—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কালীপুজোর রাতে, রবিবার দুর্গাপুর ও আসানসোল শিল্পাঞ্চলের বাতাসে দূষণের মাত্রা বিশেষ হেরফের হয়নি। এমনটাই জানা গিয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রে। এই দুই শিল্পাঞ্চলে শব্দবাজির দাপটও কম ছিল বলে জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। বাজি বাজারে পুলিশের লাগাতার নজরদারি এবং পর্ষদের সচেতনতা প্রচারের ফলে এ বার কিছুটা সুফল মিলেছে বলে মনে করছেন আসানসোল ও দুর্গাপুরবাসী। তবে রানিগঞ্জ শহরের কিছু এলাকায় শব্দবাজির দাপট বেশি ছিল অভিযোগ উঠেছে। বাজি নিয়ে জেলার কোনও প্রান্ত থেকে অভিযোগ আসেনি বলে দাবি পুলিশ কর্তাদের।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় ৪০ জনকে পরিবেশবান্ধব সবুজবাজি বিক্রির অনুমতি (লাইসেন্স) দেওয়া হয়েছে। দুর্গাপুর শহরের প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, মাঝেমধ্যে দু’-একটি বাজির বিকট শব্দ ছাড়া কালীপুজোর রাত মোটামুটি নির্বিঘ্নেই কেটেছে। তবে আতশবাজি অনেক পুড়েছে। ফানুসও উড়েছে।
পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাজির কারণে বাতাসে মূলত সালফার ডাই অক্সাইডের মাত্রার হেরফের হয়ে থাকে। বাজির ধোঁয়ায় থাকা সালফার ডাই অক্সাইড শ্বাসনালীর প্রদাহ, ত্বকের ‘অ্যালার্জি’ সৃষ্টি করতে পারে। বাতাসে সালফার ডাই অক্সাইডের স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি কিউবিক মিটারে ৬০ মাইক্রোগ্রাম। সিধো-কানহো ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বসানো পর্ষদের দূষণ পরিমাপক যন্ত্রের হিসাব অনুযায়ী, দুর্গাপুরে শনিবার বাতাসে সালফার ডাই অক্সাইডের গড় মাত্রা ছিল প্রতি কিউবিক মিটারে প্রায় ২৭.৮৭ মাইক্রোগ্রাম। কালীপুজোর রাতে, রবিবার তা ঘোরাফেরা করেছে ৩০-এর আশপাশে। পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ প্রতি কিউবিক মিটারে সালফার ডাই অক্সাইডের মাত্রা ছিল প্রায় ২৮.৫১ মাইক্রোগ্রাম। ঘণ্টাখানেক পরে, তা বেড়ে হয় ৩০.৮৫ মাইক্রোগ্রাম। এর পরে, তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। রাত ৮টা নাগাদ তা কমে হয় ২৭.৭৬, রাত ৯টায় ছিল ২৭.২২, রাত ১০টায় তা আরও কমে হয় ২৫.৯৩। পর্ষদ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, বাজির ধোঁয়ার অন্যতম ক্ষতিকর উপাদান হল কার্বন মনোক্সাইড। বাতাসে স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি কিউবিক মিটারে ৪ মাইক্রোগ্রাম। সাধারণত বছরের এই সময় দুর্গাপুরে এই মাত্রা ঘোরাফেরা করে ১ মাইক্রোগ্রামের আশপাশে। কালীপুজোর রাতেও তার খুব একটা হেরফের হয়নি বলে পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে।
প্রায় একই চিত্র আসানসোলেও। আসানসোল কোর্ট এরিয়ায় বসানো স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের হিসাব অনুযায়ী, রবিবার রাত সাড়ে ৭টা নাগাদ সালফার ডাই অক্সাইডের মাত্রা ছিল ৮.০২। কার্বন মনোক্সাইড ০.৩৮। অর্থাৎ স্বাভাবিকের থেকে অনেক কম।
তবে শব্দবাজি নিয়ে জেলায় খুব একটা নেই। কুলটির সুমনা লায়েক, ডিসেরগড় টালিগঞ্জ এলাকার অশোক আচার্য, রানিগঞ্জের চাপুই গ্রামের কাঞ্চন সাধুরা জানান, অন্যবারের তুলনায় শব্দবাজির দাপট অনেক কম। একই বক্তব্য অন্ডালের শ্রীরামপুর গ্রামের বিকাশ মিত্র, পাণ্ডবেশ্বরের মহেশ মণ্ডলদেরও। কিন্তু রানিগঞ্জের বাসিন্দা, চিকিৎসক সমরেন্দ্রকুমার বসু, আইনজীবী রত্নপানি মুখোপাধ্যায়দের অভিযোগ, পুজোর রাত ৪টে পর্যন্ত শব্দবাজির আওয়াজে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। সমরেন্দ্র বলেন,“রাতে ঘুমোতে পারিনি। প্রশাসনের আরও কড়া হাতে এই বিষয়টির মোকাবিলা করা দরকার ছিল।” রত্নপানির দাবি, জেলার মধ্যে রানিগঞ্জ সব থেকে পুরনো শব্দবাজির বাজার। বৈধ থেকে অবৈধ ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে সবুজবাজি সাজিয়ে রাখলেও, আড়াল থেকে নিষিদ্ধ বাজি বিক্রিকরেন।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আসানসোল শাখার মুখ্য বাস্তুকার সুদীপ ভট্টাচার্য জানান, সোমবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত শব্দবাজি নিয়ে অভিযোগ তাঁরা পাননি। পুলিশ কমিশনারেটের এক আধিকারিক জানান, শব্দবাজির মোকাবিলায় পুলিশি বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।