দুর্গাপুরে সিটি সেন্টারে তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের অনুষ্ঠান।
ভিন দেশ থেকে জড়ো হয়েছেন ওঁরা। উদ্দেশ্য একটাই, শহিদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানানো। কোথাও আাবার প্রবীণ লেখক, শিল্পীরা ফাগুনে রোদ্দুরে পা মেলালেন গর্বের ভাষার জন্য। রবিবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এমনই বিভিন্ন টুকরো টুকরো ছবি দেখা গেল জেলা জুড়ে।
বর্ধমানে জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উদ্যাপন করা হয়। সেখানেই ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হন জিবুতি, দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ, চিন-সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রায় দশ জন পড়ুয়া। এ পার বাংলায় এ রকম আয়োজন দেখে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশের মহম্মদ জাহাঙ্গীর, তামিমারা। এ দিন একটি প্রভাতফেরিরও আয়োজন করা হয়। তাতে হাঁটতে দেখা যায় চিরঞ্জিৎ ভাণ্ডারী, দেবু দাস-সহ বহু স্কুল পড়ুয়াদের। তাঁদের হাতে ছিল ‘অমর একুশে’ স্মরণে পোস্টার, প্ল্যাকার্ড। ভাতশালা শিশু নিকেতন স্কুলে শহিদ স্মরণে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। ছিলেন সভাধিপতি দেবু টুডু, তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক মুনমুন হোড় সিংহ প্রমুখ।
এ ছাড়াও বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের বর্ধমান শাখার তরফে ভাষা আন্দোলন নিয়ে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। উদয়চাঁদ গ্রন্থাগার থেকে গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সঙ্ঘ, ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ, ‘আলাপ’, ‘আয়না’ নামে কয়েকটি সংগঠন একত্রে শোভাযাত্রা বের করে। এ দিন সকাল থেকেই কার্জন গেট চত্বরেও ছিল উৎসবের মেজাজ। সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন কানাইলাল বিশ্বাস। তাঁর কথায়, ‘‘এই দিনটি বাংলা-সহ পৃথিবীর সমস্ত ভাষাকে সম্মান জানানোর দিন। তাই বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।’’
বর্ধমান ছাড়িয়ে কাটোয়ার বিভিন্ন এলাকাতেও ভাষা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ভাষা শহিদ স্মারক চত্বরে অনুষ্ঠান করে কাটোয়া পুরসভা। ছিলেন পুরপ্রধান অমর রাম। ভাষা শহিদ স্মারক সমিতির কাটোয়া শাখার উদ্যোগে গান, কবিতা, আলোচনাসভা আয়োজিত হয় রবীন্দ্র ভবনে। সংবর্ধনা জানানো হয় লেখক দিলীপ সাহাকে। কাটোয়া অভিযাত্রী স্কাউটস্ অ্যান্ড গাইড্স গ্রুপের উদ্যোগে ভারতী ভবন উচ্চ বিদ্যালয়ে ভাষা-শহিদদের স্মরণে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ভাষা দিবস উপলক্ষে নাটকের আয়োজন করে পানুহাটে ‘অষ্টক’ সাংস্কৃতিক সংস্থা। সংস্থার তরফে হীরক মণ্ডল জানান, লুমলেস ময়দানে রবীন্দ্রনগর নাট্যায়ুধ ‘পাঁক’ নামে একটি নাটক পরিবেশন করে। দাঁইহাটেও ‘ইন্দ্রাণী’ সাংস্কৃতিক সংস্থার তরফে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়। কেতুগ্রামের কুড়ুম্বোগ্রামেও মিলনী সঙ্ঘের উদ্যোগে ভাষা দিবস পালিত হয়।
ভাষা-শহিদ স্মরণে ভিনদেশিরাও, বর্ধমানে এবং কাটোয়ায় শহিদ-স্মারকের সামনে শ্রদ্ধা।—নিজস্ব চিত্র।
জেলার শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকাতেও যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে দিনটি পালিত হয়। ডিসেরগড় পূর্বাঞ্চল কমিউনিটি সেন্টারে ‘বাংলা বিদ্যাসভা’ নামে একটি সংস্থার উদ্যোগে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সভায় বক্তারা মানভুমের ভাষা আন্দোলনের কথাও তুলে ধরেন। ছিল স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। এ ছাড়াও নজর কাড়ে সন্দীপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঝুমুর ও হারাধন দাসের বাউল। আলোচনাসভার আয়োজন করে ‘ঐক্য’ পত্রিকা। পাণ্ডবেশ্বরে অজয়ঘাটের কাছে রাধাগোবিন্দ আশ্রমের ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক জয়া মিত্র। প্রায় ৬০ জন কবি স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন। বাউল পরিবেশন করেন লক্ষ্মণদাস। আসানসোলের স্পন্দন পার্ক থেকে পদযাত্রার আয়োজন করে ভাষা শহিদ স্মারক সমিতির আসানসোল শাখা ও আসানসোল সাহিত্যপ্রেমী লেখক কবি সমাবেশ। শনিবার একটি আলোচনাসভাও আয়োজিত হয়। রানিগঞ্জের ফেমাস ক্লাব আবার এই দিনটির স্মরণে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। উদ্যোক্তারা জানান, কুমারবাজার বিবেকানন্দ সেবাশ্রম ময়দানে আয়োজিত ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মোট ২০টি বিভাগে দু’শো জন প্রতিযোগী যোগ দেন। আসানসোল মহীশিলা বয়েজ হাইস্কুলে এলাকার পড়ুয়াদের হাতে বই তুলে দেয় ‘হৃদয়াঙ্গম’ নামে একটি সংস্থা। ‘সব পেয়েছির আসর’ নামের একটি সংস্থার উদ্যোগেও ভাষা দিবস উদ্যাপন করা হয়।
দুর্গাপুরেও ভাষা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের উদ্যোগে সিটি সেন্টারের তথ্যকেন্দ্রে কবিতা, গানের মাধ্যমে দিনটিকে স্মরণ করা হয়। নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের দুর্গাপুর শাখার তরফে স্নেহাশিস মুখোপাধ্যায় জানান, এডিসন ভাষা শহিদ উদ্যানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সিটি সেন্টারের সিটি অ্যাথলেটিক ক্লাবের তরফে পদযাত্রা ও দেওয়াল পত্রিকা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ধোবিঘাট কালী মন্দির থেকে প্রভাতফেরির আয়োজন করে দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল সংলগ্ন বস্তি কল্যাণ সমিতি।