অস্থায়ী সেতু। —নিজস্ব চিত্র।
পশ্চিম বর্ধমান এবং বাঁকুড়ার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া দামোদরের উপরে স্থায়ী সেতু তৈরির দায়িত্ব কেন্দ্রের। বছরখানেক আগে দুর্গাপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে এমনটাই মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে বিষয়টি নিয়ে ফের সম্প্রতি বিধানসভার অধিবেশনে সরব হয়েছিলেন বলে জানালেন আসানসোল দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। পশ্চিম বর্ধমানের বার্নপুর ও বাঁকুড়ার শালতোড়ার মাঝামাঝি সেতুটি তৈরি করার দাবি জানিয়েছেন অগ্নিমিত্রা। এর আগেও অগ্নিমিত্রা এই এলাকায় সেতু তৈরির দাবি জানিয়েছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই জেলার বাসিন্দারা এখন বাঁশ ও কাঠের পাটাতনের অস্থায়ী সেতু দিয়ে পারাপার করেন। কিন্তু প্রতি বর্ষায় এই সেতুটি বিপজ্জনক হয়ে যায়। অনেক সময় অস্থায়ী সেতু ভেঙে গিয়ে দামোদর পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। সে সময়ে বাসিন্দাদের অনেকটাই ঘুরপথে যাতায়াত করতে হয়। বার্নপুর ও আসানসোলের বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দাদের শালতোড়া ব্লকের গ্রামগুলিতে মেজিয়া বা ডিসেরগড় সেতু হয়ে যেতে হলে কমপক্ষে ৬৫ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। কিন্তু স্থায়ী সেতু তৈরি হলে মাত্র আট কিলোমিটার পথ পেরোতে হবে। এ দিকে, শালতোড়ার বাসিন্দাদের বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার জন্য যেতে হলে প্রায় ৭২ কিলোমিটার পথ পেরোতে হয়। কিন্তু এই সেতু হলে মাত্র আট কিলোমিটার পথ পেরিয়ে আসানসোল জেলা হাসপাতালে পৌঁছনো যাবে।
এই পরিস্থিতিতে অগ্নিমিত্রার বক্তব্য, “আমি প্রস্তাব দিয়েছি যে, কেন্দ্রের সাহায্য দরকার হলে আমরা চেষ্টা করব। কিন্তু এ নিয়ে রাজ্যকেই প্রথমে পদক্ষেপ করতে হবে। এই সেতুটি দু’জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নতির জন্যই করা দরকার। রাজ্য কোনও ব্যবস্থা না নিলে আমরা লাগাতার অবস্থান-বিক্ষোভ করব।”
বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, প্রায় ২০ বছর ধরে এই এলাকায় সেতু তৈরির দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। সেই দাবি আরও জোরাল করতে তৈরি হয়েছে ‘দামোদর বিহারীনাথ সেতুবন্ধন কমিটি’। কমিটির সূত্রেই জানা যাচ্ছে, দামোদরের পশ্চিম বর্ধমানের দিকে রয়েছে কালাঝরিয়া, ডিহিকা, শ্যামডিহি-সহ বার্নপুরের নানা এলাকা। বাঁকুড়ার দিকে রয়েছে শালতোড়া, ঈশ্বরদা, কেষ্টপুর, বিহারীনাথ, নারায়ণপুর, দিঘি-সহ প্রায় ২৫টি গ্রাম। প্রতিদিন অন্তত কুড়ি হাজার মানুষ এই অস্থায়ী সেতুটি ব্যবহার করেন।
পড়ুয়া, রোগী, ব্যবসায়ীদেরও যাতায়াত করতে হয়।
এই এলাকায় স্থায়ী সেতু তৈরির জন্য গত বছর ২৭ জুলাই দুর্গাপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে মমতার কাছে আর্জি জানায় কয়েকটি বণিক সংগঠন। কিন্তু মমতা মন্তব্য করেন, সেতু তৈরির দায়িত্ব কেন্দ্রের।
এ দিকে, সেতুবন্ধন কমিটির সভাপতি সুবল চক্রবর্তী বলেন, “আমরা দল, মত নির্বিশেষ সকলের কাছে স্থায়ী সেতু তৈরির জন্য পদক্ষেপ করার আবেদন জানিয়েছি। আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক এ বিষয়ে তৎপর হওয়ায় আমরা খুশি। সম্প্রতি পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কাছেও বিষয়টি নিয়ে আর্জি জানানো হয়েছে।” তৃণমূল বিধায়ক নরেন্দ্রনাথের বক্তব্য, “প্রয়োজনীয় স্তরে আমরা এ বিষয়ে কথাবার্তা বলব।”