নামেই পুরসভা, হাল পাল্টায়নি শহরের

পুরসভা হিসেবে ঘোষণা হয়েছে বছর কুড়ি আগে। কিন্তু এখনও সেই অনুযায়ী পরিষেবার নাম নেই। জামুড়িয়া শহর নিয়ে এমনই খেদ বাসিন্দাদের। অর্ধেক পুর এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা, নিকাশি নিয়ে জেরবার দশা, দূষণে হাঁসফাঁস অবস্থা— এ সব নিয়েই দিন কাটছে খনি অঞ্চলে ঘেরা এই জনপদের। অথচ, পুরসভা হওয়ার পরে নাগরিক পরিষেবা ছাড়াও কর্মসংস্থান, যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে স্বাস্থ্য পরিষেব— সবেই উন্নতি আশা করেছিলেন এলাকার মানুষ। তা পূরণ না হওয়ার দায় একে অপরের উপরে চাপাতে ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলি।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৫৯
Share:

বাঁ দিকে, নিকাশির উন্নতি নেই। ডান দিকে, কল থাকলেও জল মেলে না। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

পুরসভা হিসেবে ঘোষণা হয়েছে বছর কুড়ি আগে। কিন্তু এখনও সেই অনুযায়ী পরিষেবার নাম নেই। জামুড়িয়া শহর নিয়ে এমনই খেদ বাসিন্দাদের।

Advertisement

অর্ধেক পুর এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা, নিকাশি নিয়ে জেরবার দশা, দূষণে হাঁসফাঁস অবস্থা— এ সব নিয়েই দিন কাটছে খনি অঞ্চলে ঘেরা এই জনপদের। অথচ, পুরসভা হওয়ার পরে নাগরিক পরিষেবা ছাড়াও কর্মসংস্থান, যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে স্বাস্থ্য পরিষেব— সবেই উন্নতি আশা করেছিলেন এলাকার মানুষ। তা পূরণ না হওয়ার দায় একে অপরের উপরে চাপাতে ব্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলি।

চার পাশে কয়লা খনি তৈরি হওয়ার পরে জামুড়িয়া গ্রামের পাশে বাজার গড়ে ওঠে। এক সময়ে চাল ও ঘিয়ের বড় পাইকারি বাজার হিসেবে নাম ছিল জামুড়িয়ার। লাগোয়া এলাকার একটি মাঠে নায়েক পরিবার নুনের পাইকারি বাজার তৈরি করে। নুন এনে জমা রাখা হত ওই মাঠে। স্থানীয় সাহিত্যিক শান্তিময় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তার পর থেকে ওই এলাকার নাম হয়ে যায় নুনডিহি। পরে তা বদলে হয়েছে নন্ডি গ্রাম।

Advertisement

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৬৭ সালে গঠিত হয় নন্ডি ইউনিয়ন বোর্ড। ১৯৮৩ সালে এই এলাকাকে নিয়ে কুড়িটি গ্রাম পঞ্চায়েত ও জামুড়িয়া পঞ্চায়েত সমিতি তৈরি করা হয়। ১৯৯৩ সালে জামুড়িয়া গ্রাম-সহ দশটি পঞ্চায়েতকে এক করে জামুড়িয়া নোটিফায়েড অথরিটি গঠন করা হয়। দেড় বছরের মধ্যে নোটিফায়েড অথরিটিকে ২২টি ওয়ার্ডে ভাগ করে জামুড়িয়া পুরসভার জন্ম হয়। পাঁচ বছর আগে ওয়ার্ড সংখ্যা বেড়ে ২৩, সম্প্রতি আরও একটি বাড়িয়ে ২৪ করা হয়েছে।

বাসিন্দাদের অনেকেরই অভিযোগ, পঞ্চায়েত থেকে পুরসভায় রূপান্তর হলেও কোন সুফল মেলেনি। এখনও অর্ধেক এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়নি। ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে অজয় নদের পাড়ে একটি জল প্রকল্প তৈরি করা হয়। ওই প্রকল্প থেকে যে ৯টি ওয়ার্ডে জল সরবরাহের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল, সে সব জায়গাতেও ঠিক মতো জল মেলে না বলে অভিযোগ। শহরের নানা এলাকায় জলের দাবিতে সারা বছরই বিক্ষোভ লেগে থাকে। গোড়া থেকেই এই পুরবোর্ড রয়েছে বামেদের দখলে। বর্তমান পুরসভার একমাত্র বিরোধী কাউন্সিলর কংগ্রেসের গোপাল দত্ত অভিযোগ করেন, জলের সমস্যা মেটাতে পুরবোর্ড কিছুই করেনি। শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডে শান্তিনগর থেকে ২৪ নম্বরের পরিহারপুর—সর্বত্র একই সমস্যা। বেনিয়াপট্টি বেলতলা, হরপুরা গ্রাম, বাকশিমুলিয়া, পাথরডাঙা, কেশবডাঙা, নর্থব্রুক এলাকা, জবা মাঝিপাড়া, নিঘা অফিসপাড়া, ইমন ধাওড়া—বহু জায়গাতেই শহরের সারা বছর ধরে জলের সমস্যায় ভোগেন পুরবাসীরা। কোথাও কল বসানো হলেও জল মেলে না, কোথাও আবার এখনও জলের পাইপলাইনই পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ।

শুধু জল নয়, সমস্যা রয়েছে নিকাশি নিয়েও। শহরের প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর আব্দুল বারিক অভিযোগ করেন, পুরসভার কর্মীদের মধ্যে বেশির ভাগই অস্থায়ী। শহরের সাফাই করার জন্য পর্যাপ্ত কর্মী নেই। জামুড়িয়া বাজার-সহ লাগোয়া এলাকার নিকাশি জল গিয়ে পড়ে কমলিবাঁধ নামে একটি পুকুরে। ফলে, সেই জল অনেক কাজেই আর ব্যবহার করা যায় না। পুর এলাকার বহু জায়গায় এখনও অবৈজ্ঞানিক উপায়ে তৈরি শৌচাগার রয়ে গিয়েছে। নিকাশি ব্যবস্থা আধুনিক করার জন্য কখনও তেমন উদ্যোগ হয়নি বলে ক্ষোভ শহরবাসীর অনেকেরই।

পরিষেবার উন্নতি না হওয়ার অভিযোগে বাম পুরবোর্ডকে দুষছে বিরোধীরা। তৃণমূলের জামুড়িয়া ১ ব্লক সভাপতি পূর্ণশশী রায়ের কথায়, “বারবার দাবি-দাওয়া জানিয়েও কোনও ফল হয়নি।” বামেরা আবার অনুন্নয়নের অভিযোগ মানতে নারাজ। বরং কংগ্রেস আঠাশ বছর ইউনিয়ন বোর্ডে থেকেও কিছু করেনি দাবি করে সিপিএমের মনোজ দত্ত বলেন, “আমাদের সময়ে নজরুর শতবর্ষ ভবন তৈরি হয়েছে। নানা এলাকায় কমিউনিটি হল তৈরি করা হয়েছে। জামুড়িয়ায় ২৫টি ক্ষুদ্রশিল্প কারখানা চালু হয়েছে। সমস্ত গ্রামেই বিদ্যুদয়নের কাজ শেষ হয়েছে।”

নাগরিক পরিষেবা কতটা উন্নত হয়েছে, তা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা চলছেই। শহরের পরিবহণ ব্যবস্থা ও যাতায়াতের সুযোগ-সুবিধা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বরাবরই।

(চলবে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement