শুকোতে দেওয়া হচ্ছে প্রতিমা। —নিজস্ব চিত্র।
দিন দিন দাম বাড়ছে প্রতিমা তৈরির নানা কাঁচামালের। সেই অনুপাতে দাম বাড়ছে না প্রতিমার। এমনটাই দাবি দুর্গাপুরের বিভিন্ন প্রতিমা শিল্পীদের। ফলে দুর্গা প্রতিমা বিক্রি করে লাভের পরিমাণ অনেকটা কমছে। তাঁদের দাবি, প্রতিমা তৈরির খরচও বাড়ছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ চালিয়ে যাওয়ায় ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে তাঁদের কাছে।
আর মাত্র কয়েক দিন পরেই শারোদৎসব। দুর্গাপুরেও বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে চলছে সাজো-সাজো রব। শহরের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠছে বড় বড় মণ্ডপ। পুজোর দিন যত এগিয়ে আসছে ততই কর্মব্যস্ততা বাড়ছে শহরের বিভিন্ন কুমোরপাড়াগুলিতে। কোথাও প্রতিমা তৈরির শেষ মুহুর্তের কাজ চলছে, তো কোথাও কাঠামোর উপর মাটি লাগিয়ে তা শুকোনোর কাজ চলছে। দুর্গাপুরে প্রতি বছরই বিভিন্ন জায়গায় গড় ওঠে বড়-বড় মণ্ডপ। তার সঙ্গে থাকে মানানসই প্রতিমা।
দুর্গাপুর শহরের বিভিন্ন মণ্ডপের প্রতিমাও তৈরি করা হয় দুর্গাপুরের শিল্পীদের হাতেই। কাজেই প্রতিমা শিল্পীরাও দুর্গাপুজোর সময় ভালই বরাত পান। পুজোর জাঁকজমক বাড়লেও শিল্পীদের প্রতিমা তৈরির খরচ যে দিন-দিন বাড়ছে তা বিভিন্ন শিল্পীর সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে। শহরের বিভিন্ন প্রতিমা শিল্পীরা জানান, দিন-দিন বাড়ছে প্রতিমা তৈরির কাঁচামালের দাম। কিন্তু প্রতিমার দাম সেই অনুপাতে বাড়ছে না। তা ছাড়া এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন অনেক কর্মীও। তাঁদের কেউ মাসিক বেতনে, আবার কেউ আছেন চুক্তির ভিত্তিতে।
শহরের বিভিন্ন শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, প্রতিমা তৈরি করতে বিভিন্ন ধরনের সরঞ্জাম লাগে। মাটি লাগে দু’ধরনের। সুতলি, পেরেক, প্লাই-সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম লাগে একটি প্রতিমা তৈরি করতে। আর সে সব জিনিসের দাম বাড়ছে দিনের পর দিন। প্রতিমার কাঠামো তৈরিতে প্রথমেই লাগে খড়। কয়েক বছরে যার দামও বেড়েছে অনেকটা। বেনাচিতির জেকে পাল লেনের প্রতিমা শিল্পী অরুণ পাল এ বছর ৩৬টি প্রতিমা তৈরি করছেন। বেশির ভাগই শহরের বিভিন্ন মণ্ডপে যাবে। অরুণবাবু জানান, প্রতিমার কাঠামো তৈরি করতে বাঁশ লাগে। সেই বাঁশও কিনে আনতে হয়।
অরুণবাবুর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁরা প্রতিমা তৈরির জন্য দু’ধরনের মাটি ব্যবহার করেন। খড়ের কাঠামোর উপরে যে মাটি লাগানো হয় সেটি নিয়ে আসা হয় ডায়মন্ডহারবার থেকে। অরুণবাবুর দাবি, সেই মাটি লরি করে নিয়ে আসতে হয়। যার গাড়ি পিছু দাম সাড়ে সাত হাজার টাকা। তিনি জানান, এক মরসুমে সে রকম দু’গাড়ি মাটি লাগে তাঁর। প্রথম মাটি লাগানোর পরে আবার আর এক ধরনের মাটি দিতে হয় প্রতিমার উপরে। সেটি নিয়ে আসতে হয় কালনা থেকে। গঙ্গার পলি মাটি এটি। তারও দাম বেড়েছে অনেকটা। শহরের আরও শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, এ বছর সুতলির দাম কয়েক দিন আগেই হয়েছে ৭৫ টাকা কেজি। যা ছিল ৬০-৬২ টাকার মধ্যে।
এমএএমসি এলাকার শিল্পী সন্তোষ সূত্রধর, দুর্গাপুর পশ্চিম রেলগেট এলাকার কেষ্ট পাল বা পলাশডিহার গণেশ পালেরা জানান, প্রতিমা তৈরির খরচ শেষ দশ বছরে বেড়েছে অনেকটাই। বছর-বছর তা বেড়েই চলেছে। কিন্তু প্রতিমা বিক্রির ক্ষেত্রে দাম ততটা বাড়ছে না।
শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তারা প্রায় প্রতি বার একই শিল্পীর কাছে প্রতিমা নেন। কাজেই দরদামের ক্ষেত্রেও ততটা হেরফের হয় না। শিল্পীরা জানান, এক সঙ্গে অনেকগুলি প্রতিমা তৈরির জন্য দরকার হয় প্রচুর দক্ষ কর্মীর। তাঁদের বেতন দিয়ে রাখতে হয়। এ ছাড়া এখন অনেকে ভাল রং ব্যবহার করছেন। বিভিন্ন নামীদামি সংস্থার রং ব্যবহার করছেন শিল্পীরা। যার দামও বেশ ভাল।
এ তো গেল প্রতিমা তৈরির সরঞ্জামের কথা। এ পরে যদি আবার বৃষ্টি শুরু হয়ে যায় তাহলে কয়লা জ্বালিয়ে প্রতিমা শুকোনোর ব্যবস্থাও করতে হয়। সেখানে খরচ এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে যায়। যা হয়েছিল গত বছর। প্রতিমা শিল্পীদের দাবি, দশ বছর আগেও একটি প্রতিমা বিক্রি করে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত লাভ পাওয়া যেত। কিন্তু এখন সেটি দশ থেকে পনেরোর আশপাশে এসে দাঁড়িয়েছে। শিল্পীদের দাবি, সব জিনিসেরই দাম বাড়ছে। শুধু প্রতিমার ক্ষেত্রেই দাম বাড়ায় সমস্যায় পড়তে হয় উদ্যোক্তাদের।