arrest

Arrest: ‘মদ-কাণ্ডে’ ধৃত হোটেল মালিক

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের পরিবারগুলির দাবি মেনে অস্বাভাবিক মামলা রুজু করে প্রত্যেকটি দেহের ময়না-তদন্ত করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২২ ০৭:২৮
Share:

পুলিশ-পাহারায় গণেশ পাসোয়ান। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র।

মদ-কাণ্ডে বর্ধমান শহরের জিটি রোডের কলেজ মোড় এলাকার (লক্ষ্মীপুর মাঠ) হোটেল মালিক গণেশ পাসোয়ানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মৃতদের পরিবারগুলির দাবি, মদ ও খাবারে বিষক্রিয়ার জেরে ন’জন মারা যান। যাঁদের মধ্যে ছ’জন গণেশের হোটেলেই মদ্যপান করেছিলেন বলে অভিযোগ। বাকি তিন জনের মধ্যে দুই হোটেল ব্যবসায়ী ভাইয়ের পরিবারের দাবি, তাঁরা খাবারে বিষক্রিয়ায় মারা গিয়েছেন। মদ্যপানের কথা মানতে চাননি তাঁরা। গলসির বাসিন্দা, বর্ধমানের গয়নার দোকানের এক কর্মীও দেশি মদের বিষক্রিয়ায় মারা যান বলে পরিবারের দাবি। তবে তিনি কোন হোটেলে মদ্যপান করেছিলেন তা জানা যায়নি।

Advertisement

বর্ধমান থানার দাবি, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই ঘটনা নিয়ে হইচই হওয়ার পরে, হোটেল মালিক গণেশ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে, খোসবাগানের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে সেখান থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে, পুলিশ ওই নার্সিংহোমের সামনে থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের কাছে গণেশ জানিয়েছেন, সরকারি দেশি মদের সঙ্গে ‘ভেজাল’ মেশানো হয়েছিল। পুলিশেরও ধারণা, রাসায়নিক জাতীয় কিছু মেশানো হয়েছিল। এ দিন গণেশকে চার দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠায় আদালত।

মদ-কাণ্ডে প্রথম মারা যাওয়ার খবর মেলে শহরের বাহির সর্বমঙ্গলা পাড়া থেকে। মৃত হালিম শেখের দাদা হাবিবুর শেখ বর্ধমান থানায় অভিযোগ করেন, গত বুধবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ তাঁর ভাই-সহ আরও কয়েকজন গণেশের হোটেলে গিয়ে সরকারি ব্র্যান্ডের দেশি মদ পান করেন। পরদিন সকাল থেকে তাঁদের মধ্যে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। সন্ধ্যায় বর্ধমান মেডিক্যাল ও শহরের বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল-নার্সিংহোমে ভর্তি হন অসুস্থেরা। রাত ৯টা নাগাদ তাঁর ভাই মারা যান। অভিযোগে তাঁর দাবি, নেশা বাড়ানোর জন্য মদে বিষাক্ত কিছু মেশানো হয়েছিল। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২, ৩২৮, ২৭২ ও ১২০ (বি) ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘গণেশকে বিশদে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরেই ঠিক ছবিটা পাওয়া যাবে।’’ সোমবার মদে মেশানো বিষাক্ত জিনিস খুঁজতে ওই হোটেলে হানা দেন স্বাস্থ্য দফতরের খাদ্য সুরক্ষা বিভাগও।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের পরিবারগুলির দাবি মেনে অস্বাভাবিক মামলা রুজু করে প্রত্যেকটি দেহের ময়না-তদন্ত করা হয়েছে। ময়না-তদন্তের সময়ে জেলা গোয়েন্দা দফতর ‘ভিডিয়োগ্রাফি’ করে। মেডিক্যাল থেকে এখনও যতগুলি ময়না-তদন্তের রিপোর্ট মিলেছে, তাতে বেশির ভাগ জনের দেহেই মদের অস্তিত্ব মিলেছে। মদে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু কি না জানার জন্য পুলিশ ফরেন্সিকের সাহায্য নিয়েছে। ভিসেরা পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছে। আবগারি দফতরের রিপোর্টে অবশ্য দেশি মদের বোতলে ক্ষতিকারক কিছুর সন্ধান মেলেনি বলে জানানো হয়েছে। জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) প্রিয়াঙ্কা সিংলা এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘বেআইনি ভাবে মদ বিক্রি বন্ধ করার জন্য কড়া নির্দেশদেওয়া হয়েছে।’’

মৃতদের পরিবারের তরফে নেহা খাতুন, ছোট্টু শেখ, হানিফা বিবিদের অভিযোগ, ‘‘জিটি রোডের ধারে ভাতের হোটেলে মদ বিক্রি অনেক দিন ধরে চলে। শহরের ভিতরে এ রকম বেআইনি কাজ বন্ধ করার উদ্যোগ ছিল না। আমাদের আত্মীয়েরা নেশার কবলে পড়ে মারা গেলেন। আমরা ওই হোটেল ব্যবসায়ীর কড়া শাস্তির সঙ্গে বেআইনি মদ বিক্রি থেকে চোলাইয়ের ঠেকগুলি ভেঙে ফেলা হোক।’’ পুলিশ ও আবগারি দফতর সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার থেকে টানা অভিযান চালিয়ে কয়েক হাজার লিটার চোলাই নষ্ট করা হয়েছে। প্রায় দু’শো জন বেআইনি মদের কারবারিকেও ধরা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement