অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।
রবিবার রাতে কলকাতায় আসার কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। রাজ্য বিজেপির তরফে এখনও পর্যন্ত শাহের সূচি নিয়ে কোনও কিছু জানানো না হলেও সোমবার তিনটি তিন ধরনেরে কর্মসূচিতে যোগ দেবেন শাহ। আর তাতে মোট ১২টি লোকসভা এলাকায় রাজ্য বিজেপির বর্তমান শক্তি পরীক্ষা করতে চান শাহ। সেই ভাবেই তিনটি কর্মসূচি সাজানো হচ্ছে বলে গেরুয়া শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে।
যা জানা গিয়েছে তাতে, রবিবার রাতে দলের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে কথাবার্তা হতে পারে। তবে নির্দিষ্ট ভাবে কোনও বৈঠকের সূচি এখনও পর্যন্ত নেই। রবিবার সকালে প্রথমে শাহ যাবেন উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে। সেখানে চারটি লোকসভা এলাকার নেতৃত্বের সঙ্গে সাংগঠনিক বৈঠক করবেন। দুপুরে পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদায় জনসভা করবেন তিনি। সেখানেও ডাকা হয়েছে চারটি লোকসভা এলাকার কর্মীদের। বিকেলে কলকাতায় ফিরে সায়েন্স সিটিতে একটি বৈঠক করবেন শাহ। সেখানেও দুই কলকাতা-সহ মোট চারটি লোকসভা এলাকার শক্তি পরীক্ষা। রাজ্য বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘এ বার শাহ যে ভাবে কর্মসূচি চেয়েছেন, তাতে ১২টি লোকসভা এলাকার জন্য তিন রকমের সাংগঠনিক ক্ষমতা দেখা হবে। কোথাও কর্মী জড়ো করার পরীক্ষা, কোথাও ভোটের সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিয়ে আবার কোথাও নেতাদের সামাজিক যোগাযোগের পরীক্ষা।’’
এর আগে শাহ নভেম্বর এবং ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে দু’বার কলকাতায় এসেছিলেন। ২৫ ডিসেম্বর তাঁর সঙ্গে এসেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। সে বার মূলত সাংগঠনিক বৈঠক ছিল রাজারহাটের হোটেলে। বিকেলে শাহ ও নড্ডা দলের সমাজমাধ্যম শাখার কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে বিজেপিপন্থী ইউটিউবার, ব্লগারদেরও ডাকা হয়েছিল। তার আগে নভেম্বরে কলকাতায় জনসভার জন্য এসেছিলেন শাহ। সে বার সে ভাবে কোনও বৈঠকে যোগ দেননি তিনি। ২৯ নভেম্বর শাহের সভা ছিল ধর্মতলার যে জায়গায়, সেখানে তৃণমূল প্রতি বছর ২১ জুলাইয়ের সভা করে। সেই সভার অনুমতি পুলিশ না দেওয়ায় আদালতে যেতে হয়েছিলে বিজেপিকে। ফলে সময় থাকতে মঞ্চ বাঁধার কাজ শুরু করতে পারেনি বিজেপি। ২৬ জানুয়ারি ধর্মতলায় হয় মঞ্চের খুঁটি পুজো।
আগামী সোমবার শাহ মেচেদার যে মাঠে সভা করবেন, তার জন্য খুঁটি পুজোরও সময় নেই গেরুয়া শিবিরের হাতে। তবে এখানে পুলিশের অনুমতি বাধা নয়। তবুও রবিবার রাতারাতি মঞ্চ বাঁধতে হবে মেচেদার ইস্কন মন্দির সংলগ্ন মাঠে। মিতালী সঙ্ঘের মাঠ হিসাবেই যার পরিচিতি। অতীতেও এই মাঠে সভা করেছেন শাহ। সেই মাঠে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলছে। যার ফাইনাল ম্যাচ হওয়ার কথা আগামী রবিবার। সেই খেলা এবং পুরস্কার বিতরণী শেষ হওয়ার আগে মাঠে কিছুই করতে পারবেন না বিজেপি। বৃহস্পতিবার সকালেই ওই মাঠ পরিদর্শনে গিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক মঙ্গল পাণ্ডে। স্থানীয় নেতারাও মঙ্গলের সঙ্গে ছিলেন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, মঞ্চ বাঁধার বিষয়ে ডেকরেটরের সঙ্গে যা কথা হয়েছে, তাতে খেলার অনুষ্ঠান মিটে যাওয়ার পরেই মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করতে হবে। তার জন্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাও করতে বলা হয়েছে।
রাজ্য বিজেপি প্রতিটি লোকসভা এলাকাকে একটি করে সাংগঠনিক জেলা হিসাবে ধরে চারটি করে লোকসভা এলাকা নিয়ে একটি করে ক্লাস্টার। এমন মোট ১১টি ক্লাস্টার রয়েছে রাজ্যে। ১০টি ক্লাস্টারে রয়েছে ৪০টি লোকসভা এলাকা। এর পরেও জঙ্গিপুর এবং মুর্শিদাবাদ লোকসভাকে নিয়ে ১১তম ক্লাস্টার। এই ক্লাস্টারে ভাল ফল নিয়ে বিজেপি একেবারেই আশাবাদী নয়। তাই আপাতত ১০টি ক্লাস্টারের জন্য শাহ এবং নড্ডার রাজ্য সফর চলতে থাকবে নির্বাচন ঘোষণার আগে।
মেচেদার যে সভা। সেটি কাঁথি, তমলুক, মেদিনীপুর এবং ঘাটাল লোকসভা এলাকার জন্য। প্রসঙ্গত, এর মধ্যে একমাত্র মেদিনীপুর লোকসভাই বিজেপির দখলে। সাংসদ প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তবে কাঁথি, তমলুক খাতায় কলমে তৃণমূলের হাতে থাকলেও দু’টিতেই সাংসদ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর পিতা শিশির অধিকারী এবং ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী। আবার ঘাটাল হারা আসন হলেও ২০১৪ সালে চতুর্থ স্থানে থাকা বিজেপি ২০১৯ সালে দ্বিতীয় হয়। যদিও তৃণমূলের অভিনেতা সাংসদ দেবের কাছে লক্ষাধিক ভোটে হেরেছিলেন বিজেপি প্রার্থী তথা প্রাক্তন আইপিএস ভারতী ঘোষ।
সোমবার শাহের প্রথম বৈঠকটি হওয়ার কথা বারাসতে। সেখানে উত্তর ২৪ পরগনা ক্লাস্টারের চারটি লোকসভা এলাকার নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করবেন শাহ। জানা গিয়েছে, প্রতিটি জেলার সঙ্গে আলাদা করেও বসতে পারেন শাহ। সেখানে বারাসত ছাড়াও বসিরহাট, বনগাঁ, ব্যারাকপুরকে নিয়ে চারটি জেলার বৈঠক। বিকেলে সায়েন্স সিটিতে যে বৈঠক, সেখানে আবার কর্মী বা নেতাদের ডাকা হয়নি। কলকাতা বিভাগের চার লোকসভা এলাকা দমদম, কলকাতা উত্তর, কলকাতা দক্ষিণ এবং যাদবপুরের নেতা, কর্মীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নিজের নিজের এলাকার বিশিষ্টজনেদের শাহের বৈঠকে হাজির করতে হবে। সেখানে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা এবং তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব নিয়ে বিশিষ্টদের সঙ্গে কথা বলবেন শাহ। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই চার জেলার সব নেতার এলাকার বিজেপি মনস্ক অধ্যাপক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নামের তালিকা জমা দিতে হবে শনিবারের মধ্যে।