দু’দিকে জমায়েত সামলাচ্ছে পুলিশ, থমকে যাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র
অন্য দিন রিকশা-টোটোয় গিজগিজ করে চত্বর। অহরহ চলতে থাকে যাত্রী, স্টেশন বাজার এলাকার আনাজ-মাছ ব্যবসায়ীদের হুটোপাটি। মঙ্গলবার বিজেপি, তৃণমূল সমর্থকদের জড়ো হতে দেখেই সুনসান হয়ে গিয়েছিল এলাকা। দুপুরে বোমাবাজির পরে আতঙ্কে বন্ধ হয়ে যায় দোকানের ঝাঁপ, শিকল ওঠে বাড়ির দরজায়। বন্ধ হয়ে ওই রাস্তায় থাকা একাধিক সরকারি দফতরও।
দুই রাজনৈতিক দলের এলাকা ‘দখলে’র লড়াই থামাতে মাঠে নামে পুলিশ, র্যাফ, স্ট্র্যাকো বাহিনী। ধরপাকড়, লাঠিচার্জ, তল্লাশির জেরে থমকে যায় এলাকা। বর্ধমান শহরের মেহেদিবাগান, লক্ষ্মীপুর মাঠ, বাদামতলা, চৌধুরি চিঁড়ে মিলের গলিতে পুলিশের তাড়া খেয়ে ছুটে পালাতে দেখা যায় লোকজনকে। আটকে পড়ে এলাকার সাধুমতি বালিকা বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। অভিভাবক মনোরমা দেবী বলেন, “বোমাবাজি, পুলিশের ভয়ে মেয়েকে বাড়ি নিয়ে যেতে পারছি না। চিন্তা হচ্ছে।’’ যেখানে বোমা পড়েছে, সেই এলাকার বাসিন্দাদের কথায়, “আমরা সাতেপাঁচে থাকি না। অথচ আমাদের গলিতেই কে বা কারা বোমা ছুড়ল। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে ভয় তো লাগবেই।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গুডস শেড রোডের বেশ কিছু বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। কয়েকজনকে আটক করা হয়। আতঙ্কে দোকান বন্ধ করে দেন এলাকার প্রায় সমস্ত ব্যবসায়ী। লোকাল ট্রেনের বেসরকারি টিকিট কাউন্টারও বন্ধ হয়ে যায়। স্টেশন বাজার এলাকার ব্যবসায়ীদের দাবি, ‘‘চারিদিকে হুটোপাটি লেগে গিয়েছে। আতঙ্কে যাত্রী থেকে খদ্দেররা ছোটাছুটি করছেন। এ অবস্থায় কী আনাজ নিয়ে বসা যায়!” এক টোটো চালকের কথায়, “ভয়ে টোটো নিয়ে স্টেশনে ঢুকিনি। শেষে আমাদেরই রাজনীতির শিকার হতে হবে।’’
বিজেপির সাংগঠনিক জেলা (বর্ধমান সদর) সভাপতি সন্দীপ নন্দী দাবি করেন, “আতঙ্ক ধরিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিজেপিকে বিচ্ছিন্ন করার চক্রান্ত করছে তৃণমূল। রাজ্য কমিটিকে বর্ধমানে আসার জন্যে বলা হচ্ছে।’’ তৃণমূলের শহর সভাপতি অরূপ দাসের পাল্টা, “এক কুখ্যাত লোককে দলে নিয়ে প্রথমে এলাকা উত্তপ্ত করেছে। এখন বোমাবাজি করে আতঙ্ক ধরাতে চাইছে। এর জবাব মানুষই দেবে।’’
যদিও জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের আশ্বাস, “আতঙ্কের কিছু নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক। পুলিশ টহল দিচ্ছে এলাকায়।’’ এ দিন রাতে ঘোড়দৌড়চটি কার্যালয় থেকে একটি প্রতিবাদ মিছিল করে বিজেপি। কার্জন গেটে অবস্থানও হয়।