নির্বাচনের আগে নির্দলদের দলে না ফেরানোর কথা ঘোষণা করেছিল তৃণমূল।
‘যো জিতা ওহি সিকন্দর’, এই ব্যবস্থা তৃণমূলে নতুন নয়। কিন্তু অতীতে সিংহভাগ ক্ষেত্রে তা নিয়ে দূরত্ব-বিবাদের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে দলের অন্দরে। যাঁরা দলের সঙ্গে কঠিন লড়াই করেছেন তাঁদের ঠিক কীভাবে মূলস্রোতে মেশানো হবে, তা নিয়ে ফাঁপরে তৃণমূল।
এবার পঞ্চায়েত ভোটে দলের বিরুদ্ধে জিতে আসা এই নির্দলদের জায়গা দিলে বিরোধের আশঙ্কা করছেন নেতৃত্বের একাংশ। নেতাদের একাংশের মতে, যেখানে বোর্ড গঠনে নির্দলদের প্রয়োজন সেখানে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু যেখানে প্রয়োজন নেই সেখানে তাঁদের ‘খুশি’ করে দলে আনতে গেলে সমস্যা তৈরি হবে। কারণ দলের প্রতীকে জেতা কাউকে বাইরে রেখে বোর্ডে জায়গা দিতে হবে তাঁদের। তবু এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব নিতে বলা হয়েছে জেলা নেতৃত্বকে।
জেলা পরিষদে নির্দল প্রায় নেই। তবে নীচেরতলায় পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতে এই সংখ্যা অনেক। এই নির্দলদের ৭৫ % তৃণমূলের প্রতীক না পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। দেড় হাজার এইরকম বিজয়ীর তালিকা তৈরি করে জেলাওয়াড়ি আলোচনার প্রস্তুতি শুরু করেছেন দলীয় নেতৃত্ব। তবে এই প্রক্রিয়ায় বিজয়ী নির্দলদের সঙ্গে পরাজিত দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে সমস্যার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের পরেও দলের প্রার্থীকে হারিয়ে বিরোধী জোটের বিজয়ী অনেকেই তৃণমূলে পা রেখেছেন। সেক্ষেত্রে এই দুই অংশের মধ্যে সাংগঠনিক স্তরে বিরোধও প্রকাশ্যে চলে এসেছে। নদিয়া, বাঁকুড়া, মালদহ, পশ্চিম মেদিনীপুরের সংশ্লিষ্ট বিধায়কদের নিয়ে সেই অভিজ্ঞতা থেকেই পঞ্চায়েতের বিজয়ী নির্দলদের জায়গা দেওয়া নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে।
নির্বাচনের আগে নির্দলদের দলে না ফেরানোর কথা ঘোষণা করেছিল তৃণমূল। তবে ফল প্রকাশের পরই সেই সিদ্ধান্ত বদল করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দলের শীর্ষনেতৃত্বের ব্যাখ্যা, এই নির্দলদের অনেকেই দলের প্রার্থী তালিকায় ছিলেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্তদের অনিয়মে তাঁরা প্রীতক পাননি। তাই বিজয়ীদের দলে জায়গা দেওয়া যেতে পারে। শুক্রবার তৃণমূলে মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নির্দলেরা কেন নির্দল প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, তা দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার সাংগঠনিক পরিস্থিতিও বিশ্লেষণ করবে দল।’’ দলের একাংশ অবশ্য বলছে, নির্দলেরা যে সংখ্যায় জিতেছেন, তাতে তাঁদের উপেক্ষা করলে দলের ক্ষতি হবে। লোকসভা ভোটের আগে সেই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না শীর্ষনেতৃত্ব। পাশাপাশি সদ্য পেরিয়ে আসা নির্বাচনে দু’পক্ষ পরস্পরের সঙ্গে যে মাত্রায় লড়াই করেছে তাতে নির্দলদের সাংগঠনিক শক্তিও নজরে পড়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের।