জুহি চৌধুরী।
জলপাইগুড়ি শিশু পাচার কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত, প্রাক্তন যুব বিজেপি নেত্রী জুহি চৌধুরীকে জামিনে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অশোক ভূষণ ও বিচারপতি নবীন সিনহার বেঞ্চ এ দিন জানিয়েছে, জামিন পেলেও নিম্ন আদালতে শুনানির সময়ে নিয়মিত হাজির থাকতে হবে জুহিকে। নিম্ন আদালত যদি জামিনের ক্ষেত্রে কোনও শর্ত চাপায়, তা হলে সেটাও তাঁকে মানতে হবে, জানিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
জলপাইগুড়ির হোম থেকে শিশু পাচারের কাণ্ডে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও বিজেপি সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের নামও জড়িয়েছিল। পুলিশের অভিযোগ, বিজেপির ওই সব প্রভাবশালী নেতানেত্রীর সঙ্গে শিশু পাচারের প্রধান অভিযুক্ত চন্দনা চক্রবর্তীর যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন জুহি। ২০১৬-র ফেব্রুয়ারিতে চন্দনা চক্রবর্তীর হোম থেকে ১৭টি শিশুকে বেআইনি ভাবে দত্তক দেওয়া নিয়ে অভিযোগ ওঠে। সিআইডি তদন্তভার নিয়ে ২০১৭-র ফেব্রুয়ারিতে গ্রেফতার করা হয় চন্দনাকে। এর পরই বিজেপির মহিলা মোর্চার তৎকালীন রাজ্য সম্পাদিকা জুহি চৌধুরীর নাম উঠে আসে। জুহির বাবা রবীন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীও জেলায় বিজেপির পদাধিকারী ছিলেন। তৃণমূল অভিযোগ তোলে, রূপাঘনিষ্ঠ জুহিকে আড়াল করার চেষ্টা করেছিলেন কৈলাসও। ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নেপাল সীমান্ত লাগোয়া শিলিগুড়ির খড়িবাড়ি থেকে জুহিকে গ্রেফতার করে সিআইডি। সেই থেকে তিনি জেলে।
এই মামলায় সুপ্রিম কোর্টে জুহির জামিন আটকাতে রাজ্য সরকারের তরফে আইনজীবী সিদ্ধার্থ লুথরা ও বিশ্বজিৎ দেব যুক্তি দেন, শিশু পাচার কাণ্ডের মামলায় তিন জন সাক্ষী রয়েছেন, যাঁরা জুহি চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। তাঁদের সাক্ষ্য গ্রহণের পরেই জুহির জামিনের আর্জি বিবেচনা করা হোক। না হলে জুহি জামিনে মুক্তি পেয়ে সাক্ষীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারেন।
জামিনের দাবিতে জুহির আইনজীবী বংশদীপ ডালমিয়াদের প্রধান যুক্তি ছিল, ২০১৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জুহিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দু’বছরের বেশি সময় ধরে তিনি বন্দি। তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি শিশু পাচারের কোনও অভিযোগ নেই। সব থেকে বেশি যে অভিযোগ রয়েছে, তা হল তিনি প্রধান অভিযুক্তকে সাহায্যের চেষ্টা করেছিলেন। তা ছাড়া এই মামলায় চার্জশিটও জমা পড়ে গিয়েছে।
কিন্তু রাজ্যের আইনজীবী সিদ্ধার্থ লুথরা, বিশ্বজিৎ দেব বলেন, এই মামলায় শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। জুহির আইনজীবী অবশ্য বলেন, তাঁরা শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার কথা বলেননি। প্রধান অভিযুক্ত চন্দনা চক্রবর্তীর তরফ থেকেই যা হওয়ার হয়েছে। তা ছাড়া সকলের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হতে কত সময় লাগবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। শেষ পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে জুহির জামিন মঞ্জুর করে সুপ্রিম কোর্ট।