জেলা পরিষদে ভোট হওয়া আসনগুলির মধ্যে ৫৯০টি (৯৪.৮%) দখল করেছে তৃণমূল।
লড়াই যেখানে বেশি ছিল, সেখানেই তৃণমূলের কাছে বেশি ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি।
ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, জেলা পরিষদের ভোট হওয়া ৬২২টি আসনের মধ্যে শাসক দল জিতে নিয়েছে ৫৯০টি। বিজেপি পেয়েছে মাত্র ২৩টি আসন। এবং সেগুলিও বিচ্ছিন্ন। একটানা বা লাগোয়া এলাকায় নয়। যার অর্থ, এই আসনের বিচারে বিজেপি লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনে কী ফল করতে পারে, তার কোনও ইঙ্গিত মেলাও কঠিন। সিপিএম ও কংগ্রেসকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে একটি ও দু’টি আসন পেয়ে। জেলা পরিষদে ৯৪.৮% এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে ৮০.২% আসন একাই দখল করেছে শাসক দল। যা এ রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটের ইতিহাসে অভূতপূর্ব ঘটনা বলেই জানাচ্ছেন নির্বাচন কমিশনের কর্তারা।
মনোনয়নের সময় গ্রাম পঞ্চায়েতের তুলনায় পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে শাসক দলের সঙ্গে বেশি লড়াই ছিল বিজেপির। কিছু প্রার্থী ছিল সিপিএম-কংগ্রেসেরও। গ্রাম পঞ্চায়েতে যেখানে ৩৪.৫% আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল তৃণমূল, জেলা পরিষদে বিনা ভোটে জেতা আসনের সংখ্যা ছিল ২৪%।
ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের উপরের দু’টি স্তরে শাসক দলের এমন একাধিপত্য কী ভাবে সম্ভব হল, তা নিয়ে তপ্ত আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। বিশেষ করে অনেকটা দূরত্বে থেকেও গ্রাম পঞ্চায়েতে ৫৭৫৯টি আসন জিতে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা বিজেপি কেন জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতির লড়াইয়ে দাঁড়াতেই পারল না, আলোচনা চলছে সে সব নিয়েও।
অনেকের মতে, গেরুয়া শিবিরের রাজনৈতিক অবস্থানকে ‘ভালোবেসে’ এ রাজ্যে বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি হচ্ছে না। বরং তৃণমূলের বিরোধিতা করার তাগিদে অনেকের কাছেই রাজ্যের এক প্রকার বিরোধী শূন্য পরিসরে একা কুম্ভ হয়ে উঠছে বিজেপি। তবে বিজেপির উপস্থিতি কিছু ছোট ছোট এলাকা কেন্দ্রিক বলেই মনে করছেন ওই রাজনৈতিক ভাষ্যকারেরা।
রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর ব্যাখ্যা,‘‘এ রাজ্যে বিজেপির উত্থান নিয়ে কোনও কোনও মহলে বাড়তি চর্চা হচ্ছে। এই বাড়বাড়ন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে নয়। সেই কারণে কোথাও দু’চারটে গ্রাম পঞ্চায়েত আসন জিতলেও ওদের এখনও জেলা পরিষদ আসন জেতার ক্ষমতা নেই।’’ শুভেন্দুর আরও বক্তব্য,‘‘বুথে কোথাও কিছু লোকজন থাকলেও বড় এলাকাজুড়ে বিজেপির ভোট মেশিনারি এখনও কিছু নেই। সেই কারণেই গ্রাম পঞ্চায়েতে জিতলেও, সংগঠন না থাকায় সেই জয়ের ধারা তারা জেলা পরিষদে নিয়ে যেতে পারেনি।’’
তৃণমূলের একাংশ জানাচ্ছে, বিজেপি গ্রাম সভায় ৫৭৫৯টি আসন পেলেও জেলা পরিষদে জিতেছে মাত্র ২৩টি আসন। তাও পাশাপাশি কয়েকটি আসন জিতেছে এমন ঘটনা নেই। ফলে তৃণমূলের থেকে বিধানসভা ছিনিয়ে নেওয়ার মতো শক্তিধর বিজেপি এখনও হতে পারেনি। আর সিপিএম-কংগ্রেসকে তো দূরবীন দিয়েও খুঁজে পাওয়া মুশকিল হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন শাসক দলের ওই অংশ।
যদিও তৃণমূলের এই ব্যাখ্যার সঙ্গে এক মত নন বিজেপি নেতারা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা শমীক ভট্টচার্যের কথায়, ‘‘সংগঠনের জোর থাকলে তবেই গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রার্থী দেওয়া সম্ভব। এত ছাপ্পা, সন্ত্রাসের পরও প্রায় ছ’হাজার গ্রাম সভার আসন জিতেছি। কিন্তু তা দেখে ভয় পেয়ে শাসক দল পুলিশ দিয়ে জেলা পরিষদের আসনগুলি গণনায় কারচুপি করে জিতেছে।’’ তাঁর বক্তব্য,‘‘যে দলের হাতে ছ’হাজার গ্রামসভা থাকে তারা জেলা পরিষদে ২৩টি আসন জিতবে তা শাসক দলের নেতারাও বিশ্বাস করেন না। যে কায়দায় ওরা এ বার রিগিং করল, তার মাসুল তৃণমূল কংগ্রেসকে লোকসভায় দিতে হবে।’’