ডায়মন্ড হারবারের সভায় জে পি নড্ডা। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া
ডায়মন্ড হারবারে যাওয়ার পথে কনভয়ে হামলা, একের পর এক গাড়িতে ইটবৃষ্টি। গাড়ি ভাঙচুর। সেই পরিস্থিতির মধ্যেই সভায় পৌঁছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা। সরাসরি মমতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন বিজেপি-র শীর্ষনেতা। তৃণমূলের বিরুদ্ধে কনভয়ে হামলার অভিযোগ তুলে ‘গুন্ডারাজ’ খতম করার ডাক দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘এই ঘটনা প্রমাণ করছে, এটা অসহিষ্ণুতার রাজ্য। আইনশৃঙ্খলাহীনতার রাজ্য। এই গুন্ডারাজ আর বেশিদিন চলবে না।’’
ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেলে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিংয়ে বিক্ষওভ মিছিল করবে বিজেপি। সেখানে থাকার কথা সাংসদ অর্জুন সিংহ, সৌমিত্র খাঁ ও লকেট চট্টোপাধ্যায়, সায়ন্তন বসুরও।
ঘটনার পর রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় টুইট করে বলেছেন, সকালেই তিনি রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং ডিজি-কে নড্ডার কনভয়ে হামলার বিষয়ে অবহিত করেছিলেন। কিন্তু তার পরেও ওই ঘটনা ঘটল! যার জেরে সামগ্রিক ভাবে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আরও একবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল। পরে আরও একটি টুইট করে রাজ্যপাল লিখেছেন, ‘মুখ্যসচিব ও ডিজি-কে নির্দেশ দিয়েছি, ৬টার সময় আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে কনভয়ে হামলার বিষয়ে খুঁটিনাটি তথ্য দিতে।’
অন্য দিকে, রাজ্য পুলিশ ওই ঘটনা সম্পর্কে টুইট করে বলেছে, ‘নড্ডার কনভয়ে তেমনকিছু হয়নি। কনভয়ের পিছনের কয়েকটি গাড়িতে ইট-পাটকেল ছোড়া হয়েছে’। দেবীপুর, ফলতায় কিছু দুষ্কৃতী হঠাৎ পাথর ছোড়ে। প্রত্যেকেই সুরক্ষিত আছেন। কী ঘটেছে, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে’।
তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘ঘটনাটা ঘটেছে দেখেছি। পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। তবে নড্ডার কনভয় তো আটকায়নি! ইট-পাথর না ছোড়া হলেই ভাল হত। নড্ডা তো আর প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নন, যে তাঁর যাওয়ার পুরো রাস্তায় পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া যাবে!’’ পাশাপাশিই সৌগত বলেন, ‘‘কী দরকার ছিল বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতিকে দিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্রে সভা করানোর? এটা তো এক ধরনের প্ররোচনা। এমন প্ররোচনা থাকলে অনেক সময় স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হতে পারে।’’
আরও পড়ুন: জ্ঞান ফিরলেও সঙ্কটে বুদ্ধদেব, লড়াই চালাচ্ছে মেডিক্যাল বোর্ড
হামলা, ইটবৃষ্টি এড়িয়ে শেষ পর্যন্ত ডায়মন্ড হারবারে পৌঁছে ওই ঘটনা নিয়ে আক্রমণ শানান নড্ডা। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের গুন্ডারা আমাকে আটকানোর চেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখেনি। সব’কটা গাড়ি দেখুন! একটা গাড়িও হামলার হাত থেকে রেহাই পায়নি। আমি সুরক্ষিত আছি বুলেট প্রুফ গাড়ি ছিল বলে। মা দুর্গার দয়ায় এখানে এসে পৌঁছতে পেরেছি।’’ নড্ডা আরও বলেন, ‘‘দেখা গেল দিদির নিজের রাজত্বে কী অবস্থা। কিন্তু এই গুন্ডারাজ, এই অরাজকতা বেশিদিন চলবে না। বিরোধীদের এই দমন-পীড়নের নীতি আমরা বাংলা থেকে দূর করতে চাই। বাংলায় আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেই ছাড়ব।’’
আরও পড়ুন: আন্দোলন প্রত্যাহার করুন, ফের কৃষকদের অনুরোধ করবেন কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী
হামলার মুখে পড়েছিল বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, মুকুল রায়, রাহুল সিংহদের গাড়িও। ভাঙচুর করা হয় বিজেপি সমর্থক বোঝাই একটি মিনিবাসও। কৈলাস পরে সভায় বলেন, ‘‘এখানে অরাজকতা চলছে। গণতন্ত্রকে গলা টিপে মারা হচ্ছে। ভাইপোর গুন্ডারা পুলিশকে ভয় পায় না। পুলিশের সামনেই গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার এটা নজরে রেখেছে। তবে এর জবাব দেবেন বাংলার মানুষ।’’
দিলীপ বলেন, ‘‘ভারতের গণতন্ত্রে এই ধরনের ঘটনার কোনও জায়গা নেই। কিন্তু বিজেপি-র সভাপতি মাঝরাস্তা থেকে ফিরে যাওয়ার লোক নন। আমাদের অনেক কর্মী আহত হয়েছেন। অনেকের গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। ৮ জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই সভার আগে থেকেই সংঘর্ষ চলছিল। তাই অনেকে আসতে পারেননি। তা-ই পিছনের দিকে কিছু চেয়ার ফাঁকা রয়েছে। কিন্তু এই গুন্ডাবাজি আর বাংলায় চলবে না।’’
অন্যদিকে, বঙ্গসফরের দ্বিতীয়দিনে বাঙালি ভাবাবেগকেও কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন নড্ডা। তিনি বলেছেন, ‘‘বাংলা এক সময় সংস্কৃতির তীর্থক্ষেত্র ছিল। সারা দেশকে পথ দেখাত বাংলা। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কাজ করেছেন, এবং যে ভাবে সরকার চালাচ্ছেন, তাতে সেই সংস্কৃতি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সেটা আবার ফিরিয়ে এনেসোনার বাংলা গড়ব আমরা।’’ মমতাকে নিশানা করে নড্ডার তোপ, ‘‘তুই-তোকারি করছেন! এটা কি কোনও ভাষা! রবীন্দ্রনাথ, ঋষি অরবিন্দরা কি এই ভাষা শিখিয়েছিলেন? এটা সভ্যতা, সংস্কৃতির অবমাননা।’’
আমপানের পর রাজ্যে ত্রাণের জন্য ১,০০০ কোটি টাকা দিয়েছিল কেন্দ্র। সেই ত্রাণ প্রকৃত উপভোক্তারা পেয়েছেন কিনা বা ত্রাণবণ্টনের প্রক্রিয়ায় কোনও ত্রুটি বা দুর্নীতি হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে সিএডজি-কে দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এ নিয়ে প্রায় প্রতিটি সভায় তোপ দাগছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেই প্রসঙ্গ টেনে বৃহস্পতিবার নড্ডা বলেন, ‘‘আমপানের ত্রাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজ্যকে ১,০০০ কোটি টাকা দিয়েছেন। কিন্তু সেই টাকা ক্ষতিগ্রস্তরা পাননি। সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত বলে দিয়েছে, সিএজি-কে দিয়ে তদন্তত করানোর জন্য।’’ কেন্দ্রের স্বাস্থ্যবিমার প্রকল্প ‘আয়ূষ্মান ভারত’ রাজ্যে চালু না করার বিরুদ্ধেও সরব হন নড্ডা। সভা থেকে তিনি চলে যান সরিষা রামকৃষ্ণ মিশনে।