রাজ কলেজে অধ্যক্ষের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা। নিজস্ব চিত্র
সরকারি নির্দেশের পরেও পড়ুয়াদের ভর্তির নথি যাচাই করায় আগের দিনই বিতর্কের মুখে পড়েছিল রাজ কলেজ। শুক্রবার পরিস্থিতি দেখতে ওই কলেজ পরিদর্শনে এলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিনিধি দল।
কলেজে ঢুকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য মহুয়া সরকার, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রমেন সর ও কলেজসমূহের পরিদর্শক সুজিত চৌধুরী সোজা চলে যান অডিটোরিয়ামে। পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কারও পঞ্চম তালিকায় নাম উঠেছে বলে নথি যাচাইয়ের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে। আবার কাউকে সরাসরি নথি যাচাই করার জন্য কলেজে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। ওই সব পড়ুয়ারা কেউই এখনও ভর্তি হননি। বিষয়টি নিয়ে অধ্যক্ষকে প্রশ্ন করা হলে তিনি দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ। প্রতিনিধি দলের দাবি, রীতিমতো তর্ক-বিতর্কের পরে নথি যাচাই বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ কলেজ। ওই দলটি কলেজ ছাড়ার পরে এ দিনও অধ্যক্ষ নিরঞ্জন মণ্ডল দাবি করেন, ‘‘কোনও অনৈতিক কাজ করিনি।’’
এই কলেজের পরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন রাজবাটী লাগোয়া মহিলা কলেজেও যায় ওই দলটি। দেখা যায় সরকারি নির্দেশিকা অমান্য করে কাউন্সেলিং ও নথি যাচাই চলছে সেখানেও। কলেজের দোতলার অডিটোরিয়ামে পড়ুয়া ও অভিভাবকরা দূরদূরান্ত থেকে এসে বসে রয়েছেন। প্রতিনিধি দলটি সেখানে গিয়ে সরকারি নির্দেশতে মান্যতা দিয়ে কোনও ভাবেই ক্লাস শুরুর আগে নথি যাচাই না করার কথা বলেন। তবে মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ সুকৃতি ঘোষাল বাইরে থাকায় তাঁর সঙ্গে দেখা হয়নি দলটির। শিক্ষকেরা দাবি করেন, রোল নম্বর দেওয়ার জন্য ছাত্রীদের কলেজে ডাকা হয়েছিল। তবে যুক্তি মানেননি প্রতিনিধিরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রমেন সর বলেন, “গ্রামীণ কলেজগুলি সরকারের নির্দেশিকা মেনে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাকের ডগায় থেকে রাজ কলেজ ও মহিলা কলেজ মানেনি। রাজ কলেজের অধ্যক্ষ আমাদের সঙ্গে ভাল আচরণও করেননি। আমরা উচ্চশিক্ষা দফতরে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠাব।’’
৩ জুলাই ভর্তি সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করে রাজ্য সরকার স্পষ্ট ভাবে জানায়, এ বার অনলাইনে ভর্তির পরে পড়ুয়ারা সরাসরি ক্লাসে যোগ দেবেন। সেখানেই যাবতীয় নথি যাচাই করা হবে। তার আগে কোনও ভাবেই নথি যাচাই করতে পারবেন না কলেজ কর্তৃপক্ষ। ওই নির্দেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কলেজগুলিকেও পাঠানো হয়। তারপরেও রাজ কলেজ রীতিমত দিনক্ষণ জানিয়ে নথি যাচাই করে। সহ-উপাচার্য মহুয়াদেবী বলেন, “সংবাদপত্রে দেখার পরেই কলেজে পরিদর্শনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রাজ কলেজে এসে পড়ুয়ারদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি নথি যাচাই চলছে। নিজের চোখেও দেখি। নানা অজুহাত দিয়ে সরকারের নির্দেশিকা মানতে চাইছে না ওই কলেজগুলি।’’
ওই দলের দাবি, অধ্যক্ষকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই তিনি মেজাজ হারিয়ে ফেলেন। বারবার দাবি করেন, ‘এত বড় কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করতে দেরি হলে ক্লাস শুরু করতে সমস্যায় পড়তে হবে।’ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা যুক্তি মানছেন না দেখে অধ্যক্ষ বলেন, “ঠিক আছে, নথি যাচাই বন্ধ করে দিচ্ছি। দরকারে, কলেজের ক্লাস হবে না।’’ এ ধরণের মন্তব্য করার জন্য অধ্যক্ষকে সতর্ক করে দেন সহ উপাচার্য। ওই দলে থাকা গুসকরা কলেজের অধ্যক্ষ তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট সদস্য স্বপনকুমার পান বলেন, “রাজ কলেজ শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে!”
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজসমূহের পরিদর্শক সুজিত চৌধুরী বলেন, “রাজ কলেজে গিয়ে আমরা অপমানিত হয়েছি।’’ রেজিস্ট্রারের দাবি, “নিজের অন্যায় চাপা দিতে গিয়েই রাজ কলেজের অধ্যক্ষ উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। আমরা বিষয়টি ভাল ভাবে নিচ্ছি না।’’
যদিও নিরঞ্জনবাবু শুধু বলেন, ‘‘আমি জানতে চেয়েছিলাম ক্লাস কবে থেকে শুরু হবে। এটাকে কী অপমান বলা যায়!’’