রিপন ও খালেদ
ছদ্মনামের খোলস ভেঙে দিয়ে দুই জঙ্গি চাঁইয়ের আসল পরিচয় বের করলেন গোয়েন্দারা।
পশ্চিমবঙ্গে এসে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর জাল বিস্তারের চেষ্টা করা দুই বাংলাদেশির নাম আগেই জেনেছিলেন গোয়েন্দারা। অর্থাৎ ছদ্মনাম— ‘আবু সুলেমান’ এবং ‘বাংলার বাঘ টু’। গোয়েন্দারা এখন জানতে পেরেছেন, আবু সুলেমানের আসল নাম শরিফুল ইসলাম। বাংলাদেশে সে খালেদ নামেও পরিচিত। আর বাংলার বাঘ টু-এর আড়ালে লুকিয়ে আছে মামুনুর রশিদ রিপন।
রাজশাহির বাসিন্দা এই দুই যুবকই গত ১ জুলাই ঢাকার গুলশনের রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন। বাংলাদেশ পুলিশ এদের গুলশন মামলার ফেরার আসামি বলেও সম্প্রতি ঘোষণা করেছে। ও-পার বাংলার গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, ওই দু’জন ভারতে পালিয়ে এসেছে। তবে এ দেশে এখনও খোঁজ মেলেনি।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির ছাত্র। গত ২৩ এপ্রিল সেই বিশ্ববিদ্যালয়েরই অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকিকে গলা কেটে খুন করা হয়। শরিফুল সেই হত্যাকাণ্ডে প্রধান অভিযুক্ত। জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর নতুন অংশ তথা নয়া জেএমবি-র উত্তরাঞ্চলের কম্যান্ডার হল মামুনুর রশিদ রিপন ওরফে বাংলার বাঘ টু। অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকি খুনের মামলায় শরিফুলের পাশাপাশি সে-ও অভিযুক্ত। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এই দু’জনের বিরুদ্ধে ভারতেও মামলা রুজু করার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। শরিফুল ও রিপন গত বছর মালদহের কালিয়াচকের হিংসায় জড়িত বলেও গোয়েন্দাদের দাবি।
পশ্চিমবঙ্গে গত জুলাই থেকে নাম ঘুরছিল এই দু’জনের। আইএস জঙ্গি সন্দেহে গত ৪ জুলাই বর্ধমান স্টেশনে ধরা পড়ে বীরভূমের যুবক মহম্মদ মসিউদ্দিন ওরফে মুসা। তার কাছ থেকেই ওই দু’জনের নাম জানা যায়। গত ২৩ ডিসেম্বর মুসার বিরুদ্ধে কলকাতার নগর দায়রা আদালতের মুখ্য বিচারকের এজলাসে চার্জশিট পেশ করে এনআইএ। সেখানে মুসাকে উৎসাহ দেওয়ার নেপথ্যে আবু সুলেমানের নাম রয়েছে। রিপনের কথা উল্লেখ নেই। তবে গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তার সঙ্গে মুসার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। ঠিক যেমন ছিল আবু সুলেমান ওরফে শরিফুলের সঙ্গে।
গোয়েন্দারা জেনেছেন, গত বছর মে মাসে মুসাকে মালদহ স্টেশনে দেখা করতে বলে শরিফুল। মুসা জানায়, সে দিন তার সঙ্গে আরও এক জন ছিল। মুসাকে শরিফুল বলেছিল, সাইবার দুনিয়ায় তার সঙ্গে ‘বাংলার বাঘ টু’ নামে যার কথোপকথন হয়, এ-ই সেই লোক। তিন জন এক সঙ্গে মালদহের একটি পাইস হোটেলে দুপুরে ভাতও খায়। শরিফুলের সঙ্গে সে দিন রিপনই ছিল বলে গোয়েন্দারা এখন নিশ্চিত। তবে তার আগে ২০১৫-র মার্চে বীরভূমে এসে মুসার ছোট ভাইয়ের বৌভাতের নেমন্তন্ন খেয়ে গিয়েছিল শরিফুল। এনআইএ-র এক কর্তা বলেন, ‘‘রিপন ও শরিফুলের বিরুদ্ধে আমরা আরও তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করছি।’’