জখম শ্রীকান্তবাবু। নিজস্ব চিত্র
রাতে দোকান বন্ধ করে কর্মচারীকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ব্যবসায়ী। তিনি নিজেই মোটরবাইক চালাচ্ছিলেন। অভিযোগ, খণ্ডঘোষের জুবিলা বাজারের কাছে তাঁদের পথ আটকায় তিন দুষ্কৃতী। বাধা দিতে গেলে তাঁদের গুলি করে, অস্ত্রের কোপ মেরে সঙ্গে থাকা ব্যাগ ‘ছিনতাই’ করে নেওয়া হয়। আপাতত বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই ব্যবসায়ী শ্রীকান্ত দাস।
ভরা বাজারে এমন ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই এলাকার বেশির ভাগ দোকানই সন্ধ্যার পর থেকে বন্ধ হয়ে যায়। ওই ব্যবসায়ী যখন ফিরছিলেন তখন বেশির ভাগ দোকানই বন্ধ ছিল। পুলিশের দাবি, সময় বুঝে, ফাঁকা জায়গা দেখেই হামলা করেছে দুষ্কৃতীরা। ওই ব্যাগে লক্ষাধিক টাকা ও কিছু সোনার গয়না ছিল বলে শ্রীকান্তবাবুর দাবি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খণ্ডঘোষের সগড়াই বাজারে সোনা-রুপোর গয়নার দোকান রয়েছে শ্রীকান্তবাবুর। তাঁর বাড়ি জুবিলা গ্রামে। প্রতিদিনই রাত ৯টা নাগাদ দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরেন তিনি। সঙ্গে জিনিসপত্র বেশি থাকলে কর্মচারী প্রদীপ গোস্বামীও সঙ্গে থাকতেন তাঁর। আহত ব্যবসায়ীর বাবা গদাধর দাসের অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। জুবিলা হাটতলার কাছে শ্রীকান্তবাবুদের পথ আটকায় তিন জন। প্রথমে কর্মচারীকে লাথি মেরে ফেলে দেওয়া হয়। তার পরেই গুলি করা হয় ওই ব্যবসায়ীর ডান পায়ে। মাথায় ধারাল অস্ত্র দিয়েও আঘাত করা হয় বলেও অভিযোগ। শ্রীকান্তবাবু বেসামাল হয়ে পড়তেই ব্যাগ নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। পরে পুলিশ শ্রীকান্তবাবুদের উদ্ধার করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যে রাস্তায় ঘটনাটি ঘটেছে সেখানকার কোনও ‘সিসিটিভি ফুটেজ’ পাওয়া যায়নি। তবে বয়ান অনুযায়ী, তদন্ত শুরু হয়েছে।
এলাকার এক ব্যবসায়ী রতন দাঁয়ের অভিযোগ, ‘‘মাঝেমধ্যেই ছোটখাট ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছিল। এ বার গুলি চলায় আতঙ্ক বাড়ছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দারাও জানান, দক্ষিণ দামোদর এলাকার রায়না ব্লকে বছর ছয়েক আগে এ ধরনের ছিনতাই হয়েছিল। দুষ্কৃতীদের গুলিতে মারাও গিয়েছিলেন এক ব্যবসায়ী। দিন দশেক আগে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে ফেরার পথে এক ব্যক্তির কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা ছিনতাই হয় বলেও তাঁদের দাবি। পুলিশকে সক্রিয় হওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
শ্রীকান্তবাবুর এক ভাই স্বরূপ দাসেরও দাবি, তাঁর দাদা কোনও দিনই দোকানে গয়না, টাকাপয়সা রেখে আসতেন না। তবে বিয়ের মরসুম চলায় দোকানে সোনা ও রুপোর গয়না এবং নগদ কিছুটা বেশি ছিল। তাঁর অনুমান, ‘‘দুষ্কৃতীরা পরিকল্পনা করেই লুট করেছে।’’
আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ‘বর্ধমান সদর স্বর্ণশিল্পী ওয়েলফেয়ার সমিতি’ও। তাঁদের দাবি, বছর তিনের আগে খণ্ডঘোষ বাজারে গঙ্গাধর কর্মকার নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর উপরে গুলি চালানো হয়েছিল। বর্ধমান শহরেও একাধিক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর উপরে ‘হামলা’ হয়েছে সম্প্রতি। দ্রুত প্রশাসনের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন তাঁরা। সংগঠনের তরফে স্বরূপ কোনার বলেন, ‘‘দিনে দিনে এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে। আমাদের সর্তক হতে হবে। পুলিশ, প্রশাসনকেও কড়া হবে হবে।’’