বিকল সিসিটিভি। রানিগঞ্জ বড়বাজারে তোলা নিজস্ব চিত্র।
কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে বছর তিনেক আগে রানিগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় ন’টি সিসিটিভি বসিয়েছিল আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। শহরের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্যই এই উদ্যোগ বলে কমিশনারেট সূত্রে জানানো হয়েছিল। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই আটটি সিসিটিভি বিকল হয়ে যায়। একটি আবার চুরি হয়ে গিয়েছে। বিকল সিসিটিভির সামনে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রশাসনকে বার বার জানানো সত্ত্বেও সিসিটিভিগুলি সারাইয়ের ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
প্রশাসন সূত্রে খবর, রীতিমত আড়ম্বরের সঙ্গে প্রচার চালানোর পরে প্রায় সাড়ে আট লক্ষ টাকা ব্যায় করে রানিগঞ্জ শহরে লাগানো হয় সিসিটিভিগুলি। শহরের শিশুবাগান মোড়, তারবাংলা মোড়, সিহারশোল রাজবাড়ি মোড়, রানিগঞ্জ বড়বাজার, এতোয়াড়ি মোড়, বড় ডাকঘর, রানিগঞ্জ থানার সামনে, নেতাজী সুভাষ রোডের পাশে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের সামনে ও রানিগঞ্জ রেল স্টেশনের সামনে এই সিসিটিভিগুলি লাগানো হয়। কিন্তু মাত্র মাস দেড়েকের মধ্যেই রানিগঞ্জ থানার সামনের সিসিটিভিটি বিকল হয়ে যায়। তার পর আস্তে আস্তে বাকি সিসিটিভিগুলিও খারাপ হয়ে যায়। তার বাংলা মোড়ের সিসিটিভিটি চুরি হয়ে যায়। এরপরে কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও একটিও সিসিটিভি সারানো হয়নি।
বর্তমানে কলকাতা-সহ রাজ্যর অনেকগুলি বড় শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে লাগানো রয়েছে সিসিটিভি। এলাকায় চুরি-সহ অসামাজিক কাজকর্ম রুখতে এই সিসিটিভি দাওয়াইতে কাজও হয়েছে অনেক এলাকায়। রানিগঞ্জ হল দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম ব্যস্ত পাইকারী বাজার ও খনি এলাকা। প্রায় প্রতি দিনই রাজ্য ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক মানুষ আসেন এই শহরে। তাই এই শহরের নাগরিক সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বিষয়। বিকল সিসিটিভি নিয়ে রীতিমত বিরক্ত স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। রানিগঞ্জ বণিক সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি রাজেন্দ্র খৈতানের ক্ষোভ, “যে শহরে চোরেরা সিসিটিভি খুলে নিয়ে যায় সেখানে যে চুরির বাড়বে সেটাই স্বাভাবিক। এই নিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে বহু বার জানালেও লাভ হয়নি।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি রানিগঞ্জ শহরে বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছে। রানিগঞ্জ তেওয়ারিপাড়ার বাসিন্দা সত্যরঞ্জন কর্মকারের দাবি, “গত মঙ্গলবার আমি শ্বশুরবাড়ি থেকে বাড়ি ফিরে দেখি সদরদরজার তালা ভাঙা। বাড়ি ঢুকে দেখি আলমারির তালা ভেঙে সোনার অলঙ্কার-সহ বেশ কিছু সামগ্রী চুরি হয়ে গিয়েছে।” স্থানীয় বাসিন্দা তথা বিজেপি নেতা সঞ্জীব মোহান্তির দাবি, গত দু’মাসে শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ১০টি মোটরবাইক চুরি হয়ে গিয়েছে। তাঁর আরও অভিযোগ, মাস কয়েক আগে নেতাজী সুভাষ রোডের বড় ডাকঘরের সামনের বিকল সিসিটির সামনে পানগুমটি ও মোবাইলের দোকানে চুরি হয়।
রানিগঞ্জের সিপিএম পুরপ্রধান অনুপ মিত্র বলেন, “রানিগঞ্জের মত গুরুত্বপূর্ণ খনি শহরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসনের অনেক বেশি সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন। সিসিটিভি বসানোর পরিকল্পনা ভাল উদ্যোগ। । কিন্তু বাস্তবে সেই উদ্যোগ দুরাশায় পরিণত হয়েছে।” রানিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক সোহরাব আলির অবশ্য আশ্বাস, “শহরের নিরাপত্তার জন্য স্থায়ী সিসিটিভির ব্যবস্থা করা হবে।”
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহযোগিতায় ওই সিসিটিভিগুলি বসানো হয়েছিল। কিন্ত রক্ষণাবেক্ষণ করার তহবিল না থাকায় সেগুলি বিকল হয়ে গিয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে তারবিহীন সিসিটিভি বসানোর ব্যবস্থা করা হবে।”