের হিসেব অনুযায়ী রাজ্যে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা যা, তার সঙ্গে নথির তথ্যের ফারাক আছে!
সম্প্রতি ক্যানসার-তথ্য নিয়ে একই বক্তব্য শোনা গিয়েছে স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকদের গলায়। রাজ্যের নিজস্ব পরিকাঠামোয় হাসপাতাল-ভিত্তিক ক্যানসার রোগীর তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত তথ্য ‘নির্ভরযোগ্য’ নয় বলেই মত স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের।
জাতীয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালনায় জনসংখ্যা-ভিত্তিক তথ্য নথিভুক্তির বেহাল দশার জন্য কলকাতার চারটি বেসরকারি হাসপাতাল এবং একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ‘অসহযোগিতা’-কে দায়ী করছে সিএনসিআই। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের ভূমিকাও চলে এসেছে আতসকাচের তলায়। স্বাস্থ্য ভবন ২০১০ সালের ২০ ডিসেম্বর ক্যানসারকে ‘নোটিফায়েবল ডিজ়িজ়’ ঘোষণা করে। অর্থাৎ ডেঙ্গির মতো ক্যানসার রোগীর তথ্যও জানানো আবশ্যিক। একদা ডেঙ্গি-তথ্য দিতেও বেসরকারি হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে অনীহা দেখা যেত। সেই অবস্থার বদল ঘটলে ক্যানসারের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয় কেন?
ক্যানসার-তথ্য নথিভুক্তিতে যুক্ত এক বিশেষজ্ঞ জানান, দেশে ৩৬টি জনসংখ্যা-ভিত্তিক ক্যানসার তথ্যপঞ্জি রয়েছে। নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশ, অসম এই কাজে অনেক এগিয়ে। ধুঁকছে কলকাতা। রাজ্যের কোথায় ক্যানসার রোগী বেশি, কী চিকিৎসা জুটছে, ক’জন মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করে দিচ্ছেন এবং কেন, তা জানতে তথ্যপঞ্জি জরুরি। এই তথ্য না-পেলে ক্যানসার রোধ হবে কী করে?
সিএনসিআইয়ের অধিকর্তা জয়ন্ত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অনেকে নিয়মিত তথ্য দিচ্ছেন না। ডেঙ্গির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দফতর কড়া অবস্থান নিয়ে যে-ভাবে তথ্য জানানো নিশ্চিত করেছে, এ ক্ষেত্রেও তেমন কিছু হলে ভাল হয়। তথ্য জানানো কেন জরুরি, সেই ব্যাপারে অনেকেই সচেতন নন।’’
রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর বিভিন্ন হাসপাতালে যে-প্রক্রিয়ায় ক্যানসার রোগীর তথ্য সংগ্রহ করে, তা যে দুর্বল, সে-কথা স্বীকার করে স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ক্যানসার রেজিস্ট্রির দায়িত্ব রয়েছে মূলত সিএনসিআইয়ের উপরেই। তারা সমস্যায় পড়লে আলোচনার ভিত্তিতে সমাধানসূত্র বার করা যেতে পারে।’’