হাটকালনার খুনের ঘটনার পুনর্গঠনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ধৃতকে।
২০১৩ সালে কালনা, মন্তেশ্বরে দুটি খুন। পরের হামলা ২০১৮-র অক্টোবরে। পুলিশের হিসেব অন্তত সে কথাই বলছে। তা হলে মাঝের পাঁচটা বছর কি হল? দুষ্কৃতী অপরাধ বন্ধ রেখেছিল কোনও কারণে, না কি সব অপরাধ নজরে আসেনি— সাতটি খুন-সহ ১৮টি হামলায় অভিযুক্ত কামরুজ্জামান সরকারকে গ্রেফতারের পর থেকে এমনই নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, টুলে বসে, জামার হাত গুটিয়ে ভাবলেশহীন হয়ে একের পর এক প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে ধৃত। কোনও কোনও প্রশ্নের উত্তর পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘তদন্তের শেষ বিন্দুতে পৌঁছনোর জন্যে আমাদের একটু পিছিয়ে যেতে হবে। ২০১৩ সালে কালনা ও মন্তেশ্বরে দু’টি খুনের পরে গত পাঁচ বছর ধরে কামরুজ্জামান কি করেছে, কাদের সঙ্গে মিশেছে বিস্তারিত তথ্য আমাদের জোগাড় করতে হবে।’’
মঙ্গলবার ধৃতকে হাটকালনার খুনের ঘটনার পুনর্গঠনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এক দফা জিজ্ঞাসাবাদও করেন পুলিশ কর্তারা। তদন্তকারীদের এক জনের কথায়, ‘‘পুলিশের সঙ্গে মানসিক ভাবে খেলার চেষ্টা করছে ধৃত। সব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পরখ করে দেখছে আমরা কতটা জানি। যদি বুঝছে, পুলিশ ওর সম্বন্ধে অনেক জেনে গিয়েছে, তখন নির্দিষ্ট ভাবে সেই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে।’’ পুলিশ জেনেছে, ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে কালনা ও মন্তেশ্বরে দুই খুনের আগে টানা এক বছর শ্বশুরবাড়ি সমুদ্রগড়ে ছিল ওই ‘সিরিয়াল কিলার’। তার পরে বাড়ি মুর্শিদাবাদের রানিনগরে ফিরে যায়। তারপর টানা আড়াই বছর সে ভাবে সমুদ্রগড়ে পা রাখেনি।
তদন্তকারী পুলিশ কর্তারা জানান, মুর্শিদাবাদে থাকাকালীন পারিবারিক সূত্রে পাওয়া দু’বিঘা জমিতে চাষ করত ধৃত। মাঝেমাঝে চুরি করার জন্যে মোটরবাইক নিয়ে মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান ও হুগলির বলাগড়-পান্ডুয়া যেত বলেও জেনেছে পুলিশ। মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি থানায় এক বার চুরির অভিযোগে ধরা পড়ে কয়েকদিন জেলও খেটেছিল সে। আর এক বার টানা তিন মাস বহরমপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে ছিল ধৃত। পুলিশের এক কর্তা বলেন, “স্রেফ চুরির ঘটনায় সাধারণত তিন মাস কেউ জেলে থাকে না। খুন বা অন্য কোনও অপরাধ কি না জানতে ওখানকার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।’’ পান্ডুয়া ও বলাগড়ে চোর সন্দেহে স্থানীয় বাসিন্দারা কামরুজ্জামানকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন বলেও জেনেছে পুলিশ। সেই সব ঘটনার বিস্তারিত তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে।
তদন্তকারীদের দাবি, ওই তিনটে জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার রাস্তাঘাট মুখস্থ কামরুজ্জামানের। বিভিন্ন গ্রামে চায়ের দোকানে আড্ডা দিয়ে ছোট ছোট তথ্য মাথায় ঢুকিয়ে নিত সে। তারপর একটি বাড়িকে ‘টার্গেট’ করে টানা দু’তিন দিন রেইকি করত। অনেক সময় দূর থেকেও নজর রাখত। পুলিশ কর্তাদের দাবি, “খুন করা যাঁর নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, সে গত পাঁচ বছর চুপ করে বাড়িতে বসেছিল, এটা ভাবা কঠিন। পরিজনদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা ভাবা হচ্ছে।’’