বর্ধমান শহরের যানজটের এই ছবি কি বদলাবে? নিজস্ব চিত্র।
হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে বর্ধমান শহরের ভিতরে ‘টাউন সার্ভিস’ ছাড়া অন্য বাস যাতে না ঢোকে, সে জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার থেকে সেই নির্দেশ কার্যকর করার জন্যে প্রশাসন, পরিবহণ দফতর ও পুলিশ রাস্তায় নামতে চলছে।
পূর্ব বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সুপ্রিয় অধিকারী শনিবার বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে ৭ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) থেকে টাউন সার্ভিস ছাড়া, অন্য কোনও বাস বর্ধমান শহরে চলাচল করবে না। বাইরের বাস যাতে শহরের ভিতরে ঢুকতে না পারে, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’
ইতিমধ্যে প্রশাসন বিভিন্ন বাস সংগঠন ও পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে একটা রূপরেখা তৈরি করেছে। কী ভাবে বাসের চাহিদা মেটানো যাবে এবং কোনও কারণে বাসের সমস্যায় যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হলে তা সামাল দিতে কী করা হবে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
তবে বাইরের বাস শহরের ভিতরে বন্ধ হলে তাঁদের চরম ক্ষতির মুখে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর কলকাতা গেজ়েটে জানানো হয়, শহরের ভিতর টাউন সার্ভিস আর স্কুল বাস ছাড়া, আর কোনও বাস চলাচল করবে না। তবে নবাবহাট বাসস্ট্যান্ডে যেতে কাটোয়া, কালনা রুটের বাসগুলি রেলের উড়ালপুল পেরিয়ে গোলাপবাগ হয়ে যেতে পারবে। সম্প্রতি হাই কোর্ট সে নির্দেশ কার্যকর করতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে।
সংগঠন সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন বর্ধমান শহরের ভিতর দিয়ে ১৬৩টির মতো বাস যাতায়াত করে। মঙ্গলবার থেকে সেই সংখ্যাটা এক ধাক্কায় ৫০-এ নেমে আসবে।
শহরের ভিতরে যাত্রীদের বাসের অভাবে হা-হুতাশ করার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
‘বর্ধমান টাউন সার্ভিস বাস ওনার্স সমিতি’র সম্পাদক বাবলু শর্মার দাবি, “কোনও অসুবিধা হবে না। বাইরের বাস ঢোকার জন্যে টাউন সার্ভিস বাসগুলি দিনে ছ’বারের বেশি যাতায়াত করতে পারত না। এ বার থেকে বাসগুলিও তিন গুণ বেশি যাতায়াত করবে। ‘রাস্তায় যাত্রী যতক্ষণ, বাসও ততক্ষণ’— শহর জুড়ে প্রচার চালানো হবে।’’
আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক (পূর্ব বর্ধমান) অনুপম চক্রবর্তী বলেন, “আরও ২০টি বাস আপৎকালীন প্রয়োজনে ব্যবহার করার জন্যে রেখে দেওয়া হচ্ছে। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার কাছেও বাস
চাওয়া হয়েছে।’’
জেলা পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন আগেই জানিয়েছিলেন, ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য তাঁরা কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছেন। যেখানে-সেখানে বাস দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। সে মতো পরিবহণ দফতর আলিশা থেকে নবাবহাট পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার রাস্তায় ২৬টি জায়গায় বাস দাঁড়াবে বলে জানিয়েছে। তেলিপুকুর থেকে নবাবহাট বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ২১টি জায়গাতে বাস দাঁড়াবে।
বৃহস্পতিবার এ নিয়ে ডিএসপি (ট্রাফিক) অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিবহণ দফতর ও শহরের বাস মালিকদের সংগঠনের বৈঠক হয়। সেখানে স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ওই তালিকার বাইরে কোনও জায়গায় বাস দাঁড়াতে পারবে না।
এতে অশনি সঙ্কেত দেখছেন বর্ধমান শহরের ব্যবসায়ীদের একাংশ। তাঁদের দাবি, তিনকোনিয়া বাসস্ট্যান্ড উঠে যাওয়ার পরে কার্জন গেট সংলগ্ন ব্যবসায়ীদের অবস্থা খারাপ হতে শুরু করেছিল। বাইরের বাস না ঢুকলে, শহরের ব্যবসা কার্যত
গুটিয়ে যাবে। জেলা ব্যবসায়ী সুরক্ষা সমিতির সম্পাদক অনিরুদ্ধ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “হাইকোর্টের নির্দেশ সবাইকে মানতে হবে। তবে ব্যবসা রক্ষার স্বার্থে আমাদেরও চিন্তাভাবনা করতে হবে।’’