ঝুঁকির অস্ত্রোপচারে সফল হাসপাতাল, বাঁচল কিশোর

বাড়িতে অভাবের সংসার। এর মধ্যে ঘরের সব থেকে ছোট ছেলে, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র অমর বাগদির বগলের কাছে হাড়ে টিউমার ধরা পড়ার খবরে ঘরের চিন্তা আরও বাড়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:০৩
Share:

সুস্থ হচ্ছে অমর। নিজস্ব চিত্র।

বাড়িতে অভাবের সংসার। এর মধ্যে ঘরের সব থেকে ছোট ছেলে, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র অমর বাগদির বগলের কাছে হাড়ে টিউমার ধরা পড়ার খবরে ঘরের চিন্তা আরও বাড়ে। চিকিৎসকেরা জানান, অমরকে সুস্থ করতে জটিল অস্ত্রোপচার করতে হবে। তার জন্য খরচও অনেক। কিন্তু সে সব চিন্তা সরিয়ে রেখেই বিনা খরচে সোমবার সফল ভাবে অমরের অস্ত্রোপচার করা হল আসানসোল জেলা হাসপাতালে। এমনকী হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের উপযুক্ত পরিকাঠামোও ছিল না বলে দাবি চিকিৎসকদের।

Advertisement

হিরাপুরের বাসিন্দা, পেশায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে স্বপন বাগদি জানান, দুই ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে তাঁর অভাবের সংসার। ছোট ছেলে অমর হিরাপুর মানিকচাঁদ ঠাকুর ইনস্টিটিউশনের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। মাস খানেক আগে আচমকা টিউমারটি গজিয়ে ওঠে। পড়শিদের পরামর্শে মাস দুয়েক আগে ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন স্বপনবাবু। সেখানেই অস্ত্রোপচারের তারিখ দেওয়া হয়।

অস্ত্রোপচারটি বেশ জটিল ছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি। কেন? অমরের অস্ত্রোপচার করেছেন অর্থোপেডিক সার্জেন নির্ঝর মাঝি। তিনি জানান, স্নায়ু, ধমনি ও শিরার মাঝে প্রায় ১২ বাই ৮ সেন্টিমিটার মাপের টিউমারটি হয়েছিল। এই ধরনের অস্ত্রোপচার করার জন্য ‘সিরাম’ যন্ত্র থাকার কথা থাকলেও আসানসোলে তা নেই। তা ছাড়া সামান্যতম রক্তক্ষরণ হলে হাত সরু বা পঙ্গু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু এর পরেও ঝুঁকি নেন নির্ঝরবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘দুঃস্থ পরিবারটির দিকে তাকিয়ে আমার মনে হল, বিনা যন্ত্রেই মনোযোগ দিয়ে অস্ত্রোপচার করব। বিশ্বাস ছিল, সফল হবই।’’ কলকাতার একটি নামী বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক রাজর্ষি বসুও বলেন, ‘‘সিরাম ছাড়া এ ধরনের অস্ত্রোপচার নিঃসন্দেহে ঝুঁকিপূর্ণ।’’

Advertisement

সুপার নিখিলচন্দ্র দাস ওই সার্জেনকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘‘আমি গর্বিত। জেলা হাসপাতালে এ ধরনের অস্ত্রোপচার এই প্রথম হল।’’ হাসপাতালের নতুন ভবন তৈরির কাজ শেষ হয়ে গেল, যন্ত্রটিও আনা হবে বলে তাঁর আশ্বাস। চিকিৎসকেরা জানান, বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে এই ধরনের অস্ত্রোপচারের খরচ ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকা। জেলা হাসপাতালে এক টাকাও দিতে হয়নি বলে জানান অমরের বাবা স্বপনবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘বিনা খরচে এমন সুযোগ মিলবে ভাবিনি। আমি কৃতজ্ঞ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement